স্টাফ রিপোর্টার: পর্বতের মূষিক প্রসব। গুড ফর নাথিং। রিপোর্ট দেখার পর উষ্মা প্রকাশ করে আক্ষরিক অর্থে সিবিআইকে ফের ভর্ৎসনা করল আলিপুর আদালত। নিয়োগ দুর্নীতির মামলার শুরুতে ভর্ৎসনা করলেও শেষের দিকে বিচারক মন্তব্য করেন, তদন্তকারী আধিকারিক নিশ্চিতভাবে ভাল কাজ করছেন। কিন্তু ‘ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর’। শুক্রবার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত তাপস মণ্ডল, কুন্তল ঘোষ (Kuntal Ghosh) ও নীলাদ্রি ঘোষকে আলিপুরে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতে তোলা হয়। অভিযুক্তদের জামিনের আবেদন করেন তাঁদের আইনজীবী। তদন্ত নিয়ে কুন্তলের আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ‘‘তবে সিবিআই কি ব্যর্থ?’’ জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করেন সিবিআইয়ের (CBI) আইনজীবী। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে অভিযুক্তদের ২৬ মে পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক।
এদিন আদালতে পেশ করার আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনজোয়ার যাত্রা প্রসঙ্গে কুন্তল ঘোষ বলেন, ‘‘ভারতে যুবরাজের যাত্রায় জনজোয়ার।’’ ফের আদালত থেকে লকআপে যাওয়ার সময় কুন্তল বলেন, ‘‘আমার উপর কেন্দ্রীয় এজেন্সির অত্যাচার ও জোর করে কথা বলিয়ে নেওয়ার জন্য আমি চিঠি লিখে যে অভিযোগ করেছি, তার ভিত্তিতে কোনও সমর্থন পাইনি। আমি বিচার চাই।’’
সম্প্রতি সিবিআই ও ইডির তদন্তে পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক নেতা সন্তু গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম উঠে এসেছে। এই ব্যাপারে তাপস মণ্ডলের দাবি, তিনি সন্তুকে চেনেন না। তাঁকে সন্তু টাকাও দেননি। তবে সন্তু কুন্তলের শাগরেদ। যদিও কুন্তলের দাবি, রাজনীতি করার সূত্রেই তিনি সন্তুকে চিনতেন। সন্তুর সঙ্গে তাঁর টাকার লেনদেন হয়নি। কুন্তলের প্রসঙ্গে তাপস মণ্ডল মন্তব্য করেন, ‘‘চার্লস শোভরাজ ছিলেন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতারক। আমি মনে করি, তারপর সবচেয়ে বড় দ্বিতীয় প্রতারক কুন্তল ঘোষ। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে টাকা তুলতেন কুন্তল। এখন তিনি নাটক করছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সির চাপের কথা যুক্তিহীন।’’
সম্প্রতি কলকাতা ও তার উপকণ্ঠে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের চার ঘনিষ্ঠ-সহ সাতজনের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি চালায়। এদিন সেই তল্লাশির রিপোর্ট সিবিআই আদালতে পেশ করলে তা দেখার পর বিচারক সিবিআইয়ের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে মন্তব্য করেন, ‘‘বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, পর্বতের মূষিক প্রসব। কিছুই পাওয়া যায়নি। গুড ফর নাথিং।’’ একটি মোবাইল উদ্ধার ঘিরেও মন্তব্য করেন তিনি। তাপস মণ্ডলের আইনজীবী বলেন, ৮৪ দিন হয়ে গেল, তাপস যে টাকা নিয়েছেন, তা কোনও সরকারি কর্মীকে দিয়েছেন কি না, সিবিআই তা দেখাতে পারছে না। অথচ আর কয়েকদিন বাদেই সিবিআই চার্জশিট দাখিল করবে।
বিচারক সিবিআইকে প্রশ্ন করেন, সরকারি কর্মী কোথায়? সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, সরকারি কর্মীর সন্ধান ও দুর্নীতিতে সরাসরি যোগের তথ্য মিললেও সুপ্রিম কোর্টের রক্ষাকবচ আছে। বিচারক বলেন, তাঁকে জেলে গিয়েও জেরা করা হয়নি। নীলাদ্রি, তাপস ও কুন্তলের মধ্যে টাকা লেনদেনের যোগের সন্ধান মিললেও তাঁদের উপরে ও নিচে কারা রয়েছেন, কারা টাকা দিয়েছেন ও কাদের কাছে টাকা গিয়েছে, সেই তথ্য কোথায়? নীলাদ্রি ঘোষের আইনজীবী জানান, এখনও সিবিআই বলছে আর্থিক লেনদেন খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নীলাদ্রি টাকা তুলেছেন, তার প্রমাণ কোথায়? নীলাদ্রিকে অভিযুক্ত করতে হলে তাপস বা কুন্তলকে রাজসাক্ষী করতে হবে সিবিআইকে। কুন্তল ঘোষের আইনজীবী জানান, কুন্তলের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক দলের কর্মী।
তাপস টাকা তুলে কুন্তলকে দিলেও কুন্তল প্রাথমিক পর্ষদের কেউ নন। তাহলে প্যানেলে থেকে যিনি টাকা নিয়েছেন, সেই আধিকারিক কোথায়? এত বড় দুর্নীতি, তবে সিবিআই কি ব্যর্থ? সিবিআই বিচারকের নির্দেশনামাও দেখে না। সিবিআইয়ের আইনজীবী জানান, কোনও উপায় না থাকলে সিবিআই রাজসাক্ষী বানায়। কিন্তু এখানে তার প্রয়োজন নেই। সরকারি কর্মীদের যোগ নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। চেইনে আরও লোকের নাম আসছে। বিচারক বলেন, অভিযুক্তদের উপরে ও নিচে যাঁরা আছেন, তাঁদের নিয়ে আসুন। মামলা আরও অনেককে চায়। সিবিআইয়ের দাবি, কিছু টেকনিক্যাল অসুবিধা রয়েছে। এখন তদন্ত যেখানে আছে, সেখানে কে কাকে টাকা দিয়েছে, তা দেখা হচ্ছে।
তাপস টাকা তোলার ক্ষেত্রে তাঁর পরিবারের লোক ও সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন। বিচারক বলেন, তদন্তকারী আধিকারিক প্রচুর তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তা নিঃসন্দেহে ভাল। কিন্তু অভিযুক্তদের সামনে আনুন। সিবিআইয়ের আইনজীবী বলেন, অনেকের বয়ান নেওয়া হয়েছে। বিচারকের প্রশ্ন, ”কিন্তু বয়ানের সপক্ষে কী রয়েছে? তদন্তকারী আধিকারিক নিশ্চিতভাবে ভাল কাজ করছেন। কিন্তু ইয়ে দিল মাঙ্গে মোর।”
এদিন কুন্তলের স্ত্রী জয়শ্রী ঘোষ আক্ষেপ করেন, তিনি কলকাতায় বাড়ি ভাড়া পাচ্ছেন না। এমনকী, হাওড়ায় আগাম টাকা দেওয়ার পরও তাঁকে বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়নি। সাড়ে তিন ঘণ্টা পথ পেরিয়ে তাঁকে কলকাতায় স্বামীর সঙ্গে দেখা করতে আসতে হচ্ছে। এতে তাঁর দুই সন্তানও সমস্যায় পড়ছে বলে জানান জয়শ্রী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.