অর্ণব আইচ: ফার্টিলিটি ক্লিনিকের সহায়তায় সন্তান লাভ করতে গিয়ে প্রতারণার শিকার তথ্য প্রযুক্তি বিভাগে কর্মরত এক দম্পতি। ৮ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ‘সারোগেট মা’র সঙ্গে সন্তান ধারণের চুক্তি করেন তাঁরা। কিন্তু সন্তান পাওয়া তো দূর অস্ত, জন্ম দেওয়ার আগেই পালিয়ে যায় ‘সারোগেট মা’ কাশ্মীরা বিবি। পরে তদন্ত চলাকালীন ধৃত ‘সারোগেট মা’-র থেকে প্রতারণার বিবরণ শুনে চোখ কপালে ওঠে তদন্তকারী আধিকারিকদের।
দিনকয়েক আগেই টাকা নিয়ে পালিয়ে গিয়ে পুলিশের জালে ধরা পড়েন ‘সারোগেট মা’ কাশ্মীরা বিবি। দফায় দফায় জেরা করলেও প্রথমে সন্তান সম্পর্কে মুখ খুলতে চায়নি কাশ্মীরা। পরে চাপের মুখে সে জানায়, গর্ভধারণের ৬ মাসের মধ্যেই গর্ভপাত হয়ে যায়। সেই সময় তাঁর বাড়িতে কেউ না থাকায়, সে কাউকে জানাতে পারেনি। একাই নদীর জলে গিয়ে ভ্রুণটিকে ফেলে দিয়ে আসে। তবে ২৬ সপ্তাহের ভ্রুণের গর্ভপাতের পর কি তা একাই বের করে ফেলে দেওয়া যায়? কাশ্মীরের এই বক্তব্যকে ঘিরে ধন্ধে পড়েছেন তদন্তকারী আধিকারিকরা।
কাশ্মীরার বক্তব্যে আস্থা না রেখে তদন্তের সাপেক্ষে ৪টি দলে ভেঙে যান তাঁরা। কাশ্মীরার মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন ধরে তাঁরা বিভিন্ন এলাকায় তল্লাশি চালাতে শুরু করে। আর এতেই মেলে নয়া তথ্য। কাশ্মীরা সল্টলেকের সেক্টর ফাইভে গিয়ে নাম ভাঁড়িয়ে ঠিকাদারির কাজ করত। সেখানে নিজেকে ‘মীনা হালদার’ নামে পরিচয় দেয় সে। ২০১৯-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সেখানে কাশ্মীরাকে গর্ভবতী অবস্থায় কাজ করতে দেখেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। মনে করা হচ্ছে, ১১ ডিসেম্বর থেকে এ বছরের জানুয়ারি মাসের মধ্যে কোনও এক সময় গর্ভপাত হয়েছে কাশ্মীরার। এর মধ্যে কাশ্মীরার মোবাইলের আরেকটি লোকেশন পাওয়া যায় ডায়মন্ড হারবার জেলা হাসপাতালের। তল্লাশি চালিয়ে কাশ্মীরার ঘনিষ্ঠ রবিউল মোল্লারও খোঁজ মেলে। তাঁর মোবাইল থেকে পাওয়া যায় কাশ্মীরার মা অম্বিয়া বিবির ছবি। অম্বিয়া বিবির কাছে তল্লাশি চালিয়ে জানা যায়, ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে একটি শিশুর জন্ম দেয় কাশ্মীরা। কাশ্মীরার ছবি দেখালে ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালের কর্মীরা দাবি করেন কাশ্মীরা বিবি ও মীনা হালদার একই মহিলা। এরপর জেরা করলে ভেঙে পড়ে কাশ্মীরা। স্বীকার করে নেয় সব কথা। জানায়, “স্বামী মারা যাওয়ার পর টাকার জন্য সারোগেট মা হওয়ায় প্রতিবেশীদের তিরস্কারের শিকার হই। তাই বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাই।ডায়মন্ড হারবার হাসপাতালে মৃত সন্তান জন্ম দেওয়ায় নদীতে ভাসিয়ে দিই।”
প্রতারিত দম্পতির থেকে জানা যায়, “৮ লক্ষ টাকার চুক্তি হলেও প্রথমে তাদের থেকে ৩.৭৫ লাখ টাকা নেয় কাশ্মীরা। এরপর সেই দম্পতির সঙ্গে প্রথমের দিকে নিয়মিত যোগাযোগ রাখলেও পরে তাদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ রাখেনি কাশ্মীরা।” লক্ষ্মীকান্তপুরের মথুরাপুর থেকে অভিযুক্ত কাশ্মীরার খোঁজ না পেয়ে তাঁকে খুঁজতে গেলে প্রতিবেশীরা জানায়, কাশ্মীরা আর সেখানে থাকে না। পাশাপাশি তাঁকে খুঁজে পাওয়ার সকল সম্ভাব্য প্রমাণও লোপাট করে দিয়ে যায় সে। তার তল্লাশি চালিয়েই মেলে এই তথ্য। শেষে এসএসকেএম হাসপাতাল থেকে ধরা পড়ে কাশ্মীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.