অভিরূপ দাস: গুজরাটের রাজকোট, ভদোদরা, গান্ধীনগরের ওষুধের দোকানে সার দিয়ে রাখা বোতলগুলি। সেখানকার মানুষের খুশখুশে কাশি, নাক দিয়ে জল পড়লে খোঁজ করেন এই আয়ুর্বেদিক মিছরির। আজ থেকে আশি বছর আগে হুগলির জাঙ্গিপাড়ার অন্তর্গত রাজবলহাটে বসে যিনি তৈরি করেছিলেন দুলালচন্দ্র ভড়ের তালমিছরি। শতবর্ষে আজও অমলিন বাঙালির একান্ত নিজস্ব ব্র্যান্ডের স্রষ্টা।
[শিশুর ক্যানসারের নামে লক্ষাধিক টাকার প্রতারণা, ফের সক্রিয় অসাধু চক্র]
মহাত্মা গান্ধী রোডের গলির গলি তস্য গলি। দোতলায় একচিলতে ঘর। সেখানেই হত্যে দিয়ে পড়ে থাকেন গুজরাতের একাধিক ব্যবসায়ী। কারণ? “ ইয়ে চিজ পুরে ইন্ডিয়া মে দুসরা নেহি মিলতা।” রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মোছেন ব্যবসায়ী চমন বারোট। গান্ধীনগরে তাঁর ওষুধের দোকান।
[বর্ষবরণের রাতে ফাঁকা ফ্ল্যাটে ‘সফিস্টিকেটেড’ মধুচক্র, সতর্ক পুলিশ]
ভড়দের ছিল পারিবারিক কাপড়ের ব্যবসা। সেই ব্যবসাতেই বৈচিত্র আনতে দুলালচন্দ্র ভড় ভরসা রেখেছিলেন আয়ুর্বেদে। তালের গুড়ের সঙ্গে সাদা মিছরি মিশিয়ে ভাগ্য পরীক্ষায় নেমেছিলেন এই বাঙালি ব্যবসায়ী। মৃত্যুর ১৭ বছর পরও তিনি এতটাই সফল, যে বোতলে তাঁর ছবি আর সই দেখেই কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকা কেনে এই তালমিছরি। শুধু তালমিছরি? “বলুন দুলালচন্দ্র ভড়ের তালমিছরি।” শুধরে দেন তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় ভড়। আপাতত বাবার ব্যবসার ব্যাটন ছেলের হাতে। ছেলে ধনঞ্জয় জানিয়েছেন, “বিক্রি হলেও বাবাকে ন্যায্য মূল্য দিতেন না অনেকে। বাবা পরে খোঁজখবর নিতে গেলে দোকানিরা মিথ্যে বলতেন। কেউ বলতেন মিছরির কৌটো ভেঙে গিয়েছে, পিঁপড়ে খেয়েছে এইসব।” কিন্তু,শাক দিয়ে কি মাছ ঢাকা যায়! তেমনি চাপা যায়নি দুলালবাবুর নিজস্ব সৃষ্টিকেও। আচমকাই এক ক্রেতা একদিন হাতে পান ওই তালমিছরি। বাড়িতে খেয়ে চমকে যান তিনি। বোতলের গায়ে ঠিকানা দেখে সে সময় নিজেই এসেছিলেন দুলালবাবুর আস্তানায়। বাকিটা ইতিহাস।
[ধর্মের নামে অশান্তি রুখতে পদক্ষেপ, কলকাতায় নিষিদ্ধ অস্ত্র মিছিল]
গত ২৬ ডিসেম্বর ১০০ পা রেখেছেন প্রয়াত দুলালচন্দ্র। তাঁর ছেলে ধনঞ্জয় জানিয়েছেন, এখনও রীতি মেনে এ ব্যবসায় কোনও সেলসম্যান নেই। তবু দেশে তো বটেই, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে এ মিছরির ক্রেতা। পাইকারি অর্ডার দিতে এখনও একচিলতে অফিসের বাইরে লাইন পড়ে যায়। ব্যবসায় নতুন মুখ হিসাবে উঠে এসেছে দুলালচন্দ্র ভড়ের নাতি দত্তাত্রেয় ভড়। সিমবায়োসিস থেকে পাস করে তিনিও স্বপ্ন দেখেন দাদুর তালমিছরিকে আরও নতুনভাবে বাঙালির বসার ঘরে হাজির করার। আগামী দিনে অনলাইনেও বাঙালির ঘরে পৌঁছে যেতে পারে চিরকালীন সেই কাচের বোতল।
[নতুন বছরে উপহার, কলকাতায় সারারাত চলবে সরকারি বাস]
সমস্যা রয়েছে কিছু। ধনঞ্জয়বাবু জানিয়েছেন, কমে আসছে তালগাছের সংখ্যা। তাল পাড়ার মজুরও কমছে ধীরে ধীরে। উঁচু গাছে অনেকেই উঠতে চান না। বাজারে চাহিদা থাকলেও তাই সমস্ত জায়গায় তাদের ব্র্যান্ডেড তালমিছরি পৌঁছে দিতে পারেন না। কিন্তু এত চিন্তাতেও ভরসা একটাই। মধ্যবিত্ত বাঙালি সমস্ত কিছুর বিকল্প খুঁজে পেলেও তালমিছরির পায়নি।
[এবার কলকাতা পাচ্ছে এসি লোকাল ট্রেন, শহরতলিতে বাতানুকূল যাত্রা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.