ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: যে প্রতীক পাবেন জেনে প্রচারে নেমেছিলেন, সেটা পাননি। তৃণমূল তাদের জোড়া ফুল প্রতীক দিয়ে দিয়েছে প্রাক্তন ওয়ার্ড কো-অর্ডিনেটর সুদর্শনা মুখোপাধ্যায়কে। কিন্তু ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের নানা দেওয়ালে ততদিনে নিজের প্রচারে তৃণমূলের জোড়া ফুলের প্রতীক এঁকে ফেলেছিলেন প্রয়াত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বোন তনিমা চট্টোপাধ্যায়। সেই প্রতীক মুছে জোড়া পাতা চিহ্ন নিয়ে ভোটে লড়ছেন তনিমাদেবী। সঙ্গে নতুন পোস্টার। তাতে লেখা ‘সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের নিজের বোন’। নিজের বোন কেন?
তনিমাদেবীর সটান জবাব, “যাতে আমায় কেউ সুব্রতবাবুর খুড়তুতো বা জেঠতুতো বোন না ভাবে। ভোটারদের প্রত্যেকে তো আর জানেন না যে, আমি সুব্রতবাবুর নিজের বোন।” কিন্তু আর কি কোনও কারণ নেই? “না, আবার কী কারণ হবে? এটাই খুব স্পষ্ট কারণ।”– বলছেন ৬৮-র নির্দল প্রার্থী।
তৃণমূলের নিষেধ অমান্য করে প্রার্থী হওয়ায় ইতিমধ্যে তনিমাদেবীকে বহিষ্কার করেছে দল। তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে শেষ মুহূর্তে মনোনয়ন দিয়ে মাঠে নেমে পড়েন সুর্দশনা। টানা প্রচার চালাচ্ছেন তিনিও। তনিমাদেবীর পোস্টার কি চোখে পড়েছে? প্রশ্ন শুনে স্রেফ হাসলেন। সঙ্গে জবাব, “নো কমেন্ট।” পরে জুড়লেন, “বালিগঞ্জ বর্ধিষ্ণু এলাকা। মানুষ সব বোঝেন। এখানে কাউকে কিছু বোঝাতে হবে না।” সুব্রতবাবু আর সুর্দশনার পদবী এক। তাঁকে অনেকে তাই প্রয়াত মন্ত্রীর বোন বলে ভুল করতেন। সেই ভুল ভাঙাতেই কি তনিমাদেবী নিজেকে সুব্রতবাবুর ‘নিজের বোন’ বলে ধরিয়ে দিতে চেয়েছেন? অন্য আর কোনও জবাব তনিমাদেবী দেননি। এলাকায় দলীয় রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত অনেকে আবার ঘুরিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই ভুল নিয়েই। অনেকেই বলেছেন, ‘সেই ভুল’ তো প্রচারও করা হয়েছে। কে বা কারা সেটা করেছেন? তার জবাব মেলেনি।
সুদর্শনার কী বক্তব্য? সাংবাদিকতার জগৎ থেকে রাজনীতিতে এসেছেন তিনি। সে কথা মনে করিয়ে আরও স্পষ্ট করে সুর্দশনা বললেন, “এ নিয়ে আমি কিছুই বলব না। তবে আবারও বলছি, মানুষ সব বোঝেন। আমি কাজ করেছি। কোভিডে মানুষের পাশে থেকেছি। মানুষ বাকিটা বুঝে নেবে।” এ হেন প্রার্থীকেই দলের প্রতীক দিয়েছে তৃণমূল। অতঃকিম! তনিমাদেবী তাই নিজের নির্দল প্রতীক হিসাবে পছন্দ করেছেন জোড়া পাতা।
একেবারে শেষ দিনে, শেষ মুহূর্তে প্রার্থীপদ জমা দিতে যাওয়ার সময় জোড়া পাতা, সূর্য আর নারকেল গাছ এই তিনটির যে কোনও একটি বিকল্প প্রতীক হিসাবে উল্লেখ করে মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তিনটি বিকল্পই ছিল নির্বাচন কমিশনের তালিকা থেকে। তার মধ্যে জোড়া পাতাকেই প্রথম পছন্দ হিসাবে রেখেছিলেন। কমিশনের নিয়ম বলছে, প্রত্যেকবার নির্দল প্রার্থীদের জন্য নতুন করে কিছু প্রতীকের আমদানি হয়। সেসবের মধ্যে থেকেই প্রার্থীদের প্রতীক দিয়ে দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে নজরে রাখা হয় একজন প্রার্থীর প্রতীক যেন আরেকজন না পেয়ে যান। আবার একই ওয়ার্ডে দু’জন নির্দল প্রার্থী থাকলে তাঁরা দু’জনে একই প্রতীক চাইলে প্রথম মনোনয়ন জমা দেওয়া নির্দল প্রার্থী সেই প্রতীকে অগ্রাধিকার পান। তনিমাদেবীর ক্ষেত্রেও সেসব দেখে নেওয়া হয়েছে।
কিন্তু জোড়া পাতাই পছন্দ হল কেন তনিমাদেবীর? জোড়া ফুল না পেয়েই কি জোড়া পাতার দিকে ঝুঁকেছিলেন? এবার হাসতে হাসতে তনিমাদেবীর জবাব, “একেবারেই না। ওটা অঁাকা সোজা তাই প্রথম পছন্দ বলে জানিয়েছিলাম। আর কেউ ওটা নেয়নি বলে কমিশন আমায় সেটা দিয়ে দিল।” তৃণমূলের জোড়া ফুলের প্রতীক না মিললেও আরও একাধিক দেওয়ালের মতো একডালিয়া এভারগ্রিনের দেওয়ালে এখনও আবছা লেগে রয়েছে সে প্রতীক। দিনের আলোয় তা স্পষ্ট বোঝাও যাচ্ছে। তার কী হবে? “কী আর হবে। যতটা মোছা যায় প্রতীকটা মুছে দেওয়া হয়েছে। নতুন প্রতীক পেয়ে সেটা দিয়ে নতুন পোস্টার টাঙিয়ে দিয়েছি।”– জানাচ্ছেন ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.