ছবি: প্রতীকী
অর্ণব আইচ: পঞ্চসায়রে হোম থেকে পালিয়ে যাওয়া যুবতীর গণধর্ষণের ঘটনায় সন্ধান মিলল একটি ‘দ্বিতীয় গাড়ি’র। প্রথম গাড়িটি মিনিট কয়েকের মধ্যেই নামিয়ে দিয়েছিল মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই যুবতীকে। সাদা রঙের অন্য একটি ট্যাক্সিতেই তাঁকে অপহরণ করা হয় বলে জানতে পারল পুলিশ। অন্তত ৪০ মিনিট ধরে যুবতীর উপর অত্যাচার চলেছে বলে সন্দেহ পুলিশের।
তদন্তে ধরা পড়ে গিয়েছে বৃদ্ধাশ্রম তথা হোমটির কর্মীদের একের পর এক মিথ্যা বক্তব্য। নিজেদের পিঠ বাঁচাতেই ওই হোমের এক মহিলা কর্মী ও মালিক প্রথম থেকেই বেশ কিছু মিথ্যা কথা বলেছেন বলে পুলিশ জেনেছে। এলাকার প্রচুর সিসিটিভি ঘেঁটে পুলিশ ওই অপহরণ ও গাড়িগুলি সম্পর্কে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। যে জায়গা থেকে যুবতীকে অপহরণ করা হয়েছিল ও যে জায়গায় অপহরণকারীরা তাঁকে ঠেলে ফেলে দিয়েছিল, সেই দু’টি জায়গাই শনাক্ত করা হয়েছে। যদিও চলন্ত গাড়িতে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল কি না, তা নিয়ে পুলিশ ধন্দে। পুলিশের মতে, একটি বিশেষ জায়গায় যুবতীকে নামিয়ে দু’জন মিলে তাঁর উপর যৌন নির্যাতন চালায়। সেই সম্ভাব্য জায়গাটিও পুলিশ শনাক্ত করেছে। এই ঘটনায় একটি গাড়ির নম্বরও পুলিশ উদ্ধার করেছে। কয়েকজনকে আটক করে পুলিশ জেরা করছে।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার হোমের ওই তালাটি পরীক্ষা করে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা বুঝতে পারেন যে, সেটি ভাঙা হয়নি। হোমের এক মহিলা কর্মী তথা ‘মাসি’কে টানা জেরা ও এলাকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে খোঁজখবর নিয়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে, সোমবার রাত একটা বা দু’টো নাগাদ হোম থেকে বের হননি যুবতী। ওই ‘মাসি’ নিজের পিঠ বাঁচাতে এই গল্প ফেঁদেছিলেন। চাবিটি রাখা ছিল কাছেই একটি জায়গায়। সেখান থেকে চাবি নিয়ে নিগৃহীত যুবতী তালা খুলে ফেলেন। রাত সাড়ে দশটা থেকে এগারোটার মধ্যেই হোমের প্রত্যেকের অগোচরে বেরিয়ে পড়েন তিনি। তার আগের দিনও এভাবে তিনি বাইরে বেরিয়ে এলাকার এক বাসিন্দার কাছে কেক খেতে চেয়েছিলেন, তা-ও পুলিশ জেনেছে। সেদিন ফিরিয়ে আনলেও সোমবার রাতে কেউ জানতেও পারেননি। ভোর সাড়ে চারটে থেকে পাঁচটার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে ওই ‘মাসি’ জানতে পারেন যুবতী পালিয়েছেন। তাই তিনি পিঠ বাঁচাতে পরপর মিথ্যা কথা বলতে থাকেন।
সিসিটিভি ঘেঁটে জানা গিয়েছে, হোম থেকে বেরনোর পর তিনি একটি গাড়িতে উঠে পড়েন। কিন্তু শাটল গাড়িটি তাঁকে কয়েক মিনিটের মধ্যেই নামিয়ে দেয়। এর পর আরও এগিয়ে যাওয়ার পর তাঁকে একটি সাদা রঙের ট্যাক্সিতে অপহরণ করা হয়। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে অত্যাচারের পর তারা যুবতীকে খালের কাছে ঠেলে ফেলে দেয়। এর পর তিনি যে সোনারপুর স্টেশন থেকে ট্রেনে করে বালিগঞ্জে আসেন, পুলিশ সেই প্রমাণও পেয়েছে। কিন্তু পরিবারের লোকেরা দাবি করেছিলেন যে, নিগৃহীতা রক্তমাখা পোশাক পরে গড়িয়াহাটে মাসির বাড়ি আসেন। কিন্তু তিনি যে ওই পোশাক পরে ছিলেন না, তার প্রমাণও পুলিশ পেয়েছে। এক পুলিশকর্তার মতে, মানসিক বিপর্যস্ত বলেই যুবতীর কথার মধ্যে বাঁধুনি নেই। তাই বিশেষজ্ঞর সাহাযে্য যুবতীর বক্তব্য জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.