Advertisement
Advertisement

নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথকে নতুন করে চেনাল লা মার্টস বয়েজের পড়ুয়ারা

নৃত্যে-সংগীতে-নাটকে মেতে উঠেছিল লা মার্টস বয়েজের সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা৷

The newly renowned Rabindranath Tagore Laurets Boy's Boys
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:August 4, 2018 9:25 am
  • Updated:August 4, 2018 9:25 am  

ভাস্কর লেট:  স্কুলের রেজাল্ট বেরিয়েছে। ছেলে এসে খতিয়ান দিচ্ছে মা’কে, কোন সাবজেক্টে কত পেয়েছে। জিওগ্রাফিতে ১০০-য় ১০০। সায়েন্স গ্রুপে খারাপ হয়েছে। আবার ইংরেজিতে খুব ভাল, ৯২। আর বাংলা? বেশ কম। পুয়োর পারফরম্যান্স। ছেলে ভেবেছিল মা হয়তো বকবে। রিঅ্যাক্ট করবে। কিন্তু মা এমন ভাব দেখালেন, যেন কিছুই হয়নি। বাংলায় যে ছেলে কোনও মতে পাস করেছে, তাই না ঢের! তখন পাশ থেকে গানের মাধ্যমে ফুট কাটলেন ছেলেটির বাবা-‘বাংলা তো আমার মতো অশিক্ষিতেরই জন্য!’

বাংলা ভাষার জন্য এমন দরদ, এমনই মমতা আর ভালবাসার প্রকাশ ঘটল ‘লা মার্টিনিয়ার ফর বয়েজে’র ‘বাংলা সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা’র অনুষ্ঠানে। শুক্রবার ‘অরণ্য ক্লাবে’র উদ্যোগে স্কুলেরই অডিটোরিয়ামে একটি অনবদ্য সন্ধ্যা উপহার দিল ছাত্ররা। এই শতাব্দীপ্রাচীন গৌরবময় স্কুলে ‘বাংলা’ হতে পারে ‘দ্বিতীয় ভাষা’। কিন্তু তা নামেই। বাংলা ভাষার প্রতি না আছে দূরত্ববোধ, না আছে অনাদর, না আছে বিমাতৃসুলভ আচরণ। বরং যেরকম যত্ন নিয়ে, প্রাণের পূর্ণ আবেগে পড়ুয়ারা ধাপে ধাপে সমগ্র অনুষ্ঠানটিকে সর্বাঙ্গসুন্দর করে তুলেছে, তার জন্য কোনও প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। এদিনের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট কবি জয় গোস্বামী। তিনিই অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন।

Advertisement

[মতুয়াদের নাগরিকত্ব ইস্যুতে দিলীপের দ্বারস্থ সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুর]

সংস্কৃতির প্রতিটি শাখাকে সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা রচিত হয়েছিল এমন নিখুঁতভাবে যাতে প্রতিটি শ্রেণি থেকে ছাত্ররা প্রতিনিধিত্ব করতে পারে। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় সেতারবাদন ও তবলা সহযোগে। এরকম প্রারম্ভ অচিন্ত্যনীয়। ভীষণভাবে ব্যতিক্রমী। জয় গোস্বামী তাঁর ভাষণে এই প্রচলবিরোধী সূত্রপাতের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করে বলেন– “পেশার সূত্রে আমি বহু বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয় ও বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছি। কিন্তু কোথাও দেখিনি একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হচ্ছে এইভাবে সেতার ও তবলার মধ্য দিয়ে। আমি অভিভূত। যে দু’টি ছোট্ট ছেলে সেতার ও তবলা বাজাল, তারা বড় সুন্দর  বাজিয়েছে।”

‘থিম’ ধরে ধরে অনুষ্ঠানটিকে বিন্যস্ত করা হয়েছিল। জুনিয়র স্কুল প্রোগ্রামের পড়ুয়া-প্রতিনিধিরা ‘ই-যুগই সই’ মঞ্চস্থ করে। কথা ও গানের সমন্বয়ে তারা তুলে ধরে ‘একাল বনাম সেকাল’ দ্বন্দ্ব। প্রযুক্তির আগ্রাসন কীভাবে শিশুমনের দখল নিচ্ছে তা বলার পাশাপাশি তারা এ বার্তাও দিয়ে যায় যে, মোবাইলের টাচ স্ক্রিনের স্পর্শ যেমন দরকার, তেমনই মানুষের প্রাণের স্পর্শও দরকার। শিশু ও কিশোরের বিকাশশীল মন যদি ঘরের বদ্ধ পরিসরে বন্দি হয়ে যায়, তাহলে শিক্ষা যে অসম্পূর্ণ থেকে যাবে!

