অর্ণব আইচ: চারতলার ছাদ থেকে পড়ে ভেঙে গিয়েছিল মাথার খুলির হাড়। ঘাড়ে লেগেছিল প্রচণ্ড আঘাত। এসএসকেএম হাসপাতালে যমে মানুষে টানাটানি। একসময় চিকিৎসকরা আশাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ধীরে ধীরে সুস্থ হতে শুরু করে একরত্তি। দুই সপ্তাহ পর পর্ণশ্রীতে নিজের বাড়ি ফিরে এল শিশুটি।
দুর্ঘটনায় চারতলার ছাদ থেকে বাবার হাত ফসকে নিচে পড়ে গিয়েছিল এক বছর তিন মাসের পালক্ষি। প্রতিবেশী ও পুলিশের মতে, এটি ‘মিরাকল’। যদিও বাড়ি ফেরার পর এখনও আতঙ্ক কাটেনি ওই শিশুটির। গত ১২ ডিসেম্বর শিশুকন্যাকে নিয়ে ছাদে খেলছিলেন দক্ষিণ-পূর্ব রেলের কর্মী সুভাষচন্দ্র পাণ্ডা। হঠাৎই তাঁর হাত ফসকে নিচে পড়ে যায় মেয়ে। তাকে ধরতে গিয়ে নিজেই চারতলার ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হয় সুভাষবাবুর।
প্রতিবেশীরা জানান, সুভাষ বসুর ১২ বছরের ছেলে ওড়িশায় গিয়ে তাঁর শ্রাদ্ধের অনুষ্ঠান করেছে। কিন্তু আতঙ্ক রয়েছে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যেও। এখনও বাড়ির বাসিন্দাদের একতলার প্যাসেজ দিয়ে যেতে গেলে গা ছমছম করে। বাড়ির ছাদে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন বাসিন্দারা। তাই আগামী ৩১ ডিসেম্বর বছরের শেষের দিনটিতে যেখানে পড়ে মৃত্যু হয়েছিল সুভাষবাবু, সেখানেই যজ্ঞের অনুষ্ঠান করতে চলেছেন বাড়ির বাসিন্দারা।
শিশু পালক্ষির মা উপাসনা পাণ্ডা প্রতিবেশীদের জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তিনি নিচে এক ফল বিক্রেতার কাছ থেকে ফল কিনছিলেন। তখনই শিশুটির বাবা তাকে নিয়ে ছাদে খেলছিলেন। ছাদ থেকে মাকে দেখাতে গিয়ে হাত ফসকে পড়ে যায় শিশুটি। পাশের বাড়ির পেয়ারা গাছের উপর এসে পড়ার পর গিয়ে পড়ে উঠোনে। মেয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর থেকে নাওয়া-খাওয়া ভুলে গিয়েছিলেন মা। হাসপাতালে সারাক্ষণ পড়েছিলেন মেয়ের পাশে। মেয়ে প্রথমদিকে ছটফট করলেও দিন কয়েক পর প্রায় অসাড় হয়ে যায়। পুলিশ ও এলাকা সূত্রে জানা গিয়েছে, চিকিৎসকরা মা ও প্রতিবেশীদের বলেছিলেন, মেয়েটির খুলির হাড় ভেঙে মস্তিষ্কের ঢুকে গিয়েছে। কিন্তু এই শিশুকন্যার বয়স অত্যন্ত কম। তাই চিকিৎসকরা ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচার করতে চাননি। তার ফলে তার মানসিক বিকাশ ধীর হয়ে যেতে পারে। তার মাথায় রক্ত জমাট বেঁধে ছিল। তবে এই ক্ষেত্রে ওষুধে কাজ দেয়। এছাড়াও তার পা ভেঙে গিয়েছিল। ঘাড়েও ছিল মারাত্মক চোট। তবে হাসপাতালে ক্রমে সুস্থ হয়ে উঠতে শুরু করে পালক্ষি। একদিন আগে এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা ছেড়ে যান শিশুটিকে।
প্রতিবেশী সুদীপ্ত ভট্টাচার্য জানান, শিশুটি অনেক রাত পর্যন্ত জেগে থাকে। অনেক রাত পর্যন্ত কান্নাকাটি করে সে। আবার কখনও দিনে ঘুমায়। মাঝেমধ্যেই আতঙ্কে ভোগে। লোক দেখলে কেঁদে ওঠে। রবিবার নিজেই ঘাড় তোলার চেষ্টা করছে। মা উপাসনা পাণ্ডা পাশে থেকে মেয়ের শুশ্রূষা করে চলেছেন। সে যাতে তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠে, সেই চেষ্টা করছেন প্রতিবেশীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.