ফাইল ছবি।
অর্ণব আইচ ও দিব্যেন্দু মজুমদার: শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে শান্তনু ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলকে গ্রেপ্তারির পরই উঠে এল একের পর এক ‘রহস্যময়ী’র নাম। অয়নের সল্টলেকের অফিস থেকেই এক মহিলার গাড়ি এবং ব্যাংক অ্যাকাউন্টের নথি উদ্ধার করল এনফোর্সমনেন্ট ডিরেক্টরেট (ED)। কুন্তল, শান্তনুর পর এবার অয়ন শীলেরও একাধিক সুন্দরী বান্ধবীর সন্ধান পাওয়া গেল। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকজন মডেল ও টলিউডের অভিনেত্রীও।
ইডির কাছে অয়নের দাবি, যে মহিলার নথি উদ্ধার হয়েছে, তিনি অয়নের এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তিনিও টেলি অভিনেত্রী। আবার অয়ন শীল গ্রেপ্তার হওয়ার পরই তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী নিজের হোয়াটস অ্যাপের ডিপি থেকে নিজের ছবি সরিয়ে নেন। সূত্রের খবর, অয়নের আরও এক বান্ধবী একসময় হুগলি (Hooghly) জেলার একাধিক পঞ্চায়েতে এসটিপি অর্থাৎ স্কিল টেকনিক্যাল পার্সন পদে কাজ করেছেন। এমনকী, অয়ন মুম্বইয়ে শর্ট ফিল্মও তৈরি করেছিলেন ওই মহিলাকে নিয়ে। তিনি অয়নের দুর্নীতির বহু তথ্য জানতেন বলে সন্দেহ ইডির। ওই মহিলাও এবার ইডির স্ক্যানারে।
ইডি জেনেছে, একের পর এক সম্পর্ক সামনে আসায় স্ত্রীর সঙ্গে অয়নের পারিবারিক অশান্তিও হয়। অয়নের স্ত্রী তাঁর ছেলেকে নিয়ে দিল্লি চলে যান। এর পর থেকে নিজের প্রযোজনা সংস্থার মাধ্যমেই একাধিক টেলি অভিনেত্রী ও মডেলের (Model) সঙ্গে অয়নের ঘনিষ্ঠতা হয় বলেই ইডির কাছে খবর। বান্ধবীদের সঙ্গে কখনও সল্টলেকের অফিস-বাড়ি, আবার কখনও অন্য জায়গায় বহাল তবিয়তেই থাকতেন অয়ন শীল।
শনিবার থেকে সোমবার ভোররাত পর্যন্ত সল্টলেকের (Salt Lake) এফডি ব্লকে তল্লাশি চালিয়ে অয়ন শীলের বাড়ি থেকে ইডি উদ্ধার করে ৩২টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের চেকবই ও নথি। এর মধ্যে একটি গ্রামীণ ব্যাংক, তিনটি সরকারি ব্যাংক ও বাকিগুলি দু’টি বেসরকারি ব্যাংকের (Bank)। এর মধ্যে দু’টি অ্যাকাউন্ট তাঁর স্ত্রী কাকলি ও দু’টি অয়ন ও কাকলির যৌথ অ্যাকাউন্ট। বাকিগুলি তাঁর মা, বাবা, ছেলের নামেও। কিন্তু একটি অ্যাকাউন্টে এসে চোখ আটকে যায় ইডি আধিকারিকদের। সেটি শ্বেতা চক্রবর্তী নামে এক মহিলার নামে। আবার শ্বেতা চক্রবর্তী নামে ওই মহিলার নামে কেনা গাড়ির নথিও অয়ন শীলের অফিস থেকে উদ্ধার হয়।
এছাড়াও একটি গাড়ির নথি রয়েছে স্ত্রী কাকলি শীল ও বাকি দু’টি অয়নের সংস্থা ‘এবিএস ইনফোজোন’-এর নামে। আবার ওই শ্বেতা চক্রবর্তীর নামে ‘ডিড’ও উদ্ধার হয়েছে, যেখানে তিনি কোনও জমির ক্রেতা বলেই অভিমত ইডির। ইডি আধিকারিকরা অয়নকে শ্বেতা চক্রবর্তীর এত নথি অফিসে কেন ও তাঁর পরিচয় সম্পর্কেও জিজ্ঞাসা করেন। উত্তরে অয়ন আধিকারিকদের জানান, শ্বেতা তাঁরই এক ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। তবে সল্টলেকের এফডি ব্লকের বহু বাসিন্দা জানান, ওই বাড়িতে অনেক সময়ই এক মহিলা আসতেন। ওই মহিলা যে অয়নের স্ত্রী নন, সেই ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত। তবে অয়নের পরিচিত মহলে জানা গিয়েছে, অয়ন গ্রেফতারির পর তাঁর অন্তত দু’জন বান্ধবী সোমবার অনেকের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁদের নাম কোনওভাবে ইডি জানতে পেরেছে কি না, তাও জানার চেষ্টা করেন তাঁরা।
এদিকে, হুগলি জেলার সূত্র জানিয়েছে, অয়নের যে বান্ধবী এসটিপি অর্থাৎ স্কিল টেকনিক্যাল পারসন পদে চাকুরিরত ছিলেন, তাঁর কাজ ছিল নির্মাণ সহায়ক হিসেবে নিযুক্ত ইঞ্জিনিয়ারকে সাহায্য করা। বিশেষ করে নারেগা (NREGA) প্রকল্পের যাবতীয় কাজে ইঞ্জিনিয়ারকে সহায়তা করা এসটিপি-র কাজ। অয়ন পঞ্চায়েতের এক্সিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে পঞ্চায়েতে কর্মরত ছিলেন। ওই যুবতীর সঙ্গে অয়নের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার পর থেকেই ওই যুবতীকে সব সময় অয়নের ছায়াসঙ্গী হয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়। ক্রমে ওই যুবতী দীর্ঘদিন ধরে অফিসে যেতেন না। উন্নয়নের কাজ ব্যাহত হচ্ছে বলে পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই যুবতীকে অন্যত্র বদলি করার জন্য বিডিওর কাছে আবেদন জানানো হয়। পরে ওই যুবতীকে অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়।
২০১৮-র সেপ্টেম্বরে ব্যান্ডেলের দেবানন্দপুরে বাবা-ছেলের অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে অয়নের বিরুদ্ধে। সেই সময় অয়নকে বাঁচানোর জন্য ওই যুবতী বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে ছোটাছুটি করেন। অয়নের অনেক গোপন লেনদেনের বিষয় ওই মহিলা জানতেন বলেই সন্দেহ। তাঁকে জেরা করতে পারে ইডি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.