Advertisement
Advertisement

Breaking News

থ্যালাসেমিয়াকে হারিয়ে রোগীদের বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সুস্মিতা

প্রতিকুলতাকে হারিয়ে রাজ্যের প্রথম থ্যালাসেমিক কাউন্সেলর হিসাবে যোগ দিলেন এনআরএসে৷

Thalassemia is not end of life, Susmita proved that
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:December 22, 2016 10:54 am
  • Updated:January 4, 2020 5:41 pm  

গৌতম ব্রহ্ম: ‘শেয়ার ইওর কারেজ, নট ইওর ফিয়ার’৷ বিবেক-মন্ত্রেই জীবনের পথে হাজির হওয়া সব কষ্টকে মুখ বুজে সহ্য করেছেন৷ কষ্ট বলে কষ্ট! নদীর মতোই ‘দুর্ঘটনা’-র স্রোত বয়ে  চলেছে তাঁর জীবনে৷ ক্লাস ফোরে থ্যালাসেমিয়া ধরা পড়া থেকে গত বছর ‘গল ব্লাডার স্টোন’ অপারেশনের পর শরীর জুড়ে সেপটিসিমিয়ার ছোবল৷ মাঝে সংসারকে ভাসিয়ে মায়ের অকালমৃত্যু, সেরিব্রাল অ্যাটাকে বাবার পঙ্গু হয়ে যাওয়া৷ অগণিত বাধায় বারবার থমকে গিয়েছে জীবন৷ কিন্তু মনের জোরে সব হার্ডল টপকে অবশেষে লক্ষ্যে পৌঁছেছেন বছর পঁয়ত্রিশের তরুণীটি৷ চাকরি জুটিয়ে নিয়েছেন রাজ্য সরকার পরিচালিত থ্যালাসেমিয়া প্রকল্পে৷ শুরু করেছেন এক অন্য উড়ান৷ থ্যালাসেমিয়া রোগীদের মনের জোর বাড়ানোর কাজ৷ সচেতনতা বাড়ানোর কাজ৷ আর এই কাজে নিজেই হয়ে উঠেছেন সব চেয়ে বড় উদাহরণ৷

সুস্মিতা নাথ৷ বাড়ি হাওড়ার বেলুড়ে৷ ছোটবেলা থেকেই  গঙ্গা ও বেলুড় মঠের সঙ্গে ভাব৷ মঠ থেকে পেয়েছেন কষ্ট মোকাবিলার মন্ত্র৷ স্বামী বিবেকানন্দের সেই বাণী, ‘শেয়ার ইওর কারেজ, নট ইওর ফিয়ার’৷ গঙ্গার থেকে পেয়েছেন এবড়ো-খেবড়ো পথেও সহজভাবে বয়ে যাওয়ার সাহস৷ নদীর সঙ্গে অবশ্য তাঁর আরও মিল রয়েছে৷ তাঁর ‘থ্যালাসেমিক’ রক্তেও জমে ‘আয়রন’-এর পলি৷ সময়মতো না সরালে কমে যায় ‘নাব্যতা’৷

Advertisement

বেলুড় ‘সানরাইজ’ স্কুলের ছাত্রীটি তখন ক্লাস ফোরে পড়ে৷ দক্ষিণ কলকাতায় মামাবাড়ির কাছে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করা হয় সুস্মিতাকে৷ পনেরো দিন পর জানা যায়, সুস্মিতা থ্যালাসেমিক৷ তারপর থেকেই শুরু কষ্টের নদীতে সাঁতার৷ হাল ছাড়েননি একবারও৷ শারীরিক অসুস্থতাকে কখনও অজুহাত করেননি৷ স্কুলের সব পরীক্ষায় প্রথম হয়েছেন৷ “কিন্তু মা লিলি নাথের ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে চলে যাওয়াটাকে মানতে পারিনি৷ এখনও ভগবানের কাছে প্রশ্ন করি, কেন মাকে এত তাড়াতাড়ি কেড়ে নিলে? কেন বাবাকে শয্যাশায়ী করে দিলে?”

নালিশ বলতে এইটুকুই৷ নিজের শারীরিক অসুস্থতা হাসিমুখে মেনে নিয়েছেন৷ বিএসসি পরীক্ষার সময় রক্তে প্রতি লিটারে ৫০০০ মাইক্রোগ্রামের বেশি ‘আয়রন’ জমে যায়৷ শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন সুস্মিতা৷ ওই অবস্থাতেই তিন কিমি পথ পেরিয়ে নাগেরবাজার কলেজে পরীক্ষায় বসেন৷ কিন্তু ভাগ্যের এমন পরিহাস যে, অনার্স কেটে যায়৷ থামেননি৷ বরং মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে ‘ডবল এম’ করেন ইংলিশ ও ‘সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার’-এ৷

জীবনযুদ্ধে সাহস জুগিয়েছেন অনেকে৷ মা লিলি নাথ, বাবা পুলিনকুমার নাথ এবং অবশ্যই বিশিষ্ট হেমাটোলজিস্ট ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী৷ প্রান্তরবাবু মেডিক্যাল কলেজে থাকাকালীন সুস্মিতার চিকিৎসার দয়িত্ব নেন৷ যখনই সুস্মিতার জীবনে বিপর্যয় নেমেছে তখনই প্রান্তরবাবু পাশে দাঁড়িয়েছেন৷ গত বছর গল ব্লাডার স্টোন অপারেশনের পর সেপটিসিমিয়া হয়ে যায়৷ প্রান্তরবাবুই তাঁর চিকিৎসক বন্ধুদের সাহায্য নিয়ে সুস্থ করে তোলেন সুস্মিতাকে৷ সেই সঙ্গে দেখান স্বপ্ন৷ সমাজ থেকে থ্যালাসেমিয়া নামক অভিশাপকে নির্মল করার স্বপ্ন৷ সুস্মিতা সেই স্বপ্নকে পাখির চোখ করেই এগিয়েছেন৷

নিজের চিকিৎসার খরচ জোগাতে টিউশন করেছেন৷ একের পর এক চাকরির পরীক্ষায় বসেছেন৷ কিন্তু ইণ্টারভিউ বোর্ড বারবার তাঁর শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে৷ যোগ্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে৷ অবশেষে শাপমুক্তি৷ এনআরএস হাসপাতালে ‘স্টেট থ্যালাসেমিয়া ইলনেস প্রজেক্ট’-এর কাউন্সেলার হিসাবে চাকরি পেয়েছেন৷ প্রান্তরবাবু জানিয়েছেন, ‘থ্যালাসেমিয়া রোগীরা বেশিদিন বাঁচে না, এটাই প্রচলিত ধারণা৷ তাছাড়া মনে অনেকেই ভাবেন, এদের বেশিদিন বাঁচিয়ে রেখে লাভ কী? সেখানে সুস্মিতা পঁয়ত্রিশ বছর বয়সে চাকরি শুরু করলেন৷ থ্যালাসেমিয়া প্রকল্পে জুটিয়ে নিলেন কাজ৷ এটা একটা অনন্য নজির৷ এটা আমার মনে হয় প্রতিটি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্তকে সাহস জোগাবে৷”

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement