অভিরূপ দাস: তাঁর ভাষা মালায়লম। কেরলের (Kerala) কোট্টায়ামের যে গ্রামে তাঁর জন্ম, সেখানে দূরবীন দিয়েও খুঁজলেও পাওয়া যাবে না বাঙালি। ২৩০০ কিলোমিটার দূরের শহরে বসে তিনিই বললেন, ‘‘… আমি পবিত্র মা বঙ্গজননীর মাটিতে নিজেকে সমপর্ণ করছি।’’ ঝরঝরে বাংলা। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ কলকাতার ICCR-এ ‘সংবাদ প্রতিদিন’ আয়োজিত ‘সরস্বতীর সেরা স্কুল’ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলা বলতে পারার কৃতিত্ব রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস (C V Anand Bose) দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বললেন, ‘‘গত বছরের সরস্বতী পুজোর কথা মনে পড়ছে। ওইদিন বাংলায় আমার হাতেখড়ি হয়েছিল। ভাগ্যিস তিনি হাতেখড়ি করিয়েছিলেন।’’
গত বছরের কথা। এখনও তা রাজ্যপালের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। প্রথম রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস লিখেছিলেন অ-আ। এদিন মুখ্যমন্ত্রীকে ‘এসটিমড কন্সটিটিউশনাল কলিগ’ বলে আপন করে নিয়েছেন রাজ্যপাল। পরিপূর্ণ সভাঘরে বলেছেন, ‘‘গত বছর আমার শ্রদ্ধেয় সাংবিধানিক সতীর্থ বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (CM Mamata Banerjee) সামনে একজন আট বছরের মেয়ে আমায় বাংলার হাতেখড়ি দিয়েছিল। সেদিন মুখ্যমন্ত্রীকে কথা দিয়েছিলাম, এক বছরের মধ্যে বাংলা বলতে শিখে নেব।’’ অতদিন লাগেনি। মাত্র ৮০ দিনের মধ্যেই বাংলা শিখে নিয়েছিলেন তিনি।
কেমন শিখেছেন? এদিন ছাত্রছাত্রীদের ওপরেই তা বিচারের ভার দিয়েছেন।মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়িয়ে গমগম করেছে তাঁর গলা, ‘‘আমি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথঠাকুরের নামে শপথ করছি, স্বামী বিবেকানন্দর নামে শপথ করছি, নেতাজির নামে নিজেকে সমপর্ণ করছি। আমি শ্রী অরবিন্দর নামে, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের নামে আর পবিত্র মা বঙ্গজননীর মাটিতে নিজেকে সমপর্ণ করছি।’’ নিজের বাংলা (Bangla) ভাষণে পশ্চিমবঙ্গকে আগাগোড়া শ্রদ্ধায় মুড়ে দিয়েছেন বোস। বলেছেন, ‘‘আমি এই পবিত্র সোনার বাংলার মাটিতে থাকতে চাই। চিত্ত যেথা ভয়শূন্য উচ্চ যেথা শির। জ্ঞান যেথা মুক্ত..আমি নিজেকে বাংলার নতুন প্রজন্মের কাছে সমর্পণ করছি। কারণ বাংলার ছাত্র-যুব শক্তির ক্ষমতা অপরিসীম।’’
তার প্রমাণ এদিন পেয়েছেন রাজ্যপাল। স্কুল পড়ুয়ার মধ্যে থেকে সংবাদসত্ত্বা খুঁজে আনতে ‘সংবাদ প্রতিদিন’ আয়োজন করেছিল খুদে সাংবাদিক প্রতিযোগিতার। স্কুলের গন্ডি পেরনোর আগেই বাংলার দশ স্কুল ছাত্রর প্রতিভা দেখে চমৎকৃত বোস।
