স্টাফ রিপোর্টার: সিঙ্গুর থেকে বিদায় নেওয়া টাটাগোষ্ঠীর তিন কোম্পানি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের প্রতি আস্থা রেখে গত দশ বছরে বাংলায় কয়েক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। কর্মসংস্থান হয়েছে লক্ষাধিক বেকারের। শিল্প দপ্তরের বাজেট বিতর্কে বিরোধী বিজেপি বিধায়কদের সিঙ্গুর নিয়ে খোঁচার জবাবে পালটা তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে শনিবার বিধানসভায় এমনই দাবি করলেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী ডাঃ শশী পাঁজা।
শিল্পবাজেটের বিতর্কে বিজেপি বিধায়কদের অভিযোগ, তৃণমূলের (TMC) ভূমিকার জন্যই সিঙ্গুর থেকে টাটা গোষ্ঠী রাজ্য ছেড়ে চলে গিয়েছে, আর তারপর থেকেই বাংলায় বিনিয়োগে বিমুখ দেশের নামী শিল্পগোষ্ঠী। স্বভাবতই এমন অভিযোগের পর জবাব দিতে উঠে শিল্পমন্ত্রী ডাঃ পাঁজা বলেন, ‘‘টাটা হিতাচি, টাটা মেটালিক্স ও টিসিএস- টাটা (TATA) গোষ্ঠীর এই তিন নামী কোম্পানি গত দশ বছরে বিপুল বিনিয়োগ করেছে। লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হয়েছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সরকারের ভূমিকায় খুশি হয়ে আস্থা রেখেই বাংলায় বিনিয়োগ করেছে টাটা-সহ বহু শিল্পগোষ্ঠী। উলটোদিকে সিঙ্গুর থেকে গুজরাটের সানন্দে চলে গিয়েও সেখানে আর ন্যানো তৈরি করে না টাটারা। দু’চাকার গাড়ি উৎপাদন হয়। বিরোধীরা প্রকৃত তথ্য চেপে গিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন। ওঁরা রাজ্য নিয়ে নেগেটিভ তথ্য দিচ্ছেন, ভুয়ো খবর প্রচার করছেন।’’
এর পরই বিজেপি বিধায়কদের পালটা আক্রমণে গিয়ে শিল্পমন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর (PM Modi) ঘনিষ্ঠ দুই শিল্পপতি বিজয় মালিয়া ও নীরব মোদি কীভাবে তাঁর চোখের আড়ালে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন? এই প্রশ্নের উত্তর কে দেবে?’’ একাধিক ব্যাংককে কার্যত নিঃস্ব করে পালিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ দুই শিল্পপতির ‘ব্যাংক লুঠ’ করার তথ্য তুলে অধিবেশনে বিজেপিকে কোণঠাসা করার পাশাপাশি কেন্দ্রকে ‘বেচে দে সরকার’ বলেও কটাক্ষ করেছেন ডাঃ শশী পাঁজা। জর্জ সোরেসের উদ্ধৃতি দিয়েও সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণ করেন শিল্পমন্ত্রী। কেন্দ্রের মদতে বিজেপি ঘনিষ্ঠ শিল্পপতিদের ঋণ দিয়ে সংকটে থাকা দুই সংস্থা নিয়ে বিরোধীদের উদ্দেশে জানতে চান, ‘‘এসবিআই ও জীবন বিমায় গচ্ছিত মধ্যবিত্তের সমস্ত আমানত কি নিরাপদ?’’
রাজ্য যে পরিকাঠামো ও ‘ল্যান্ড-ব্যাংক’ তৈরি করেছে, তার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বাংলায় বিনিয়োগের ক্ষেত্র যে প্রস্তুত, তা বারে বারে বুঝিয়ে দেন শিল্পমন্ত্রী। গত ১১ বছরে বাংলায় শ্রমিকের জঙ্গি আন্দোলন যেমন উধাও তেমনই ধর্মঘট শব্দটাই উঠে গিয়েছে রাজ্য সরকারের নয়া শিল্পায়ন নীতিতে। কেন্দ্রীয় সরকারের ফ্রেট করিডর তৈরির জন্য যে ডানকুনি-লুধিয়ানা রুট নির্বাচিত করেছে তার জমি ইতিমধ্যে রাজ্য দিল্লিকে দিয়ে দিয়েছে। এখন তৈরির দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের। বাংলায় গত ১১ বছরে নতুন ১৫ হাজার কিলোমিটারের বেশি রাস্তা হয়েছে। সিঙ্গুরের জমি নিয়ে বিজেপির অম্বিকা রায়, শিখা চট্টোপাধ্যায় ও শংকর ঘোষরা রাজ্যকে আক্রমণ করেন।
শিল্পমন্ত্রী স্পষ্ট জানান, ‘‘বিরোধী দলনেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী, দুই সময়েই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নীতি একই, জোর করে জমি নেওয়া হবে না। শিল্প করতে হলে প্রয়োজনে বিনিয়োগকারীরা জমি কিনে নেবেন। নয়তো অকৃষি জমি নিয়ে রাজ্য়ের যে ল্যান্ড-ব্যাংক আছে সেখান থেকেও নিতে পারেন। তবে জমি নিয়ে ফেলে রাখা যাবে না। ৩,৫৭৪ জন অনিচ্ছুক কৃষককে মুখ্যমন্ত্রী ২০১১ সাল থেকে যে মাসিক দু’হাজার টাকা করে ভাতা দেন, তা এখনও চলছে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.