বুদ্ধদেব সেনগুপ্ত: লকডাউন শিথিল হতেই ধীরে ধীরে গতি পাচ্ছে আবাসন শিল্প। গ্রামে চলে যাওয়া শ্রমিকরা শহরে ফিরতে শুরু করেছেন। পুরনো, চেনা মুখের সঙ্গে কিছু নতুন মুখও। ভিনরাজ্য থেকে ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকের দল। নতুন করে কাজ শুরু হবে। তবে এই আশার মাঝেই দেখা দিচ্ছে আশঙ্কা। ফিরে আসা শ্রমিকরা সকলেই সুস্থ তো? কেউ করোনা পজিটিভ নন তো? যাঁদের সুস্থ বলে মনে হচ্ছে, তাঁরা আদৌ কতটা সুস্থ? – এসব প্রশ্ন নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে নির্মাণ ব্যবসায়ীদের।
২৫ মার্চ দেশজুড়ে আচমকা লকডাউন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় আর পাঁচটা শিল্পের মতো রাজ্যজুড়ে ফ্ল্যাট-বাড়ি তৈরির কর্মকাণ্ডও থমকে গিয়েছিল। গ্রামে ফিরে গিয়েছিলেন শ্রমিকরা। লকডাউন উঠে আনলক ওয়ান চালু হতেই এক এক করে শহরে ফিরতে শুরু করেছেন তাঁরা। কিন্তু এঁদের মধ্যে অনেক মুখই যে নতুন! যে মুখগুলো নিয়েই ব্যবসায়ীদের মধ্যে জেগেছে ‘পরিযায়ী’ আতঙ্ক। প্রশ্ন জেগেছে ফিরে আসা শ্রমিকরা কতটা করোনা সংক্রমণমুক্ত, তা নিয়েও।
আবাসন শিল্প মানেই এখন ন্যূনতম কোটি টাকার বিনিয়োগ। দ্রুত সচ্ছল হওয়ার এই পথে ঝুঁকি নিয়ে পুঁজি ঢেলেছিলেন অনেকে। করোনা আবহে সব হিসেব চুরমার। লকডাউন ঘোষণা হতে শ্রমিরাই বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন দল বেধে। যাঁরা আটকে গিয়েছিলেন, তাঁরাও বেশিদিন অপেক্ষা করেননি। নিজেরাই যানবাহনের ব্যবস্থা করে বাড়ি ফিরেছিলেন। বিপাকে পড়েছিলেন প্রোমোটাররা,যাঁরা ফ্ল্যাটের জন্য অগ্রিম দিয়েছিলেন, তাঁরা টাকা বুকিং বাতিল করে অর্থ ফেরত চাইছিলেন। একে কাজ বন্ধ, তার উপর টাকা ফেরত দেওয়ার চাপ – জোড়া ধাক্কায় জেরবার হচ্ছিলেন প্রোমোটাররা।
এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত উত্তর কলকাতার এক ব্যবসায়ী অজয় ঘোষের কথায়, “মধ্যবিত্তরাই এই শিল্পের সিংহভাগ ক্রেতা। তাঁরা সবসময়ই নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পরিবেশ-পরিস্থিতি দেখে ফ্ল্যাট কেনেন। তাঁরা তো বাড়ি থেকেই বেরতে পারেননি। তাই ফ্ল্যাট বিক্রি কমেছে। আবার শ্রমিকরা ফিরে যাওয়ায় নির্মাণের কাজ মাঝপথেই বন্ধ রাখতে হয়েছিল। চলে যাওয়া শ্রমিকরা ফিরতে পারলেই কাজ শুরু সম্ভব।”
কিন্তু এখন গোল বেধেছে কাজে ফিরে আসা সেই শ্রমিকদের নিয়েই। তাঁদের নিয়ে ঘোর সংশয়ের বাতাবরণ ব্যবসায়ী মহলে। যে শ্রমিকরা ফিরছেন, তাঁদের দলে অন্য রাজ্য থেকে ফিরে আসা পরিযায়ী শ্রমিকরা মিশে আছেন কি না, তা অজানা। ভিন রাজ্য থেকে ফেরা এই শ্রমিকরা কতটা করোনামুক্ত, তা জানা নেই। রাজ্যে ফেরার পর ১৪ দিন নিয়ম মেনে কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন কিনা, তারও প্রমাণ নেই। প্রশ্ন আছে শ্রমিক এক্সপ্রেস চেপে সদ্য ফেরা পরিযায়ী শ্রমিকরা কোয়ারেন্টাইন থাকার বদলে প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে পরিচিতদের সঙ্গে কাজ করতে আসছেন কিনা, তা নিয়ে। উপসর্গহীন কেউ সাধারণের মধে মিশে গেলে তাঁকে কীভাবে শনাক্ত করা সম্ভব?
রাজ্য সরকার অবশ্য এনিয়ে সাফ জানাচ্ছে, এক্ষেত্রে মূল দায়িত্বটা নিতে হবে স্থানীয় প্রশাসন ও প্রোমোটারদেরই। এ বিষয়ে রাজ্য সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত নোডাল অফিসার পি বি সেলিম বলেছেন, “যাঁরা গ্রামে ফিরে এসে কোয়ারেন্টাইনে থাকছেন, তাঁদের প্রত্যেককে ছুটির সময় ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দেওয়া হচ্ছে। প্রোমোটার বা স্থনীয় প্রশাসন সেই সার্টিফিকেট দেখে তবেই কাজে নিয়োগ করুক।”
এরপরও কিন্তু আশঙ্কা কাটছে না। শহরে কাজ করতে আসা শ্রমিকদের কে পরিযায়ী, আর কে রাজ্যে থাকা কর্মরত শ্রমিক, তা চিহ্নিত করার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আবাসন শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরা। কারণ যে শ্রমিকরা বাড়ি ফিরে গিয়েছিলেন, তাঁদের সবাই কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন না। করোনা আক্রান্তও ছিলেন না। বাড়িতে থাকাকালীন আক্রান্ত হয়েছেন নাকি তাঁরা বাহক, তা শনাক্ত করা একেবারেই সম্ভব নয়। তাই যে যে এলাকায় নির্মাণকাজ চলছে, সেখানে আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.