স্টাফ রিপোর্টার: দু’দেশের স্বার্থ রেখেই তিস্তার জলবণ্টন চুক্তি দ্রূত সম্পাদিত হবে বলে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর আস্থা রাখছে শেখ হাসিনা সরকার৷ সোমবার নবান্নে মমতার সঙ্গে দেখা করে বাংলাদেশ সরকারের এই আস্থার কথা জানিয়েছেন দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মোজাম আলি৷ ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ দিল্লিতে রবিবার তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উপর আস্থার রাখার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মোজাম আলির নবান্নে আসা এবং বৈঠক করার বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন দু’দেশের কুটনীতিকরা৷ সুষমা বলেছিলেন,“বাংলাদেশের সঙ্গে মমতাজির সম্পর্ক অনেক ভাল এবং গভীর৷ উনি বিধানসভা নির্বাচনে ব্যস্ত ছিলেন৷ ফের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে তবেই তিস্তা নিয়ে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে৷” আবার অন্যদিকে ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজকে খুনের হুমকি দেওয়া নিয়ে একইসঙ্গে নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন৷ স্বভাবতই এদিন মমতার সঙ্গে দেখা করে ওপার বাংলার রাষ্ট্রদূতের ঢাকায় রামকৃষ্ণ মিশনের নিরাপত্তা নিয়েও বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে যাওয়া যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তা স্বীকার করেছে কুটনৈতিক মহল৷
প্রায় ৫৫ মিনিট মমতার সঙ্গে নবান্নের ১৪ তলায় বৈঠক করার পর বাইরে এসে এদিন সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন মোজাম আলি৷ বলেন,“মূলত এসেছিলাম দ্বিতীয় দফায় যে বিপুল জনরায় নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় ফিরে এসেছেন সেই জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তরফে অভিনন্দন বার্তা পৌঁছাতে এসেছিলাম৷ নানা বিষয় নিয়ে কথা হয়েছে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে৷” উল্লেখ্য, মমতার দ্বিতীয় দফায় মুখ্যমন্ত্রী শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে কলকাতায় এসেছিলেন বাংলাদেশের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী আমির হোসেন আমু৷ এদিন মমতার সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূত মোজাম জানান, “বাংলাদেশে রামকৃষ্ণ মিশন ও সন্ন্যাসীদের নিরাপত্তা নিয়ে গতকালই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের দেশের সরকারের কথা হয়েছে৷ আজ ঢাকার ওই মিশনের নিরাপত্তার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা মুখ্যমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়েছে৷ অন্যান্য বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে৷” পাশাপাশি, তিন আরও জানান, “চলতি বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশ সুপ্রিমো শেখ হাসিনা’র ভারত সফরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে৷” এদিন নবান্নে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রদূত মোজাম আলিকে প্রশ্ন করা হয়, তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে কোনও আলোচনা হয়েছে কি না প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, “গত বছর বাংলাদেশ সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, আমার উপর আস্থা রাখুন৷ আজ প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধি হয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বলেছি, ওঁর উপর আমাদের পূর্ণ আস্থা ও ভরসা আছে৷” গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় গিয়েও তিস্তা ইস্যুতে মমতা বলে এসেছিলেন, আমার ওপর আস্থা রাখুন৷ এদিন কার্যত সেই কথারই প্রতিধ্বনি করেন ওপারের রাষ্ট্রদূত৷ এপার বাংলার মানুষ ওপারের ইলিশের জন্য যে হা-পিত্যেশ করে থাকে৷ কিন্তু গত চার বছর ধরে ঢাকার নিষেধাজ্ঞার জেরে ভারতে ইলিশ রফতানি বন্ধ রয়েছে৷ এদিন বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রফতানির প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত মোজাম বলেছেন, “অবশ্যই ইলিশ রফতানি করবে বাংলাদেশ৷ কিন্তু তার আগে দু’দেশের বন্দরের পরিকাঠামোর উন্নতির দরকার৷ কারণ, ইলিশ মাছ দ্রূত নষ্ট হয়ে যায়৷ আগে দু’দেশের দু’পাশের বন্দরে সংরক্ষণের পরিকাঠামো দরকার৷” মোজামের সঙ্গে ছিলেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপরাষ্ট্রদূত জকি আহাদ প্রমুখ৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.