অর্ণব আইচ: ট্যাংরায় পুত্রবধূকে বাঁচাতে গিয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের ধাক্কায় শ্বশুরের মৃত্যুর ঘটনায় উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য। পুত্রবধূর বয়ানে একাধিক অসংগতি খুঁজে পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। এদিকে, প্রৌঢ়ের মৃত্যুকালীন জবানবন্দি শুনে পুলিশ দৃঢ় ধারণা, ঘটনা হিট অ্যান্ড রান। কিন্তু অভিযোগকারী মহিলার পালটা অভিযোগ, ঘুষের বিনিময়ে অপহরণের অভিযোগ চাপা দিতে গিয়েই পুলিশ তা অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে। তাঁকে সমর্থন জানিয়ে পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভে রাস্তা অবরোধ করলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। ঘেরাও করা হল ট্যাংরা থানা। রাস্তায় ড্রাম ফেলে বিক্ষোভে মহিলারা।
ঘটনা খানিকটা এরকম – মঙ্গলবার রাতে বিয়েবাড়ি থেকে ফেরার পথে ট্যাংরার গোবিন্দ খটিক রোডে একটি অ্যাম্বুল্যান্স এক মহিলাকে অপহরণের চেষ্টা করে বলে অভিযোগ। তাতে বাধা দিতে যান মহিলার শ্বশুর গোপাল প্রামাণিক। তাতে অ্যাম্বুল্যান্স চালক তাঁকে ধাক্কা দিয়ে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে বেশ খানিকটা দূরে নিয়ে গিয়ে ফেলে। প্রৌঢ় গোপালবাবুর পা ভেঙে যায়। পরে হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় মৃত্যু হয় তাঁর। কিন্তু মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে তিনি পুত্রবধূকে অপহরণের চেষ্টা হয়েছে বলে কিছু জানাননি। পুত্রবধূকে জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু অসংগতি ধরা পড়ে বলে পুলিশ সূত্রে খবর।
মৃত গোপাল প্রামাণিক তাঁর মৃত্যুকালীন বক্তব্যে চিকিৎসককে জানান, রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ তিনি সপরিবারে গোবিন্দ খটিক রোডের উপর একটি স্কুলে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যান। উত্তর থেকে দক্ষিণের দিকে একটি সাদা রঙের গাড়ি তাঁকে ধাক্কা দিয়ে হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে নিয়ে যায়। তাঁর পা ভেঙে যায়। পুলিশ যেন চালকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়, এই আরজিও তিনি জানান। পুলিশের দাবি, হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে গোপালবাবু পুত্রবধূকে অপহরণের চেষ্টার কথা উল্লেখ করেননি।
পুত্রবধূকে জিজ্ঞাবাসাদের পাশাপাশি পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে তদন্তে নামে। তার সূত্র ধরেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিষ্ণুপুর থেকে গ্রেপ্তার হয় অ্যাম্বুল্যান্স চালক শেখ আবদুর রহমান ও তার সহযোগী তাজউদ্দিন। পুলিশের দাবি, গাড়ির গতিবিধি অপহরণের মতো নয়। বরং দ্রুত গতির জেরেই এমন একটি দুর্ঘটনা। যার জন্য একে ‘হিট অ্যান্ড রান’ বলে চিহ্নিত করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।
এখানেই গোল বেঁধেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে। মহিলা বারবারই অভিযোগ করেছেন যে তাঁকে অপহরণের চেষ্টা হয়েছিল অ্যাম্বুল্যান্সের চালক। কিন্তু পুলিশ তাকে আড়াল করে ‘হিট অ্যান্ড রান’-এর তত্ব সামনে আনছে। এর প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা থানা ঘেরাও, রাস্তা অবরোধ করে সকাল থেকে বিক্ষোভ দেখান।
ছবি: অরিজিৎ সাহা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.