ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: এলাকায় জনসংযোগ, পরিষেবা প্রদান থেকে করোনা মোকাবিলায় কাজ – রাজ্যের শাসকদলের প্রত্যেক জনপ্রতিনিধির পারফরম্যান্সের দিকে কড়া নজর টিম পিকের। রাজ্যে করোনার প্রকোপ বাড়তে সেই এলাকায় কে কেমন কাজ করছেন, সেই খতিয়ান নিতে নেমে পড়েছিল নির্বাচনী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচনী স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরের দল। সূত্রের খবর, তাতে অনেকেই বেশ পিছিয়ে। ব্লক থেকে জেলা স্তরের অনেক জনপ্রতিনিধিই নিজের এলাকার করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে যথেষ্ট খবরাখবর রাখেননি। টিমের কাছ থেকে এই রিপোর্ট পেয়ে অসন্তুষ্ট পিকে ‘স্যর’। তাই রবিবারের বৈঠকে তিনি সে সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। বলেছেন, এই মুহূর্তে এলাকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থার খোঁজখবর রাখাটাই সবচেয়ে জরুরি।
যেদিন থেকে নিজের ভোট রাজনীতির রণকৌশল ঠিক করতে স্ট্র্যাটেজিস্ট প্রশান্ত কিশোরকে ময়দানে নামিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সেদিন থেকেই পুরোদমে কাজে ঝাঁপিয়েছে পিকের টিম। তৃণমূল স্তর থেকে কাজকর্ম শুরু হয়েছে। ভোটের সময় তো বটেই, গোটা বছরই বঙ্গের শাসকদলের খুঁটিনাটি খোঁজে পিকের নজরদারির শেষ নেই। কাটমানি অভিযোগ থেকে রেশন দুর্নীতি বা জনবিচ্ছিন্নতা – বিরোধীদের তরফে ওঠা একাধিক অভিযোগে দলের ছোট থেকে বড় – সব নেতাকেই পড়তে হয়েছে পিকের স্ক্যানারে। করোনা সংক্রমণের মতো গুরুতর পরিস্থিতিতে তিনি যে আরও সক্রিয়, তা বলাই বাহুল্য। সেই সক্রিয়তা থেকেই তাঁর টিম করোনা পরিস্থিতিতে দলের ছোট, মেজো, বড় সব ধরনের নেতাদের কাজই খুঁটিয়ে দেখেছে। কাউকে ফোন করে তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে, তো কারও উপর আবার চুপিসাড়ে নজরদারি চলেছে। তাতেই বোঝা গিয়েছে, কার দৌড় কতটা।
সূত্রের খবর, জেলা স্তরের অনেক নেতা ও জনপ্রতিনিধি নিজের এলাকার করোনা সংক্রান্ত খবরাখবরের দৌড়ে বেশ পিছিয়ে। তথ্য রাখার বিষয়ে কাঁচা অনেকেই। কেউ আবারন নিজেদের কাজ নিয়ে ততটা আত্মবিশ্বাসী নন। এসবই নজরে পড়েছে পিকে ‘স্যর’-এর। রবিবার শাসকদলের জেলা সভাপতিদের বৈঠকে তাঁদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, সব ছেড়ে এই মুহূর্তে করোনা সংক্রমণ মোকাবিলাতেই নজর দিতে হবে। কোথায় কত আক্রান্ত, কত পরীক্ষা হয়েছে, কতজন সুস্থ হচ্ছেন, হাসপাতালের অবস্থা কীরকম – সবই একেবারে নখদর্পণে থাকা চাই। কোথাও কোনও ফাঁক গলে যাতে বিরোধী আক্রমণের মুখে কাউকে না পড়তে হয়, সে বিষয়ে সাবধান করা হয়েছে সবাইকে।
এর আগে জনসংযোগে গাফিলতি বা কোথাও কোনওরকম দুর্নীতির অভিযোগের তেজ তড়িঘড়ি ফিকে করে দিতে টিম পিকের কাজের তুলনা নেই। এভাবেই তাঁর টিম কার্যত আতসকাচের নিচে রেখে প্রত্যেকের ভূমিকা খতিয়ে দেখেছে। যদিও তৃণমূল সূত্রের একাংশে খবর, প্রশান্ত কিশোরের এই ‘অতিসক্রিয়তা’য় রুষ্ট দলের অনেকেই। ফাঁকি দেওয়ার এক ফোঁটা জো নেই যে! তাতে কী? এই স্ট্র্যাটেজিতেই তো রাজনীতিবিদ প্রশান্ত কিশোর সর্বত্র ঘুরিয়ে দিয়েছেন রাজনীতির খেলা। তিনি জানেন, কাজের বিকল্প নেই, যে ভাবনা ১০০ শতাংশ মিলে যায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। তাই তাঁর কাজে অত্যন্ত খুশি তৃণমূল সুপ্রিমো। কাজেই, এই অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি আরও শক্ত হাতে মোকাবিলা করা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই নেতাদের। ‘পিকে স্যর’ সব দেখছেন যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.