সুব্রত বিশ্বাস: মাঝেরহাটে রেলের লেভেল ক্রসিং প্রস্তুত করতে যে হ্যাপা পোহাতে হবে রেলকে তাতে স্বভাবতই নিরুৎসাহ হবে রেল। রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন বিভাগের কর্তারা তেমনটাই মনে করেছেন। তবে সোমবারও রেলকে লেভেল ক্রসিং তৈরির ব্যাপারে রাজ্য আলোচনায় ডাকেনি। এমনকী, কোনওরকম চিঠিও রেল দেয়নি বলে জানিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ মহাপাত্র। তিনি বলেন, কেউ কোনওরকম আবেদন না জানালে রেল উপযাচক হয়ে কোথায় যাবে?
[বড় গণেশ থেকে হতে পারে মারাত্মক বিপদ, ফের সতর্ক করল পুলিশ]
তবে মাঝেরহাটে লেভেল ক্রসিং তৈরিতে যে পরিমাণ হ্যাপা রেলের হবে তাতে রেল অতটা উৎসাহী হবে না বলেই মনে করেছেন রেলের ইঞ্জিনিয়ারিং ও অপারেশন বিভাগের কর্তারা। তাঁদের কথায়, আগামী দু’বছরের মধে্য দেশের সব লেভেল ক্রসিং বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্য একাধিক প্রকল্পও কার্যকর করা শুরু হয়েছে। নতুন লাইনে লেভেল ক্রসিং তৈরি হবে না। পুরনো লাইনে লেভেল ক্রসিং বন্ধ করে যেখানে সম্ভব ওভারব্রিজ অথবা আন্ডারপাস। দুটোই অসম্ভব হলে সেখানে অবশ্য প্রহরা বসাতে হবে। অত্যাবশ্যক ক্ষেত্রে রাজের আবেদনে লেভেল ক্রসিং তৈরি হলে হতেই পারে, তবে সেজন্য রেলের যে দক্ষযজ্ঞ তা এক কথায় অতিবড় মাপের। কারণ সমস্ত ট্রেন, মালগাড়ি কমপক্ষে সাত দিন বন্ধ রাখতে হবে।
[মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের জের, পড়ুয়াদের সময়মতো স্কুলে পৌঁছে দেবে পুলিশ]
লেভেল ক্রসিং তৈরি করতে গেলে যে বিষয়গুলি রেলকে করতে হয়, তা বিশেষজ্ঞদের মতে, সড়কপথে কতগুলি গাড়ি চলে আর ট্রেন চলে কতগুলি। দিনরাত ধরে এই দু’টি পরিবহণের সংখ্যা নেওয়া হবে। দু’টি সংখ্যা ক্যালকুলেট করে একটি মাত্রা বের কার হবে। যা রেলের ভাষায়, ‘ট্রেন ভেহিকল ইউনিট’ (টিভিইউ)। এই টিভিইউ নির্ণয়ের পর দেখা হয় কী রকম লেভেল ক্রসিং হবে। গ্রেড-ওয়াল, টু না থ্রি। রেলের আইন অনুযায়ী এই ‘টিভিইউ’ ২০ হাজারের বেশি হলে সেখানে অবশ্যই ইন্টারলকিং ব্যবস্থা করতে হবে। স্টেশনের সঙ্গে লেভেল ক্রসিং গেটের সিগন্যাল সংযুক্ত রাখতে হবে। যা নিয়ন্ত্রণ করবে স্টেশন মাস্টার। এসএম ‘স্লপ’ দিলেই তবেই খুলবে ও বন্ধ হবে লেভেল ক্রসিংয়ের গেট। গেট খোলা ও বন্ধের পদ্ধতিতে যে ‘নর্মালি ওপেন’ বা ‘নর্মালি ক্লোজ’ ব্যবস্থা থাকে তা এখানে চলবে না। কারণ, বিশেষজ্ঞদের মতে, যে সংখ্যার গাড়ি সড়কপথে চলে তাতে ওই সিস্টেম চলবে না। ট্রেনের খবর হলেই গেট বন্ধ করে দিতে হবে। ফলে দীর্ঘ সময় গেটে অপেক্ষায়, থাকবে গাড়িগুলি।
[সমাবর্তন বিতর্কের মধ্যেই নন্দনে সৌমিত্রকে ডি-লিট সম্মান প্রেসিডেন্সির]
পাশাপাশি মাঝেরহাট দিয়ে চলে চক্ররেল, বজবজ শাখার লোকাল এছাড়া মালগাড়ি ও বন্দর এলাকার গাড়িগুলি। রেলের এই যাতায়াতের পয়েন্ট কেবিন থেকে নিয়ন্ত্রণ হয়। এখন আলিপুর থেকে নিউ আলিপুরের দিকে যেতে পাশেই রয়েছে পয়েন্টগুলি। যা সরাসরি সিগন্যালের সঙ্গে যুক্ত। লেভেল ক্রসিং হলে এই পয়েন্ট অন্যত্র সরাতে হবে। ঠিক রুট রিলে ইন্টারলকের মতো কাজ হবে। এছাড়া স্টেশন এলাকায় প্রচুর সার্কিট রয়েছে যা স্থানান্তর করতে হবে। এজন্য সব ট্রেন ও মালগাড়ি একেবারে বন্ধ রাখতে হবে অন্তত সাতদিন। এতবড় কর্মযজ্ঞ করা হয় তখনই যখন, ২৫ বছরের পরিকল্পনায় চলবে লেভেল ক্রসিংটি। মাঝেরহাটের লেভেলক্রসিং অতদিন স্থায়ী হবে না, তাই এই পরিকল্পনায় রেল আদৌ সাড়া দেবে কি না তা নিয়ে সংশয় হয়েছে রেল কর্তাদের মধ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.