কৃষ্ণকুমার দাস: তৃণমূলের (TMC) সঙ্গে পাকাপাকিভাবে সম্পর্কছেদের প্রক্রিয়া আরও ত্বরান্বিত করলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikary)। মন্ত্রিত্ব থেকে ইস্তফা দেওয়ার সপ্তাহ দুয়েক পর বুধবার বিধায়ক পদও ছাড়লেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক। এদিন দুপুরে কাঁথির বাড়ি থেকে কলকাতা আসেন তিনি। সেই সময় বিধানসভায় অধ্যক্ষ না থাকায় সচিবের ঘরে গিয়ে ইস্তফাপত্র জমা দেন তিনি। যার জেরে একুশের নির্বাচনের আগেই জনপ্রতিনিধিশূন্য নন্দীগ্রাম। তবে তাঁর ইস্তফাপত্র গৃহীত হয়নি। কারণ সংবিধান অনুযায়ী, সচিবের কাছে ইস্তফাপত্র দিতে তা গৃহীত হয় না। স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সচিবকে দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীর ইস্তফা গৃহীত হবে না।” যদিও অধ্যক্ষকে ই-মেল মারফৎ পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন শুভেন্দু। ফলে ইস্তফাপত্র জমা দেওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে জটিলতা।
বিধায়ক হিসেবে শুভেন্দুর যাত্রা শুরু ২০০৬ সালে। সে বছর তিনি কাঁথি দক্ষিণ থেকে বিধায়ক নির্বাচিত হন। ঠিক পরের বছর থেকে অর্থাৎ ২০০৭ সাল থেকে নন্দীগ্রামে কৃষিজমিতে শিল্পস্থাপন নিয়ে তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরোধিতায় আন্দোলনে নামেন তিনি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কৃষকদের পক্ষে লড়াই করেছেন মেদিনীপুরের ভূমিপুত্র। এরপর ২০০৯ এবং ২০১৪ সালে পরপর দু’বার শুভেন্দু তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ হয়েছিলেন। ২০১৬ সালে নন্দীগ্রাম বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপরই সাংসদ পদে ইস্তফা দিয়ে নন্দীগ্রামের বিধায়ক হন এবং রাজ্যের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পান। কিন্তু সম্প্রতি একাধিক কারণে দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছিল। নভেম্বরের ২৭ তারিখ মন্ত্রিত্ব ছাড়েন শুভেন্দু অধিকারী। তার আগেই ছেড়ে দিয়েছিলেন HRBC’র চেয়ারম্যান পদ, হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদ এবং সমবায় ব্যাংকের দায়িত্ব। তবে বিধায়ক পদ থেকে ইস্তফা দেননি।
আর তার উপর ভিত্তি করেই দল তাঁর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিল। শুভেন্দু অধিকারীর মন্ত্রী পদ থেকে সরে যাওয়ার পরও একবার সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে প্রশান্ত কিশোর এবং দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়ের সঙ্গে তাঁর দীর্ঘ বৈঠক হয়। সেই বৈঠকের পরও সৌগত রায় আশাপ্রকাশ করেছিলেন যে সমস্যা মিটে যাবে। দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকের কথা কেন তিনি প্রকাশ্যে এনেছেন, তা নিয়ে সৌগতর প্রতি তীব্র ক্ষোভ উগড়ে দেন শুভেন্দু। এসএমএস করে স্পষ্ট জানান, ”এভাবে একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।”
এরপর সৌগত রায়ও স্পষ্ট করে দেন যে তিনি দলের নির্দেশেই শুভেন্দুর সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছিলেন। কিন্তু আর কোনও আলোচনা নয়। এই ঘটনার পর কয়েকটি অরাজনৈতিক সভা করলেও নন্দীগ্রামের বিধায়ক নিজের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনও ইঙ্গিতই কার্যত দেননি। যদিও তা বুঝতে আর বাকি ছিল না কারও। তৃণমূলের সঙ্গে পাকাপাকিভাবে সম্পর্ক চুকিয়ে তিনি গেরুয়া শিবিরে পা রেখে নিজের রাজনৈতিক কেরিয়ারের দ্বিতীয় পর্ব শুরু করবেন, এমনটাই গুঞ্জন চারপাশে। সেই প্রক্রিয়ায় আরও একধাপ এগোলেন শুভেন্দু। বিধায়ক পদেও ইস্তফা দিলেন। সূত্রের খবর, শনিবারই তিনি বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.