সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রত্যেকদিনের মতো, সম্প্রতি একদিন রেডিওতে কান পেতেছিলেন হ্যাম রেডিও স্টেশনের অপারেটররা৷ তাঁদের কানে এসেছিল কিছু অজ্ঞাত সংকেত৷ যেগুলি তাঁরা আগে কোনও দিন শোনেননি এবং এগুলির অর্থও জানেন না৷ শুধুমাত্র একদিন নয়, পরপর বেশ কয়েকদিন এমনটা ঘটে তাঁদের সঙ্গে৷ বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধতেই স্থানীয় প্রশাসনকে জানান তাঁরা৷ অভিযোগ দায়ের করেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ক দপ্তরে৷ এরপরই প্রকাশ্যে আসে বিস্ফোরক তথ্য৷ তদন্ত করে দেখা যায় যে, রাত গভীর হতেই কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় শুনতে পাওয়া যাচ্ছে এমন সন্দেহজনক রেডিও সিগন্যাল৷ এর সাহায্যে কারা এবং কী কথাবার্তা চালাচালি করছে সেই বিষয়ে কোনও স্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি৷ তবে তদন্তকারীরা একটা বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছেন যে, এক্ষেত্রে ‘কোড ল্যাঙ্গোয়েজ’ হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে আফগান পুস্তু ভাষাকে এবং এই রেডিও সিগন্যালের ব্যবহারকারীরা কোনও ষড়যন্ত্র করছে৷ যার ফলে হুঁশ উড়েছে প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের৷ তাঁদের বক্তব্য, এখনই এই সিগন্যালের ব্যবহারকারীদের হদিশ না পাওয়া গেলে বিপদে পড়তে পারে কলকাতা-সহ সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত৷ ফলে সিগন্যালের উৎসের খোঁজ পাওয়াই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ তদন্তকারীদের কাছে৷
[ইস্তফা শোভনের, কলকাতার নয়া মেয়র হচ্ছেন ফিরহাদ হাকিম]
জানা গিয়েছে, কালীপুজোর কয়েক সপ্তাহ আগে একদিন গভীর রাতে হ্যাম রেডিও অপারেটদের কানে প্রথম এই সন্দেহজনক সংকেত এসে পৌঁছায়৷ উত্তর ২৪ পরগনার সোদপুর অঞ্চল থেকে প্রথম এই সংকেত শোনা যায়৷ এরপর হুগলির চুঁচুড়া ও শিয়ালদহ এলাকা থেকেও একই ধরনের সাংকেতিক সিগন্যাল কানে আসে হ্যাম রেডিও অপারেটরদের৷ যা সন্দেহের জন্ম দেয় বেঙ্গল অ্যামেচার রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরিশ নাগ বিশ্বাসের মনে৷ তিনি বলেন, “সংকেতটি পাওয়া মাত্রই আমাদের মনে সন্দেহ জন্মায়৷ আমার ওই সংকেত প্রেরকদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি৷ তাঁদের সম্পর্কে জানতে চাই৷ কিন্তু, অন্যদিক থেকে কোনও উত্তর আসে না৷ আমরা প্রশ্ন করতেই তাঁরা চুপ হয়ে যায়৷” অম্বরিশবাবু আরও জানান, এরপরই তাঁর মনের সন্দেহ দৃঢ় হয় এবং তিনি প্রথমে স্থানীয় প্রশাসনকে খবর দেন৷ তারপর বিষয়টি বিস্তারিত ভাবে জানান তথ্য-প্রযুক্তি মন্ত্রক থেকে শুরু করে রাজ্য প্রশাসন এবং ইন্টারন্যাশনাল ওয়্যারলেস মনিটরিং স্টেশনের আধিকারকিদের৷
[শোভনকে আইনি নোটিস রত্নার, সাতদিনের মধ্যে জবাব তলব]
ব্যাপারটি সম্পর্কে তাঁরাও তদন্ত করছেন বলে জানান, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এডিজি (টেলিকমিউনিকেশন) দেবাশিস রায়। তিনি বলেন, ”আমরা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে সমগ্র পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছি এবং এই বিষয়ে যা তথ্য আমাদের হাতে এসেছে, তা পুরোটাই কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে দ্রুত এই ঘটনার কিনারা করা যাবে৷ তদন্তে ইতিবাচক কিছু উঠে আসবে৷” ইতিমধ্যে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ডিসিপিডব্লিউ৷ এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে নাশকতার ছক৷ কোনওভাবেই তা উড়িয়ে দিচ্ছেন না তদন্তকারীরা৷ তাঁরা জানাচ্ছেন যে, জঙ্গি গোষ্ঠীগুলি এইভাবেই স্থানীয় রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে কথা চালাচালি করে থাকে৷ এদেশে এবং বিদেশেও একাধিকবার এমন তথ্য উঠে এসেছে৷ কিন্তু জঙ্গি সংগঠনগুলির ষড়যন্ত্র ভেস্তে দেওয়াই তাঁদের মূল লক্ষ্য বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.