দীপঙ্কর মণ্ডল: স্বাধীনতার লড়াইয়ে ফাঁসিকাঠে জীবন দেওয়া ক্ষুদিরাম বসু এবং বিপ্লবী প্রফুল্ল চাকী সরকারি পাঠ্যবইতে সন্ত্রাসবাদী! চলতি সপ্তাহে এই ইস্যুতে বিধানসভায় রাজ্যে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা৷ শেষেমেশ গাফিলতির কথা স্বীকার করে, ক্ষমাও চেয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখাতে নয়া কমিটিও তৈরি করছে সরকার৷ কিন্তু তাতেও যেন বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না৷ বিরোধীদের একাংশের বক্তব্য, এই ভুল শুধরানোর জন্য আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সরকার৷ কিন্তু তারপরও একই ভুল রয়ে গিয়েছে৷ ফলে তাঁদের প্রশ্ন, আদৌ কি কাজের কাজ কিছু হবে?
[ আরও পড়ুন: খুদেকে ভুল টিকা দেওয়ার জের, আলিপুরদুয়ারে বদলি করা হল ডাফরিনের নার্সকে]
জানা গিয়েছে, এই বিতর্ক নতুন নয়৷ বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে বিতর্কের সূত্রপাত হয়েছে৷ তখনও অভিযোগ ওঠে, অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবইতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের একাংশকে ‘বিপ্লবী সন্ত্রাসবাদী’ হিসেবে তকমা দেওয়া হয়েছে। জানা গিয়েছে, এরপরই সরকারের নির্দেশে মেনে কয়েকজন ইতিহাসবিদকে নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়৷ যে কমিটিতে ছিলেন ইতিহাসবিদ সুমিত সরকার, সব্যসাচী ভট্টাচার্য, বিনয়ভূষণ চৌধুরি, হিমাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুজাতা মুখোপাধ্যায়৷ তবে সেই কমিটিও পাঠ্য বইয়ের বিষয়বস্তুকেই অনুমোদন দেয় বলে শিক্ষা দপ্তর সূত্রে খবর। এমনকী, পাঠ্যবইয়ের তথ্যতেই মান্যতা দেন ইতিহাসবিদ সুগত বসুও৷ ফলে ওই তথ্যগুলি পাঠ্যবইতে রয়েই যায়৷ এই বিষয়ে ইতিহাসবিদদের একাংশের যুক্তি, ‘‘স্বাধীনতার লড়াইয়ে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলন করেন বিপ্লবীরা৷ সরকারি নথিতে তাঁদের ‘সন্ত্রাসবাদী’ হিসাবেই আখ্যা দেয় তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার৷ দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সেই নথিই এখনও থেকে গিয়েছে৷ যার ফল এই বিতর্ক৷’’
[ আরও পড়ুন: ‘সিঙ্গুরে ইচ্ছুকদের চাষে সাহায্য করবে রাজ্য’, বিধানসভায় ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর ]
কিন্তু, মঙ্গলবার বিধানসভার চলতি অধিবেশনে আবারও বিষয়টি উত্থাপন করেন সিপিএম বিধায়ক প্রদীপ সাহা৷ অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যবই দেখিয়ে অভিযোগের সপক্ষে যুক্তি দেন তিনি৷ বইটি অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও জমা দেন তিনি। এরপরই এমন ভুলের জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়৷ অভীক মজুমদারের নেতৃত্বাধীন পাঠ্যক্রম কমিটিকে কাঠগড়ায় তুলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “এটা আগেও আমাদের কাছে এসেছিল। বিশেষজ্ঞ কমিটিকে জানিয়েও তা ঠিক হয়নি। বিষয়টি দুর্ভাগ্যজনক। দ্রুত এটা ঠিক করা হবে।” তিনি জানান, ‘‘এই ধরনের ভুল শোধরানোর জন্য জীবন মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষাবিদ ও প্রধান শিক্ষকরা এই কমিটিতে থাকবেন। পাঠ্য বইগুলির বিষয়বস্তু খতিয়ে দেখে এই কমিটি তিন মাসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে। এই সব বই ছাত্র কিংবা অভিভাবকরা গ্রহণ করছেন কি না এই কমিটি দেখবে। কোনও লেখা চূড়ান্ত করার আগে এই কমিটিতে দেখিয়ে নিতে হবে।’’
[ আরও পড়ুন: অভিনেত্রীর হেনস্তার খবরে পুলিশি তৎপরতা, জালে অভিযুক্ত ক্যাব চালক ]
শিক্ষাবিদ তথা তৃণমূল বিধায়ক জীবন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সন্ত্রাসবাদ বিষয়টি ছাড়াও এই বইটির ভাষা কিছুটা খটমট। আমি নিজেও এই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের বিপ্লববাদী বলার পক্ষপাতী। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণির মধ্য সরকারি ও পোষিত স্কুলে চালু থাকা পাঠ্য বইগুলি মূলত খতিয়ে দেখা হবে।’’ তবে শিক্ষামন্ত্রী প্রতিশ্রুতি দিলেও তাতে আশ্বস্ত হতে পারছে না ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ৷ কটাক্ষের সুরে তাঁদের অনেকেই বলছে, ‘‘হওয়ার থাকলে আগেই হত৷’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.