Advertisement
Advertisement

Breaking News

Tangra Case

বয়ানে অমিল, ট্যাংরা কাণ্ডের জট খুলতে প্রণয়-প্রসূনকে জেরার ভাবনা পুলিশের

প্রমাণ লুকোতে বহুতলে থাকা ২২টি সিসি ক্যামেরার তারের সংযোগ কেটে দেওয়া হয়।

Tangra Case: Police to interrogates Pranay and Prasun Dey
Published by: Sayani Sen
  • Posted:February 22, 2025 10:17 am
  • Updated:February 22, 2025 10:24 am  

অর্ণব আইচ: পরিবারের সদস্যরা মিলে ‘আত্মহত্যার পরিকল্পনা’। কিন্তু পারিপার্শ্বিক তথ্য ও প্রমাণ দেখে হতবাক পুলিশ আধিকারিকরা। অভাবের তাড়নায় পরিবারের একসঙ্গে মিলে আত্মহত্যার পরিকল্পনা করলে ব্যাপারটা এমনটা হয় না। বরং তথ্য ও প্রমাণ লোপাটের বহর দেখে ট্যাংরার অতুল সুর লেনে বাড়ির দুই বধূ ও কিশোরী মেয়েকে যে বেশ কয়েকদিন ধরে নিখুঁত ছক কষে খুন করা হয়েছে, সেই ব্যাপারেই অনেকটা নিশ্চিত পুলিশ আধিকারিকরা। একসঙ্গে আত্মহত্যার ছক, অথচ কোথাও কোনও সুইসাইড নোটের চিহ্ন নেই। বাড়িতে ছিল ২২টি সিসিটিভি। কিন্তু প্রত্যেকটির তারের সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়, যাতে কোনও প্রমাণ না থাকে। ঘটনা ঘটানো হয়েছে অন্ধকারে। কারণ, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে জ্বালানো হয়নি বাড়ির আলো। সকাল থেকে বন্ধ করে রাখা হয় বাড়ির প্রত্যেকের মোবাইল।

একের পর এক অসঙ্গতি দেখেই পুলিশের সন্দেহ হয়। পরিবারের তিনজনকে খুনে পুলিশের সন্দেহের তির পরিবারের ছোট ছেলে প্রসূন দে-র দিকে। যদিও বড় ছেলে প্রণয় দে-কেও সন্দেহের আওতা থেকে বাদ দিচ্ছে না পুলিশ। তার মূল কারণ হাসপাতালে শুয়ে প্রণয় ও প্রসূনদের অসঙ্গতিপূর্ণ বয়ান। সূত্রের ইঙ্গিত, রহস্যভেদের জন্য শনিবারই প্রণয় ও তারপর প্রসূনকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে পুলিশ। হোমে পাঠানো হতে পারে বালক প্রতীককে। এমনকী, বাড়ির সবাইকে বিষ পায়েস খাওয়ানোর পরও প্রণয় বা প্রসূন আদৌ নিজেরা খেয়েছিলেন কি না, তা নিয়েই সৃষ্টি হয়েছে বিভ্রান্তি। মেয়ে ও স্ত্রীদের হত্যার পর তাঁরা কোথাও পালানোর চেষ্টা করছিলেন কি না, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। এমনকী, মেয়ে ও স্ত্রীদের খুনের পর যখন ট্যাংরার বাড়ি থেকে গাড়ি করে বেরনোর সময়ও বড় ছেলে প্রণয়ের হাতে যে বোতলটি ছিল বলে সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়েছে, সেটি । মদের বোতল বলে পুলিশের সন্দেহ।

Advertisement

বাইপাসে মেট্রোর পিলারে ধাক্কা দেওয়ার আগে চলন্ত গাড়িতে দুই ভাই মদ্যপান করেন, এমন সন্দেহ পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। তার আগে হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় একটি ভারী ট্রাকের পিছনে ধাক্কা দিয়েও তাঁরা আত্মহত্যার ছক কষেছিলেন বলে প্রণয়-প্রসূনের দাবি। কিশোরী মেয়ে ও দুই স্ত্রীকে খুনের ব্যাপারে আরও তথ্য পেতে শুক্রবার ট্যাংরা থানা ও লালবাজারের গোয়েন্দাদের টিম যৌথভাবে বাইপাসের কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালে যায়। দুর্ঘটনা ঘটানোর পর আহত হয়ে ওই হাসপাতালেই ভর্তি রয়েছেন প্রণয়, প্রসূন ও প্রণয়ের ১২ বছরের ছেলে প্রতীপ। দুই ভাইকে পুলিশ জেরা করে। এদিন যে চিকিৎসকরা তিনজনের ময়নাতদন্ত করেছিলেন তাঁরা ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে গিয়ে মেডিসিন ফরেনসিক পরীক্ষা করেন।

