প্রতীকী ছবি।
অর্ণব আইচ: ফের শহরে এক নাবালিকা ছাত্রীর ধর্ষণ। সকালে পর্ণশ্রী থানায় এসেই কাঁদতে শুরু করেছিল ১২ বছর বয়সের কিশোরী। প্রথমে কিছু বুঝতে পারেননি পুলিশ অফিসাররা। তাঁরা সান্ত্বনা দিতে শুরু করেন কিশোরীকে। মেয়েটি তাঁদের জানায়, মদ্যপান করিয়ে তাকে গণধর্ষণ করেছে তারই চার ‘বন্ধু’। সারারাত ধরে এই নারকীয় অত্যাচার চালিয়েছে তাঁরা।
পর্ণশ্রী থেকে মোমিনপুরের একটি নির্জন বাড়িতে নিয়ে গিয়ে তাকে প্রথমে মদ্যপান করানো হয়। এর পর চার যুবক মিলে তাকে গণধর্ষণ করে। এই অভিযোগ পাওয়া মাত্রই পুলিশমহলে হইচই পড়ে যায়। যেহেতু মোমিনপুরে ঘটনাটি ঘটেছে, তাই একবালপুর থানায় মামলা পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পর্ণশ্রী থেকে অমরজিৎ চৌপাল ও মনোজ শর্মা এবং একবালপুর থেকে বিকাশ মল্লিক ও হৃত্বিক রাম নামে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, ধৃতদের বয়স ২১ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে। তাদের মধ্যে কেউ বা ছোটখাটো কাজ করে, কেউ বা বেকার। পর্ণশ্রীর বাসিন্দা হওয়ার সূত্রে অমরজিৎ ও মনোজের সঙ্গে পরিচয় ওই এলাকারই বাসিন্দা ওই সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর।
পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে বাড়িতে সে জানায়, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছে। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলেও সে বাড়িতে ফেরে না। বাবা একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তিনি রাত ১২টা পর্যন্ত বিভিন্ন জায়গায় মেয়েকে খোঁজেন। কোথাও না পেয়ে পর্ণশ্রী থানায় গিয়ে মিসিং ডায়েরি করেন। শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ মেয়েটি একাই পর্ণশ্রী থানায় চলে আসে। পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করে জানায়, বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে মোমিনপুরে যায় সে। সেখানেই তার সঙ্গে আরও দুই যুবকের পরিচয় হয়। তারা জানায়, ভূকৈলাশ রোডে তাদের একটি অনুষ্ঠান আছে। সেখানে তারা একসঙ্গে সময় কাটাবে। প্রস্তাবে রাজি হয় যায় মেয়েটি। ‘বন্ধু’দের সঙ্গে ওই নির্জন বাড়িটিতে যায়। সেখানেই ঘরের ভিতর ওই যুবকরা নিজেরা মদ্যপান করে। অন্য পানীয়র সঙ্গে মিশিয়ে জোর করেই মদ্যপান করানো হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে একটু বেশি পরিমাণ মদ খাইয়ে কিশোরীকে প্রায় বেহুঁশ করে ফেলা হয়। এর পর তার উপর শুরু হয় যৌন নির্যাতন। কিশোরীর অভিযোগ অনুযায়ী, ওই অবস্থায় ৪ যুবকই তাকে গণধর্ষণ করে। সকালে উঠে কিশোরী পুরো বিষয়টি বুঝতে পারে। নিজেই ফিরে আসে পর্ণশ্রীতে। কোনও ভয় না পেয়েই অভিযোগ জানাতে সোজা চলে যায় থানায়।
ঘটনাস্থল পর্ণশ্রীতে নয়। তবু পুলিশ পর্ণশ্রী থানায় ‘জিরো এফআইআর’ করে। সেখান থেকে মামলাটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় একবালপুর থানায়। কিশোরীর মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে। জানা গিয়েছে, যেখানে প্রথমে কিশোরী গিয়েছিল, সেটি দক্ষিণ বন্দর থানা এলাকায় পড়ে। কিন্তু ঘটনাস্থল একবালপুর থানায়। তাই পর্ণশ্রী থানা, দক্ষিণ বন্দর থানা ও একবালপুর থানার আধিকারিকরা একজোট হয়ে তদন্ত শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ৪জন গ্রেপ্তার হয়। জানা গিয়েছে, ওই কিশোরীর বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। বাড়িতে সৎ মা ছিলেন। মেয়েটিও বাড়িতে থাকতে চাইত না। পর্ণশ্রীর বাসিন্দা দুই অভিযুক্ত প্রায়ই ঘোরাঘুরি করত মেয়েটির স্কুলের কাছে। সেই সূত্রেই তাদের সঙ্গে পরিচয় হয়। পুরো ঘটনাটির তদন্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.