সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সিবিআই হেফাজতে কুন্তল ঘোষ, তাপস মণ্ডল, নীলাদ্রি ঘোষ। আলিপুর বিশেষ সিবিআই আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি সিবিআই হেফাজতে তিন অভিযুক্ত। ওইদিন ফের আদালতে পেশ করা হবে তাঁদের। কৌশিক ঘোষ, শেখ আলি ইমাম, শেখ শাহিদ ইমাম ও আব্দুল খালেক – এই চার অভিযু্ক্তের আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ আদালতের।
সোমবার আদালতে তোলার সময় আরও একবার নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন তাপস মণ্ডল। এদিকে আবার তাপসের গ্রেপ্তারিতে খুশি হয়েছেন বলেই দাবি কুন্তল ঘোষের। আদালতে হুগলির যুব তৃণমূল নেতা কুন্তলের আইনজীবী দাবি করেন, “ইডি’র হেফাজতে উনি আছেন। ইডি’র হাতে গ্রেপ্তারির আগে সিবিআইয়ের কাছে গিয়েছিলেন। সহযোগিতা করেন। তাকে এই মামলায় হেফাজতে এখন তাহলে নেওয়ার কি দরকার সিবিআইয়ের? তিনবার এই বিষয়ে নিজাম প্যালেসে ডাকার পরও কিছু পেল না তার থেকে সিবিআই। যেদিন থেকে ইডি গ্রেপ্তার করেছে জেল হেফাজতে রয়েছেন। এখন সিবিআই শ্যোন অ্যারেস্টের দাবি করছে। তদন্তের স্বার্থে সিবিআই কেন এনআইএ-ও যেকোনো সময়ে হেফাজতে নিতে পারে। তবে হুজুর আপনি দেখুন, সিবিআই এখন হেফাজতে নিতে গেলে জেলে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। জেল আধিকারিকদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে। এরপর সিবিআই তথ্য নেবে। তারপর শ্যোন অ্যারেস্টের কথা বলতে পারে। এটার কোনও দরকারই ছিল না।”
এদিকে, তাপস মণ্ডলও গ্রেপ্তারির কারণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বলেন, “তদন্তের স্বার্থে পুলিশ হেফাজতের প্রয়োজন হয়। তবে আমি যদি তদন্তে সাহায্য করি তাহলে প্রয়োজনীয়তা কী হেফাজতে নেওয়ার? পালিয়ে যাওয়ার কোথাও নেই। আমি সরকারি কর্মী। কোথাও যাব না। চারবার ডেকেছিল সিবিআই নিজাম প্যালেসে। জল, মিষ্টি খাইয়ে নিশ্চয়ই বাড়ি পাঠিয়ে দেবে না। এখন ১৬১ জবানবন্দি পেয়ে সেটা দেখিয়ে গ্রেপ্তার করা হল। সুবিচার দিন হুজুর।”
আরেক ধৃত নীলাদ্রি ঘোষের আইনজীবীও একই প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “আমাকে এই একই মামলায় তিনবার ডাকা হল। সিবিআই দাবি করছে তাপস মণ্ডল ও কুন্তল ঘোষের মাঝে মিডলম্যান হিসেবে কাজ করেছে নীলাদ্রি। উনি সাধারণ ব্যবসায়ী। তাঁদের পরিচিত। আমাদের চলার পথে অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ হয়, তাই বলে কি আমি অপরাধ করব? ওঁর বিরুদ্ধে এফআইআর নেই। গোটা চার্জশিটেও নাম নেই। তা সত্ত্বেও নোটিস দিয়ে হাজিরা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রেপ্তার? মশা মারতে কামান ডাকছে সিবিআই। যেকোনো কাউকে ডেকে গ্রেপ্তার করছে।”
যেকোনও শর্তে জামিনের আবেদন জানান তাঁর আইনজীবী। প্রয়োজনে রোজ হাজিরা দেওয়ার কথাও জানান। পালটা সিবিআই আইনজীবী বলেন, “উনি এমন একজন ব্যক্তি যিনি অযোগ্য চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এবং টাকা দিয়েছেন প্রভাবশালীদের কাছে। কাকে দিচ্ছেন টাকা, এটা জানতে হবে আমাদের। সিবিআইয়ের কাছে প্রমাণ আছে।” নীলাদ্রি আইনজীবী বলেন, “যার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তাকে ডাকা উচিত ছিল। আজকে তাঁকে কেন ডাকলেন না?”
কৌশিক ঘোষ, শেখ আলি ইমাম, শেখ শাহিদ ইমাম ও আব্দুল খালেক – এই চার অভিযু্ক্তের আগামী ২ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয় আলিপুর বিশেষ সিবিআই আদালত। আব্দুল খালেকের আইনজীবী বলেন, “আমার মক্কেলের (আব্দুল খালেক) ল্যাপটপ, মোবাইল বাজেয়াপ্ত। তাঁর হার্ট এর এবং কিডনির রোগ রয়েছে। ওষুধ খাওয়াটা জরুরি। কোনোপ্রমাণ নেই। ল্যাপটপটি ওঁর ছেলের। সে একজন ছাত্র। আব্দুল খালেক প্রবীণ। কারও সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই তাঁর।” একথা শোনার পর বিচারক সিবিআইয়ের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনি বলছেন এসপি সিনহাকে টাকা পাঠাতো আব্দুল। তাহলে একে হেফাজতে নিলেন কেন? এসপি সিনহাকে তো নিতে পারতেন।”
পালটা সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, “আপনি যদি বলেন পনির বাটার মশালা বানাবেন সেখানে পনির অর্থাৎ আসল উপাদান না থাকে তো রান্না করবেন কীভাবে? আগে মাথাকে ধরুন।” এরপর বিচারক আব্দুল খালেক আইনজীবীকে ছেলের ল্যাপটপ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আলাদা আবেদন করার পরামর্শ দেন। সবপক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর কুন্তল, তাপস ও নীলাদ্রির সিবিআই হেফাজত। বাকি চারজনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.