এই মঞ্চেই তিনি তিনি তৈরি করেছেন ‘গর্ভনর গোল্ডেন গ্রুপ’। রাজ্যপালের এই অভিনব ঘোষণার সময় মঞ্চে ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর প্রধান সম্পাদক সৃঞ্জয় বোস, কনসাল্টিং এডিটর কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। করতালিতে তাঁরা সমর্থন জানিয়েছেন রাজ্যপালকে। ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে রাজ্যপালের সেতুবন্ধন করবে এই গ্রুপ। এই গ্রুপের মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের কথা শুনবেন রাজ্যপাল।
‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর সেরা দশ খুদে সাংবাদিককে রাজভবনে (Rajbhaban)আসার জন্য নেমন্তন্ন করেছেন তিনি। মঞ্চেই রাজভবনের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই ছাত্র-ছাত্রীদের আগামীতে পড়াশোনার জন্য সমস্তরকম সাহায্য করা হবে রাজভবনের তরফ থেকে। রাজ্যপাল জানিয়েছেন, ”ওরা রাজভবনে ঘুরতে আসুক।’’ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই শিশুদের সঙ্গে কথা আলোচনা করতে চান রাজ্যপাল। এদিন শংসাপত্র তুলে দেওয়া হয়েছে এদের হাতে। গোল্ডেন গ্রুপে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীর জন্য ৫ হাজার টাকা নগদ পুরস্কার ঘোষণা করেছেন বোস। এদিন বারবার রাজ্যপাল বুঝিয়ে দিয়েছেন, বাংলার ছাত্র ছাত্রীদের ওপর তাঁর অগাধ ভরসা। স্কুলে পড়তেই সাংবাদিকতা!
বেলতলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের দ্বিতীপ্রিয়া দে, গর্ভমেন্ট স্পনর্সড মাল্টিপারপাস স্কুল বয়েজের সৌর্যদীপ ভট্টাচার্য্য (টাকি হাউস), তিলজলা হাইস্কুলের আকাশদীপ দাসদের দেখে রাজ্যপাল বলেছেন, ‘‘বাংলার শিশুরা বুঝিয়ে দিয়েছে কোনওকিছুই অসম্ভব নয়। সে কারণেই বলা হয় ‘‘হোয়াট বেঙ্গল থিংকস টুডে। ইন্ডিয়া থিঙ্কস টুমরো।’’
তাঁর গল্প এদিন চুম্বকের মতো আটকে রেখেছিল কচিকাচাদের। ‘‘ইংরেজ আমলে রাজভবন দখল করেছিল ভাইসরয়। সে সময় রাজভবন থেকে ব্রিটেনের জয়গান বাজতো।’’ রাজ্যপালের কথায়, ‘‘আজ প্যান্ডোরার বাক্স খুলে গিয়েছে। আমি রাজভবনে বসে শুনছি। বাংলার অগণিত ছাত্র ছাত্রীরা বলছে, ‘‘বেঙ্গল বেঙ্গল লিডস দ্য রেস। তারাই নেতৃত্ব দেবে সারা দেশকে।’’
এদিন স্বার্থপর দৈত্যের গল্প শুনিয়েছেন রাজ্যপাল। মজার ছলে বলেছেন, ‘‘এত গল্প বলি। সবাই বলে আমি মাল্টিস্টোরি-রাজ্যপাল।’’ একসময় শিক্ষক ছিলেন। এদিনের অনুষ্ঠানে পুরনো পেশা ঝালিয়ে নিয়েছেন রাজ্যপাল। প্রশ্ন ছুঁড়েছেন, উইলিয়াম শেকসপিয়ার কে ছিলেন? কে ছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কন? উত্তর এসেছে চটপট। খুদেদের তিনি বলেছেন, ‘‘এরা সকলেই বিখ্যাত। অথচ স্কুলে পড়াশোনায় ভালো ছিল না। এর মানে কি? শুধু পুঁথিগত পড়াশোনা নয়। জীবন থেকে শিখতে হবে।’’
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.