এদিকে, হাসপাতালের আইসিইউতে দুই ভাইকে জেরা করতে গিয়েও ধন্দে পড়ে যান পুলিশ আধিকারিকরা। কারণ, দুই ভাইয়ের বক্তব্যের মধ্যে রয়েছে প্রচুর অসঙ্গতি। ঘন ঘন বয়ান পাল্টাতে থাকেন প্রসূন ও প্রণয়। প্রসুন একবার পুলিশকে জানান, তাঁর দাদা তাঁর স্ত্রী ও কিশোরী মেয়েকে খুন করেছেন। আবার প্রণয় পুলিশ আধিকারিকদের বলেন, তাঁর স্ত্রীকে খুন করেছেন ভাই প্রসূন। আবার কখনও বা প্রসূন বক্তব্য পালটে বলেন, তিনিই খুন করেছেন সবাইকে। সেই ক্ষেত্রে প্রণয় ও প্রসূন যে যাঁর স্ত্রীকে খুন করেছেন, এমন সম্ভাবনা পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না। আবার কিশোরী মেয়ে প্রিয়ংবদাকে কে ঘুমের ওষুধ মেশানো পায়েস খাইয়ে খুন করেছেন, তা নিয়েও দুই ভাইয়ের বক্তব্যের মধ্যে বিস্তর অসঙ্গতি।

আবার প্রসূন তাঁর দাদা প্রণয় ও ছেলে প্রতীপের হাতে ছুরি দিয়ে আঘাত করে তাঁদেরও খুনের চেষ্টা করেন ও সেই কারণে তিনতলার মেঝে ও দেওয়ালে রক্তের ছাপ রয়েছে, এমনই অভিমত পুলিশের। এই ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পুলিশ প্রণয় ও প্রতীপের আঘাতের ফরেনসিক পরীক্ষা করিয়েছে। কিন্তু ছোট ভাই প্রসূন দে-র হাতে কোনও কাটার আঘাত না থাকায় সৃষ্টি হয়েছে আরও ধন্দ। পুলিশের প্রশ্ন, তবে কি সবাইকে খুন ও খুনের চেষ্টা করার পরও প্রসূন আত্মহত্যার চেষ্টা করেননি? এর পিছনে কি প্রসূন, এমনকী, প্রণয়েরও কোনও পালিয়ে যাওয়ার কারণ ছিল? এদিন এই ধরনের প্রশ্ন করার সময় বিরক্তি প্রকাশ করেন দুজন। তাঁদের বক্তব্য ভিডিওগ্রাফি করে রাখা হয়।

দুই ভাইয়ের বক্তব্য, গত সোমবার তাঁরা পরিবারের সবাই আত্মহত্যা করার জন্য একসঙ্গে ‘বিষ পায়েস’ খেয়েছিলেন। কিন্তু এখানেই খটকা লেগেছে পুলিশের। পুলিশের প্রশ্ন, যেখানে ঘুমের ওষুধ মেশানো একই পায়েস খেয়ে কিশোরী কন্যার মৃত্যু হল, খুনের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত কখনও প্রায় অচেতন, কখনও বা ঘুমের ঘোরে থাকলেন দুই স্ত্রী সুদেষ্ণা দে ও রোমি দে, অসুস্থ বোধ করল প্রণয়-সুদেষ্ণার ১২ বছরের ছেলে, সেখানে দুই ভাই প্রণয় দে ও প্রসূন দে-র কিছুই হল না কেন? সেই ক্ষেত্রে তাঁরা দুজন পরিকল্পনা করে, স্ত্রীদের দেখিয়ে এতটাই অল্প পরিমাণ পায়েস খান, যে পরের দিন তাঁরা ঘুম থেকে উঠে দেখেন যে, প্রসূনের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। দোতলার ঘরে প্রসূনের পরিবার ও তিনতলায় প্রণয়ের পরিবার থাকত।

সেখানে কেন দোতলার ঘরে বড় ছেলের স্ত্রী সুদেষ্ণা ঘুমিয়ে পড়লেন, তা নিয়ে হয়েছে প্রশ্ন। পুলিশের এমনও ধারণা যে, দুই ভাই মিলে পরিকল্পনা করে দুই স্ত্রীকে খুন করলেও নিজেরা অসুস্থ হননি। এমনকী, গভীর রাতে ছেলেকে নিয়ে বেরনোর পর গাড়িতে মদ্যপানও করেন। পুলিশের কাছে দুই ভাইয়েরই বক্তব্য, তাঁরা রাতে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে সল্টলেকে গিয়ে প্রথমে তেল ভরেন। এরপর বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে, কোনা হাইওয়েতে গিয়ে উলুবেড়িয়ায় ট্রাকের পিছনে ধাক্কা দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু এতে ট্রাক চালকের সমস্যা হতে পারে বলে করেননি বলে তাঁদের দাবি। তবে বাইপাসে পিলারে ধাক্কা দেওয়ার আগে প্রণয় ও প্রসূন মদ্যপান করেন বলে ধারণা পুলিশের। সেই ক্ষেত্রে তাঁদের বিরুদ্ধে মদ্যপান করে গাড়ি চালানোর অভিযোগ দায়ের করা হতে পারে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
News Hub