অর্ণব আইচ: পরের সপ্তাহ থেকে কলকাতা পুলিশের প্রত্যেক ডিভিশন পরিদর্শন করবেন পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। বৈঠক করবেন থানার ওসি ও অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনারদের সঙ্গে। করোনাজয়ী অফিসার ও পুলিশকর্মীদের সঙ্গেও দেখা করতে পারেন তিনি। পুলিশবাহিনীর কর্মী ও অফিসারদের পরিবারের লোকেরাও যাতে সুস্থ থাকেন, তা দেখতে পদস্থ পুলিশকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। বৃহস্পতিবার কলকাতা পুলিশের পদস্থ কর্তাদের নিয়ে পুলিশ কমিশনার বৈঠক করেন। পারস্পরিক দূরত্ব বজায় রাখার কারণে এ দিনের ক্রাইম কনফারেন্সে ওসি ও এসিরা ছিলেন না। পদস্থ কর্তাদের পুলিশ কমিশনার জানান, পরের সপ্তাহ থেকেই একে একে শহরের নটি ডিভিশনে গিয়ে পরিদর্শন করবেন তিনি। সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের থানার ওসিদের ডেকে পাঠানো হবে। সেখানে থাকবেন অন্য কর্তারাও। পারস্পরিক দূরত্ব মেনেই বৈঠক করবেন।
জানা গিয়েছে, এলাকার অপরাধ দমন নিয়ে ওসিদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দেবেন তিনি। গত কয়েক মাসে অপরাধের খতিয়ানও দেখবেন। বহু থানার পুলিশকর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এই বিষয়ে কারও কোনও সমস্যা রয়েছে কি না, অফিসারদের কাছ থেকে তা জানবেন পুলিশ কমিশনার। করোনাজয়ী পুলিশ অফিসার ও কর্মীদের সঙ্গেও দেখা করবেন বলে জানা গিয়েছে। কলকাতা পুলিশের তিনশোর উপর কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। সুস্থ হয়েছেন ২১০ জন। করোনায় আক্রান্ত দুই পুলিশকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এদিন শিয়ালদহ ট্রাফিক গার্ডে মৃত পুলিশকর্মীর শোকসভায় গিয়ে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন পুলিশ কমিশনার। পরিবারের হাতে চেক তুলে দেন। জানান, কলকাতা পুলিশ তাঁদের পরিবারের পাশে রয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে পুলিশকর্তাদের পুলিশ কমিশনার জানান, কলকাতা পুলিশের কর্মী ও অফিসারদের পরিবারের সদস্যরাও করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। মনে রাখতে হবে, ওই পরিবারের সদস্যরাও কলকাতা পুলিশ বাহিনীর সদস্য। তাই তাঁদের কল্যাণের দায়িত্ব লালবাজারের কর্তাদের। তিনি প্রত্যেকটি ইউনিটের ওয়েলফেয়ার অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁরা যেন নিজের ইউনিটের প্রত্যেক পুলিশকর্মী ও তাঁদের পরিবারের দিকে নজর দেন। চিকিৎসাজনিত কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হলে যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রত্যেক পদস্থ কর্তাকে ব্যক্তিগতভাবে নজর রাখতে হবে। ডিসিদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন ১৫ দিন অন্তর বিশেষ পুলিশ কমিশনারকে রিপোর্ট দেন। যুগ্ম ও অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনারদের কাছেও যাবে এই রিপোর্ট।
শহরে চিনা মাঞ্জাসুতোয় ঘুড়ি ওড়ানো সমস্যা সৃষ্টি করেছে। নাইলনের চিনা মাঞ্জা ও অন্য মাঞ্জা সুতোয় যাতে কোনও ফ্লাইওভারের আশপাশ থেকে ঘুড়ি ওড়ানো না হয়, সেই বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। মাঞ্জা সুতো নিয়ে আপত্তি রয়েছে পুলিশের। গত দু’মাসে মাঞ্জা সুতোয় ঘায়েল হয়েছেন মা, এজেসি বোস রোড ফ্লাইওভার ও বিদ্যাসাগর সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন বাইক আরোহী। মৃত্যু হয়েছে একজনের। ধরা পড়েছে চিনা মাঞ্জা সুতো। গ্রেফতার হয়েছে বিক্রেতা। ড্রোনের সাহায্যে নজরদারি চালিয়ে ঘুড়ি ওড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে কয়েকজন। যাদের ঘুড়ি ওড়ানোর কারণে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। প্রত্যেক ডিভিশনের ডিসিকে কয়েকটি অপরাধের বিষয়ে রিপোর্ট দিতে বলেছেন। বিশেষ করে চুরির মামলার ক্ষেত্রে। দেখা গিয়েছে, চুরি সংখ্যা কিছুটা বেড়েছে। বিশেষ করে দক্ষিণ শহরতলির কয়েকটি থানা এলাকায়।
জানা গিয়েছে, লকডাউন থাকা সত্ত্বেও শহরের আশপাশের এলাকা থেকে এসে চুরি করে পালাচ্ছে দুষ্কৃতীরা। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। ট্রাফিক কর্তাদের পুলিশ কমিশনার নির্দেশ দিয়েছেন, যাত্রীরা যেন বাসে দাঁড়িয়ে না যান, সেদিকে নজর রাখতে হবে। রাস্তায় দীর্ঘ সময়ের জন্য বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে যাত্রীদের। বাস ধরতে তাঁদের যাতে অসুবিধা না হয়, সেই বিষয়টিও ট্রাফিক আধিকারিকদের দেখতে বলেছেন পুলিশ কমিশনার।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.