দীপঙ্কর মণ্ডল: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধায়ক দল তৈরি৷ নতুন এবং পুরনোর মিশ্রণে তাঁর টিম যে কত শক্তিশালী তা টের পাওয়া গেল৷ মঙ্গলবার বিধানসভায় রাজ্যপালের ভাষণ নিয়ে আলোচনা হয়৷ প্রথমদিনেই মুখ্যমন্ত্রীর বুদ্ধিদীপ্ত বক্তার দল নিজেদের শক্তি জানান দিল৷ ২১১ বিধায়কের মধ্যে মন্ত্রীরা তুখোড়৷ পরিসংখ্যান দিয়ে বাকি সদস্যরাও যে কত ধারালো কথা বলতে পারেন তা এদিন দেখল বিধানসভা৷
করিমপুর থেকে এবার প্রথম বিধায়ক হয়েছেন মহুয়া মৈত্র৷ বিদেশে পড়াশোনা করা যুবসমাজের অন্যতম এই মুখ যখন বক্তব্য পেশ করছিলেন তখন সরকার পক্ষ তো বটেই বিরোধীরাও চুপ৷ মমতা গরিব পড়ুয়াদের সাইকেল দিয়েছেন, তাতে সমস্যা কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মহুয়া৷ ঝরঝরে ইংরেজিতে তেরো মিনিটের বক্তব্য৷ বিরোধীদের প্রতি তাঁর প্রশ্ন, প্রতি বাড়িতে শৌচালয় করলে আপনাদের সমস্যা কোথায়৷ রাজ্যে বহুদিন পরে কোনও একক দল ক্ষমতায় এসেছে৷ গণতন্ত্রে মানুষের রায়ের উপরে আর কিছু হয় না৷ গরিব মানুষ যদি দু’টাকা কেজি দরে চাল পান তাহলে সমস্যা কোথায়? ভোটের আগে কংগ্রেস-সিপিএমের জোট নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মহুয়া৷ কংগ্রেসের মানস ভুঁইয়ার দিকে তাকিয়ে মহুয়া বলেন, যুব কংগ্রেসের সদস্য হিসাবে আপনাদের সঙ্গেই তো মঙ্গলকোট গিয়েছিলাম৷ বিরোধীরা সরকারের সমালোচনা করবে৷ কিন্তু উন্নয়ন নিয়ে কেন বিরোধিতা করা হবে? নকশালবাড়ি থেকে নেতাই পর্যন্ত বহু গণহত্যা হয়েছে৷ সেসব ভুলে গিয়ে কেন আপনারা এত ‘নেগেটিভ’ কথা বলছেন? বাম পরিষদীয় দলকে লক্ষ্য করে করিমপুরের বিধায়কের বক্তব্য, একশোর মধ্যে নিরানব্বই টাকা রেখে যদি এক টাকাও আপনারা খরচ করতেন তাহলে আজ এই হাল হত না৷
জেমস কুজুর-সহ অন্য মন্ত্রীরা এগিয়ে এসে তাঁকে বাহবা জানান৷ অনেকেই বলেন, এদিনের সেরা বক্তা তিনি৷ মহুয়ার কথার রেশ ধরেই জোটকে তীব্র কটাক্ষ করেন উদয়ন গুহ৷ এবার বিধানসভা ভোটের আগে তিনি বামফ্রন্ট ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন৷ সেই প্রসঙ্গে উদয়ন বলেন, “৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকে বামপন্থীদের শ্রেণিচরিত্রে বদল এসেছে৷ আলিমুদ্দিন থেকে প্রার্থী তালিকা ঘোষণার সময় জানানো হয়েছিল কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা হলেও মঞ্চ শেয়ার করা হবে না৷ কিন্তু পার্ক সার্কাসে মালাবদল হল৷ যাঁরা বললেন মঞ্চ শেয়ার করবেন না তাঁরাই বিছানা শেয়ার করল৷ রমজান মাসের পর তালাক হবে কি না জানি না৷ এই অবস্থায় আমি বামফ্রন্টে থাকলে বাবা কমল গুহ আমাকে ত্যাজ্যপুত্র করতেন৷” সিপিএমের আমজাদ হোসেন উদয়নের কথার মাঝে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় সিপিএম বিধায়ককে থামিয়ে অসংসদীয় মন্তব্য না করার অনুরোধ করেন৷ বামেরা ২০০৬ সালে ২৩৫, ২০১১ সালে ৬২ ও ২০১৬ সালে ৩২ টি আসন পেয়েছে৷ এই তথ্য দিয়ে কটাক্ষ করে উদয়ন বলেন, “দেবশ্রীকে বলব, এই বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতিকে কীভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা যায় তার উপায় বলুন৷” কয়েকজন ছাত্রকে খালিপায়ে হাঁটতে দেখে মমতা প্রাথমিক পড়ুয়াদের বিনামূল্যে জুতো দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ তা উল্লেখ করে দিনহাটার বিধায়ক বলেন, মমতার আগে সাতজন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন৷ কিন্তু কেউ তাঁর মতো হৃদয় দিয়ে দেখেননি৷ একইসঙ্গে তিনি মমতাকে প্রধানমন্ত্রীর আসনে দেখার ইচ্ছাও গোপন করেননি৷ উদয়ন বলেন, “আমরা বিবেকানন্দ-রবীন্দ্রনাথের মতো বাঙালি মনীষী পেয়েছি৷ বাঙালি রাষ্ট্রপতি, বাঙালি লোকসভার স্পিকার এবং বাঙালি ক্রিকেট অধিনায়ক পেয়েছি৷ কিন্তু বাঙালি প্রধানমন্ত্রী এখনও পাইনি৷ ২০১৯ সালে আসুন সবাই সেই লক্ষ্যে এগোই৷
১৭ জুন বিধানসভায় ভাষণ দিয়েছিলেন রাজ্যপাল৷ এদিন সেই প্রসঙ্গে বিরোধী কংগ্রেস ও বাম বিধায়করা সরকারকে আক্রমণ করেন৷ তৃণমূলের প্রায় সবার মুখে এদিন জোট বিরোধীতার কথা শোনা গিয়েছে৷ গৌরীশঙ্কর দত্তও এদিন জোটকে কটাক্ষ করেন৷ তেহট্টের এই বিধায়ক দীর্ঘদিনের রাজনীতিক৷ স্পষ্ট উচচারণ ও আবেগ মিশিয়ে গৌরীশঙ্কর বিরোধীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ভোটের আগে এবং পরে আপনারা জোট বেঁধে কথা বলছেন৷ কিন্ত্ত মানুষ আপনাদের সঙ্গে নেই৷ কংগ্রেসের সুখবিলাস বর্মা ও সিপিএমের খগেন মুর্মু যুক্তি দিয়ে সরকারবিরোধী বক্তব্য পেশ করেন৷ তবে তৃণমূলের শক্তিশালী বক্তব্যে অনেকটা ম্লান মনে হয়েছে বিরোধীদের৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.