ছবি: প্রতীকী
ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: বছরে গড়ে পঁচিশটি অঙ্গদান হয়। মৃতের অঙ্গে প্রাণ ফিরে পান একাধিক ব্যাক্তি। কিন্তু বছর শেষে হিরন্ময় ঘোষ (৫১) একসঙ্গে পাঁচজনকে নতুন জীবন দিয়ে গেলেন! শুক্রবার রাত থেকে শনিবার ভোর পর্যন্ত এই ঘটনার সাক্ষী হবে তিলোত্তমা। পূর্ব বর্ধমানের হাটগোবিন্দপুরের হিরন্ময়বাবু গ্রামীণ শিক্ষক। বাকি সময় মঞ্চাভিনয় করেছেন বর্ধমানের পরিচিত নাট্যদল ‘সমবেত প্রয়াস’-এ। মাত্র সাতদিন আগে তাঁর একমাত্র ছেলে নতুন চাকরি নিয়ে মহারাষ্ট্রে গিয়েছেন।
শুক্রবার সন্ধ্যায় মেডিকা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে হিরন্ময়বাবুর ভাই বিপ্লব বলছিলেন,‘‘কোনও সমস্যা ছিল না। বুধবার দুপুরে খাওয়ার পর হঠাৎ মুখ গুঁজে পড়েছিলেন। কিছুক্ষণ পর বাড়ির সবার খেয়াল হয়। প্রবল মাথার যন্ত্রণা ও খিঁচুনি নিয়ে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে উন্নত চিকিৎসার জন্য মুকুন্দপুরের মেডিকা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’’তাঁর কথায়,‘‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা সুনন্দন বসু-সহ অন্যান্য চিকিৎসকরা বুঝে যান চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে না দাদা। মস্তিস্কের ভিতরে রক্ত জমাট বেঁধেছে। অস্ত্রোপোচারও সম্ভব নয়। কিছুপরেই জানা যায় দাদার ব্রেন ডেথ হয়েছে।’’ বিপ্লব ঘোষের কথায়, এরপরেই মরণোত্তর অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নিই।
এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের রোটো অধির্কতা ডা অর্পিতা চৌধুরির কথায়,‘‘হার্ট, লিভার, ও দু’টি কিডনি পাচ্ছেন কলকাতার চার রোগী। আর তাঁর মরণোত্তর ফুসফুস চলে যাচ্ছে চেন্নাইয়ে। সেখানে এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে।’’ সংরক্ষণ করা হয়েছে মৃতের কর্ণিয়া। একজনের অঙ্গ থেকে পাঁচজনের নতুন জীবন লাভ স্মরণাতীত কালের মধ্যে হয়েছে বলে মনে করতে পারছেন না অঙ্গদান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা। কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশের উদ্যোগে চারটি গ্রিন করিডোর করে হিরন্ময়ের হৃদযন্ত্র, ফুসফুস, লিভার, দু’টি কিডনি, এবং কর্ণিয়া সংগ্রহ করে শহর ও দেশের নানা হাসপাতালে পৌঁছে যায়। পিজি হাসপাতালে দু’বার করে গ্রিন করিডোর করে আসে কিডনি ও লিভার।
মরণোত্তর শ্বাসযন্ত্রটি চেন্নাইয়ের উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সেখানকার এমজিএম হাসপাতালে এক রোগীর ফুসফুস বিকল হয়েছিল। তাঁর শরীরে হিরণ্ময়বাবুর শ্বাসযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হবে। পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ লিভার ক্যান্সার রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন হবে। শনিবার সকালের মধ্যেই লিভার প্রতিস্থাপন শেষ হওয়ার কথা। প্রতিস্থাপনের পর সবাই সুস্থ থাকবেন বলে অনুমান চিকিৎসকদের। অঙ্গ প্রতিস্থাপন সংক্রান্ত পূর্ব ভারতের নিয়ামক সংস্থা ‘রোটো’র অনুমতি সাপেক্ষে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.