[শিলচরে হেনস্তার জের, অসমের মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এফআইআর তৃণমূল সাংসদ ও বিধায়কের]

মিডল স্কুল প্রোগ্রাম পরিবেশন করে ‘কিশোর মাঝির নাও’। নামকরণেই স্পষ্ট, এখানে তুলে ধরা হবে ছটফটে কিশোর মনের গতিশীল অভিপ্রায়গুলি। যৌবনে পা রাখার ঠিক আগের এই পর্যায় যে কত সংবেদনশীল, কত স্বপ্ন-মাখা তা বলা হয় গানে কথায় ভাষ্যে। এই সরস গীতি আলেখ্যের পরিকল্পনায় ছিলেন তপশ্রী রায়।

এই সাংস্কৃতিক সন্ধ্যাটির বৈচিত্র ও গভীরতার আর একটি প্রমাণ ব্যান্ড সংগীত। এখন, ব্যান্ডের গান ‘বাংলা সংস্কৃতি’-র মূলধারায় রীতিমতো স্বীকৃত, মান্যতাপ্রাপ্ত। বহুমুখী চর্চায় ক্রমে বিশিষ্টতর হয়ে উঠছে এই সংগীত প্রবাহটি। দু’টি ব্যান্ড-সংগীত পরিবেশন করে সিনিয়র পড়ুয়ারা।

তারপর সবাইকে চমকে দিয়ে উপস্থাপিত হয় একটি অনন্য নাট্য প্রস্তাবনা ‘নিঃসঙ্গ রবীন্দ্রনাথ’। রবীন্দ্রনাথ ব্যতীত বাংলা ভাষা অভিভাবকহীন। বাঙালির প্রতিটি অনুভূতির, প্রতিটি একান্তযাপন ও যৌথ মুহূর্তের ভাব যিনি ভাষায় চিরকালীন করে রেখেছেন, সেই রবীন্দ্রনাথের ব্যক্তিগত জীবনের নিঃসঙ্গতার দহন ধরতে চাওয়া হয়েছে কবিরই নিজের লেখা থেকে, গান থেকে, চিঠির পাতা থেকে। পাঁচজনের অকারণ স্তুতিতে রবীন্দ্রনাথ কতখানি বিব্রত হতেন, অশান্তিতে ভুগতেন তা যেমন প্রকট হয়ে উঠেছে, তেমনই একের পর এক প্রিয়জনের মৃত্যুর ঝাপট কী করে সহ্য করে, অতিক্রম করে রবীন্দ্রনাথ তাঁর চারপাশে বুনে নিয়েছিলেন নির্জন নিঃসঙ্গতার মায়াচাদর, তাও পড়ুয়ারা সংক্ষেপে, সংহত ভঙ্গিতে জানিয়েছে হল-ভরতি দর্শক ও শ্রোতাদের। এরপরই অনুষ্ঠিত হয় নাটক ‘নায়ক’। নিঃসঙ্গতার আর্তি তাতে ধরা পড়েছে নতুন আলোয়, নতুন উপলব্ধিতে। নাট্য প্রস্তাবনা ও মূল নাটকটির পরিকল্পনা ও রূপায়ণ-ভাবনা সিদ্ধার্থ গুপ্তর। অন্যতম সহযোগী অরিঞ্জয় বোস। 

[শিলচরে প্রতিনিধিদের নিগ্রহের প্রতিবাদে দু’দিনের ‘কালা দিবস’ তৃণমূলের]

জয় গোস্বামী তাঁর অভিভাষণে বলেন, “এই অনুষ্ঠান থেকে বড় মধুর একটি স্মৃতি নিয়ে গেলাম। একযুগ আগে একবার এসেছিলাম। ‘সংবাদ প্রতিদিনে’র সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস আজ আরও একবার আসার সুযোগ করে দিলেন। সম্ভব হলে ভবিষ্যতে আবারও আসব এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।”

সংগীতে, নৃত্যে, নাটকে সত্যিই বড় মধুর একটি অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করা গেল। রয়ে গেল অনেকটাই মায়া। স্কুলের পড়ুয়াদের সক্রিয় অংশগ্রহণ স্মরণীয় করে রাখল সন্ধ্যাটিকে।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement