রিংকি দাস ভট্টাচার্য: জব্বর ধাক্কা। মেঘের অন্তরণ ভেঙে উত্তুরে হাওয়া রূপ দেখাতেই পারদ হুড়মুড়িয়ে নেমে গেল চার ডিগ্রি। শীতের ছোঁয়া লাগল মহানগরের বাতাসে। আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস, আগামী কয়েকদিনে তাপমাত্রা আরও কমবে। অর্থাৎ মাঝ নভেম্বরেই কলকাতাবাসীকে কুলুঙ্গি থেকে সোয়েটার-মাফলার বের করতে হতে পারে। গত কয়েক বছরের শীত অভিজ্ঞতার নিরিখে বিচার করলে এ বছরের শীতের পরিস্থিতি এখন পর্যন্ত অনেকটাই অনুকূল। বৃহস্পতিবারই তার ট্রেলার মিলেছে। এদিন শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নেমে আসে ২০.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। যা স্বাভাবিকের এক ডিগ্রি কম।
এ বছর অক্টোবর শেষ হতেই হেমন্তের আভাস মিলেছিল। ২৬ অক্টোবর আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ২০.৩ ডিগ্রিতে। নভেম্বর শুরুতে রাতে পারদ নামার সঙ্গে সঙ্গে হিমেল ভাবও মালুম হচ্ছিল। কিন্তু ঘূর্ণাবর্তের জেরে সেই পরিস্থিতি তালগোল পাকিয়ে গিয়েছে। আসলে শীত নির্ভর করে উত্তুরে হাওয়ার উপর। উত্তুরে হাওয়ার গতি যত বাড়বে রাজ্যে শীতের দাপটও তত বাড়বে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্তের জন্য বিপরীত বায়ুপ্রবাহের জেরে বন্ধ হয় উত্তুরে হাওয়ার পথ। সমুদ্র থেকে গরম হাওয়া ঢুকে পড়ে স্থলভাগে। ফলে উত্তাপ বাড়তে থাকে। গত কয়েকদিনে দক্ষিণবঙ্গের শীতের ক্ষেত্রে এমনটাই ঘটেছে। যেমন, পড়শি রাজ্যের নিম্নচাপ অক্ষরেখার জেরে মেঘ ঢোকায় কালীপুজোয় পরেরদিন বৃষ্টির মুখ দেখেছে শহর ও শহরতলির বাসিন্দারা।
[পোস্তায় কাপড়ের গুদামে আগুন, এলাকায় চাঞ্চল্য]
আবহাওয়াবিদদের মতে, অক্টোবর-নভেম্বর মাস বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের মরশুম। এই সময় সেখানে নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড় তৈরি হলেই রাজ্যে ঢুকতে শুরু করে গরম জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস। চার বছর আগে হুদহুদ, নিলোফারের হানায় থমকে গিয়েছিল শীতের আমেজ। বছর তিনেক আগে ঠান্ডার রথে রাশ টেনেছিল অক্টোবর-নভেম্বর মাসে আন্দামান সাগরে তৈরি দু’টি ঘূর্ণিঝড় ‘হেলেন’ এবং ‘লহর’। এ বছরও পুজোর সময় ঘূর্ণিঝড় ‘তিতলি’ বিস্তর ভুগিয়েছে।
[মাছ-সবজি নাগালে, ‘সস্তা’র ভাইফোঁটায় বেগ দিচ্ছে রান্নার গ্যাস]
আবহাওয়া বিজ্ঞানীদের ব্যাখ্যা, বর্ষা বিদায় নিতেই আকাশ পরিষ্কার হয়ে যায়। তার জেরে রাতে ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক বেশি তাপ বিকিরিত হতে পারে। সেই বেশি তাপ বিকিরণের ফলেই রাতের তাপমাত্রা দ্রুত হারে কমতে থাকে। শীত পড়ার জন্য এই তাপ বিকিরণ প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু, নিম্নচাপ বা ঘূর্ণাবর্ত হলে সেই প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। তাঁদের কথায়, আকাশে মেঘ থাকলে দিনের তাপমাত্রা বাড়বে না। ফলে দিন-রাতের তাপমাত্রার ফারাক সেভাবে হবে না। শীত পড়ার ক্ষেত্রে দিন ও রাতের তাপমাত্রার ফারাকটা বেশি হওয়া প্রয়োজন৷ পটভূমি প্রস্তুত। শীত পড়ার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ছবি: পিন্টু প্রধান৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.