রমেন দাস: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যুতে উঠে এসেছে একাধিক প্রশ্ন। র্যাগিং থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসিটিভি, শৃঙ্খলারক্ষা এবং হস্টেল রহস্য! সবক্ষেত্রেই প্রত্যক্ষ-পরোক্ষে অভিযোগের আঙুল উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। বাদ যাননি ‘ডিন অফ স্টুডেন্টস্’ রজত রায়ও। বুধবার রাতে ঠিক কী জানতে পেরেছিলেন তিনি? কেন ছাত্রমৃত্যুতে বারবার উঠে আসছে তাঁর কথা? কেন গাফিলতির অভিযোগে বিদ্ধ হচ্ছেন শুধু তিনিই? অবশেষে সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এ প্রথম মুখ খুললেন রজত রায়। তিনি যা বললেন-
”সেদিন (বুধবার) রাতে আমি একটি ফোন পাই। রাত ১০টা ৫ নাগাদ। আমি ওই ছাত্রকে বলি (যে ফোন করেন) আমাকে জানিয়েছ ঠিকাছে, তুমি হস্টেল সুপারকেও বলো। আমি নিজেই ১০টা ৮ নাগাদ হস্টেল সুপারের সঙ্গে কথা বলি। তিনি তেমন কিছু জানাননি এরপর। এমনকী আমাকে আর কল করা হয়নি। এরপর আমি যখন শুনলাম। এই ঘটনা ঘটেছে। সঙ্গে সঙ্গে নিজে গাড়ি চালিয়ে হাসপাতালে পৌঁছয় ওই রাতেই। একটুও দেরি করিনি। নিজেই গাড়ি চালিয়ে গিয়েছি।
ওই ছাত্রের মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। এর জন্য সত্যিই আক্ষেপ হচ্ছে। আমি অনুতপ্ত। কিন্তু এর জন্য গাফিলতির দায় আমার উপরেই ঠেলে কেন দেওয়া হবে? সেই সময় হস্টেল সুপার কী করছিলেন? তিনি কেন স্পট ভিজিট করলেন না? তিনি যদি স্পট ভিজিট করে আমাকে জানাতেন তাহলে তো আমি তখনই যেতে পারতাম ওখানে! কিছু বলা হয়নি আমাকে।
কিন্তু আমাকে সবকিছুর দায় দেওয়া হচ্ছে! আমার ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা চলছে। সব দায় আমার? কর্তৃপক্ষ, অ্যান্টি-র্যাগিং কমিটি তো রয়েছে। বারবার এসব নিয়ে প্রচার চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে। তারা ব্যবস্থা নেয় সবক্ষেত্রেই! কিন্তু সবকিছুতে আমাকেই দোষী করা হচ্ছে কেন এখন! বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসিটিভি নেই, কেন নেই? প্রশ্ন তুলবেন না? এটাও আমার দোষ!
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার নয়। আমার অধীনে তো সবটা নয়, নিরাপত্তারক্ষীরা দেখেন। আরও নানা ব্যবস্থা রয়েছে। তাঁদের নিয়ন্ত্রণ থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার, সহ-উপাচার্যের উপর। কিন্তু আমি বলছি, যতবার আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা নিয়ে কিছু পদক্ষেপ করতে গিয়েছি, কিছু বলেছি, বারবার সমস্যার মুখোমুখি হয়েছি। যখনই কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ভেবেছি, আমাকে ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। নানা ইস্যুতে আমার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখানো হয়েছে। সম্প্রতি, সল্টলেক ক্যাম্পাসে গিয়েও এই অবস্থার শিকার হয়েছি।
কিন্তু এই ঘটনার (স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর মৃত্যু) আসল কারণ জানি না। বিচারাধীন বিষয়। তবে বলব, র্যাগিং অন্যায়। যারা করছে তারা তো বটেই, যারা অপরাধীদের সাহায্য করে তারাও অপরাধী বলে আমি মনে করি। আমি হস্টেল থেকে আগেও ছোটখাটো একাধিক অভিযোগ পেয়েছি, সেগুলো র্যাগিংয়ের নয়। অনেকবার ফোন এসেছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনও কোনও সময় আমার বিরুদ্ধেই একাংশ সরব হয়েছেন। আমাকে বিপর্যস্ত করার চেষ্টা হয়েছে। আমি একাধিকবার এরকম ফোন পাই। হস্টেলে গন্ডগোল হচ্ছে। মিটিয়ে নেওয়া হয়। কিন্তু র্যাগিং বা এই জাতীয় কোনও ঘটনার ব্যবস্থার ক্ষেত্রে, নানা ইস্যুতে সমস্যার মুখোমুখিও হয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আমাকে সরিয়ে দেওয়া বা কোনও ব্যবস্থার কথা কেউ কিছু বলেননি এখনও। আমার স্ত্রী অসুস্থ। আমি নিজেও বিপর্যস্ত। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠছে! একবারও কেউ দেখছেন না, আমি কীসের দায়িত্বে ছিলাম! সব দায় তো আমার নয়!”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.