স্টাফ রিপোর্টার: বাইরে থেকে বোঝে কার সাধ্যি!
সাদামাটা ল্যাপটপ৷ কিন্তু তার আপাত নিরীহ চেহারার আড়ালে লুকিয়ে আছে কালান্তক রূপ৷ তার ব্যাটারি, ডিভিডি ড্রাইভ কিংবা কি-বোর্ডের নীচে ভরা রয়েছে বিস্ফোরক৷ সংকেত পেলেই যা ফেটে গিয়ে বিপর্যয় ঘটাবে৷ অথচ সে বিস্ফোরক এমনভাবে লাগানো যে, বিমানবন্দরের সতর্ক স্ক্যানারের চোখেও ধরা পড়বে না৷
জঙ্গিরা এখন বিমানে বা বিমানবন্দরে নাশকতা ঘটাতে এ ধরনের ল্যাপটপ বোমাকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে বলে আশঙ্কা৷ আইএস ও আল কায়দার হাতে যে এই মারণাস্ত্র এসে গিয়েছে, তার প্রমাণ পেয়ে আমেরিকা ইতিমধ্যে হুঁশিয়ার হয়েছে৷ আটটি দেশের দশটি বিমানবন্দর ছুঁয়ে মার্কিন মুলুকে আসা সমস্ত বিমানে ল্যাপটপ নিষিদ্ধ করেছে ওয়াশিংটন৷ রবিবার ব্রিটেনগামী বিমানেও ল্যাপটপ নিষিদ্ধ হয়েছে৷ এবং ভারতে বিমানবন্দরে নিরাপত্তার ভার যাদের হাতে, সেই সিআইএসএফদের ইঙ্গিত, ভবিষ্যতে নয়াদিল্লিও একই পথে হাঁটতে পারে৷
কলকাতায় সিআইএসএফ-এর ডিজি ওমপ্রকাশ সিং জানিয়েছেন, বিমানে ল্যাপটপ সম্পর্কে সিআইএসএফকে সতর্ক করা হয়েছে৷ কীভাবে এর মোকাবিলা করা যায়, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে৷ দিল্লির বিমানবন্দরের আদলে কলকাতা ও দেশের অন্যান্য বিমানবন্দরে বডি স্ক্যানার বসানোর চিন্তাভাবনা চলছে৷ গত তিন মাস ধরে দিল্লিতে চলছে বডি স্ক্যানারের ‘ট্রায়াল রান৷’ তাতে শরীরের সঙ্গে বাঁধা বিস্ফোরক বা অস্ত্রের ছবি সহজে ধরা পড়বে৷ যদিও এতে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা নষ্ট হতে পারে বলে অভিযোগ উঠেছে৷ তাই দিল্লি বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে অন্য বিমানবন্দরে বসানো হবে এই যন্ত্র৷
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরের ফেব্রূয়ারি মাসে আল শাহবাব নামে একটি জঙ্গি সংগঠন সোমালিয়ার মোগাদিশু ও জিবুতির মাঝখানে একটি বিমানের মধ্যে ল্যাপটপ বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়৷ ল্যাপটপ বহনকারী জঙ্গির মৃত্যু হয়৷ কোনওমতে কাছাকাছি বিমানবন্দরে নামিয়ে আনার পর রক্ষা পায় বিমানটি৷ তদন্তে জানা যায়, ডিভিডির খোলের ভিতর পোরা ছিল বিস্ফোরক৷ এর পর বিশ্বের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা রিপোর্ট দেয় যে, জঙ্গিদের হাতে রয়েছে ল্যাপটপ বোমা৷ বিমানবন্দরের স্ক্যানারে তা ধরা না পড়লেও ডিটোনেটরের সাহায্যে দূর থেকে তা ফাটানো যায়৷ সেই কারণেই বিমানযাত্রীদের ল্যাপটপ ও যাত্রীদের হাবভাবের উপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে সিআইএসএফ কর্তারা৷ যদিও এই দেশে বিমানযাত্রার সময় বহু যাত্রী ল্যাপটপ ব্যবহার করেন৷ তাই বিমানে ল্যাপটপ নিষিদ্ধ হলে সমস্যায় পড়বে যাত্রীদের একটি বড় অংশ৷
কলকাতা বিমানবন্দরের কয়েকটি জায়গাকে ‘গ্রে এরিয়া’ বলে ঘোষণা করেছে সিআইএসএফ৷ জায়গাগুলিতে সিআইএসএফ-এর গোয়েন্দাবাহিনী প্রত্যেক যাত্রীর চলাফেরা, হাবভাবের উপর কড়া নজরদারি চালাতে শুরু করেছে৷ সিসিটিভির মাধ্যমেও যাত্রীদের উপর চলছে বিশেষ নজরদারি৷ গোপনে তরল বিস্ফোরক নিয়ে যাতে জঙ্গিরা বিমানে উঠতে না পরে, তার জন্য কলকাতা বিমানবন্দরে বসছে বিশেষ যন্ত্র৷ এই ‘ডিটেক্টর’-এর সাহায্যে সহজেই শনাক্ত করা যাবে তরল বিস্ফোরক৷ সিআইএসএফ-এর বম্ব স্কোয়াডও নিয়ে আসছে বিমানবন্দরে বোমা ও বিস্ফোরক শনাক্তকরণের বহু আধুনিক যন্ত্রপাতি৷ এদিকে, কলকাতা-সহ দেশের সাতটি বড় বিমানবন্দরে এবার থেকে আর ‘হ্যান্ড লাগেজ’ এক্স-রে স্ক্যানারে পরীক্ষার পর আর তার উপর সিকিউরিটি ট্যাগ দেওয়া হবে না৷ এর ফলে যাত্রীদের সময় বাঁচবে৷ যদিও এক্স-রে স্ক্যানার ও সিসিটিভির মাধ্যমে লাগেজের উপর বাড়ানো হবে নজরদারি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.