অর্ণব আইচ, কলকাতা: ক্লাসে ‘নিল ডাউন’ হতে পারছিল না ছেলেটি। বলেছিল, কষ্ট হচ্ছে। পায়ে খুব ব্যথা। শিক্ষক সেই ব্যথার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখেন, পায়ে মারের দাগ। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, লাঠি বা বেত দিয়ে বেশ জোরে মারা হয়েছে ১১ বছরের এই বালককে।
শেষ পর্যন্ত জানা যায়, যে হোমে ওই বালকটি থাকে, সেই হোমের এক কেয়ারটেকার লাঠি দিয়ে মেরেছেন তাকে। এই সেই মারের দাগ। এই বিষয়ে টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। আশিস সরকার নামে ওই কেয়ারটেকারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাটির সূত্রপাত কয়েকদিন আগে। দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বসু রোডের উপর বহু পুরনো এই হোমটি। রাজ্য সরকারের ডিরেক্টরেট অফ মাস এডুকেশনের সুপারিশে এই হোমে থাকে ছাত্ররা। মূলত ভবানীপুরের দু’টি স্কুলে তারা পড়াশোনা করে। বেশিরভাগ বালক বা কিশোরকেই দেখার কেউ নেই। তাই তারা হোমে এসেই থাকে। এই হোমটিতে রয়েছেন ১১ জন কেয়ারটেকার তথা শিক্ষক, যাঁরা ছাত্রদের পড়াশোনায় সাহায্য করেন। হোমটিতে রয়েছে বিভিন্ন বয়সের ৭০ জন ছাত্র।
হোম সূত্রে জানা গিয়েছে, আহত পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রটি ২০১৬ সালে এই হোমে আসে। এন্টালির ক্রিস্টোফার রোডে থাকে তার ঠাকুরমা ও কাকা। বাবা আগেই মারা গিয়েছেন। মা বাড়িতে থাকেন না। দিনকয়েক আগে ওই ছাত্রটি এক দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রকে মারধর করে। ওই বালক কাঁদতে কাঁদতে বিষয়টি কেয়ারটেকারকে জানান। হোমের এক কর্তা জানান, কেয়ারটেকার আশিস সরকার এই মারধরের কারণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করায় তর্কাতর্কি করতে শুরু করে পঞ্চম শ্রেণির ওই ছাত্র। অভিযুক্ত কেয়ারটেকার পুলিশকে জানিয়েছেন, তখনই তাঁর মাথা গরম হয়ে যায়। কাছেই থাকা একটি লাঠি দিয়ে তার পায়ে তিনি মারতে থাকেন। হোমের কর্তাদের দাবি, লাঠির দু’টি দাগ বসে যায় পায়ে। স্কুলে যাওয়ার পর ক্লাসে টিচার তাকে নিল ডাউন করতে বললে সে জানায় পায়ে ব্যথা। তিনি ছেলেটিকে কাছে নিয়ে এসে দেখেন, পায়ে মারের দাগ। এর পর স্কুলের শিক্ষকরাই বিষয়টি চাইল্ড লাইনে জানান। একটি এনজিও-র পক্ষ থেকে এই বিষয়ে টালিগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়।
শনিবার রাতে পুলিশ ওই হোম থেকে অভিযুক্ত কেয়ারটেকারকে গ্রেপ্তার করে। রবিবার তাঁকে আদালতে তোলা হলে জামিন মঞ্জুর করেছেন বিচারক। জানা গিয়েছে, আশিস সরকার সাত মাস আগে এই হোমে যোগ দেন। হোমের এক কর্তা জানান, আশিসবাবু অন্যায় কাজ করেছেন। তবে স্কুলের শিক্ষকরা অভিযোগ না জানিয়ে তাঁদের বিষয়টি জানাতে পারতেন। হোম কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত কেয়ারটেকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ওই কর্তা। ওই বালককে একটি এনজিও-র হেফাজতে রাখা হয়েছে। পুরো ঘটনাটির তদন্ত চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.