গৌতম ব্রহ্ম: টিকা (Covid Vaccination) নেওয়ার পর হাত-পা অসাড় হয়ে গিয়েছিল মেয়েটির। উলুবেড়িয়া হাসপাতাল থেকে যখন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়, তখন তার অবস্থা অত্যন্ত সংকটজনক বললেও কম বলা হয়। ভেন্টিলেশনে রেখে শুরু হয় চিকিৎসা। চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘অ্যাডভার্স ইভেন্টস ফলোয়িং ইমিউনাইজেশন’ (AEFI)। অত্যন্ত বিরল ঘটনা। পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে যায়, কিশোরীর শরীরে ‘গুলেনবেরি সিনড্রোম’-এর মতো স্নায়বিক রোগ ধরা পড়ায়। অনেকটা মড়ার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো ব্যাপার। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর অবশেষে জিতল সেই কিশোরী। জিতল মেডিক্যালের ডাক্তারবাবুদের অক্লান্ত লড়াই।
হাসপাতাল সূত্রের খবর, রোগীর নাম নমিতা সিং। বয়স সতেরো। ২২ দিন পর শুক্রবার হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছে নমিতা। জানা গিয়েছে, আপাতত সে সংকটমুক্ত। নমিতার মামা শুভঙ্কর মাজি জানিয়েছেন, টিকা নিয়ে আমার ভাগনি অসুস্থ হয়েছে। পরবর্তীকালে কীভাবে চিকিৎসা হবে, কিছুই বুঝতে পারছি না। শুনেছি এসব ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। খুব অসহায় বোধ করছি।
বিশেষজ্ঞরা অবশ্য জানিয়েছেন, গোটা দেশে মাত্র ২১০টি এইএফআই-এর ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তারই একটি নমিতার অসুস্থতা। স্বাস্থ্যমন্ত্রক সূত্রে খবর, ২১০টি ঘটনার মধ্যে ৪৪টির সঙ্গে টিকার সরাসরি সম্পর্কের হদিশ মিলেছে। ২৭টি ঘটনার জন্য টিকার উপাদান দায়ী। ১৫টির জন্য দায়ী টিকাজনিত উদ্বেগ। দু’টি ঘটনা টিকাদানের ভুলের জন্য হয়েছে। একটি মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। বাকি ১৬৬টি অসুস্থতা টিকাদানের পর ঘটলেও, সেগুলির সঙ্গে টিকাদানের সরাসরি সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৯৪টি ঘটনা অমীমাংসিত।
চিকিৎসকদের মতে, ৭৪.১ কোটি ভারতীয় টিকার দু’টি ডোজ পেয়েছেন। মোট ১৭১টি ডোজ দেওয়া হয়েছে। এই বিপুল সংখ্যার কাছে ৪৪ বা ২১০ সংখ্যাটা অতি নগণ্য। সুতরাং, টিকা নিয়ে অকারণ উদ্বেগের কোনও মানে নেই। তাছাড়া এই এইএফআই সামাল দিতে ভারত সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রক স্পেশাল গ্রুপ তৈরি করেছে। আলাদা কমিটি হয়েছে। তাঁরা প্রতিটি ঘটনা খতিয়ে দেখছেন। এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা সামাল দেওয়ার কৌশলও তৈরি করা হয়েছে। দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.