অভিরূপ দাস: বত্রিশ বছরের নারীর স্তনে টিউমার। তা কোনওরকমে কেটে বাদ দিয়ে দিয়েছিল মফস্বলের হাসপাতাল। প্রাণে বেঁচে গিয়েছে, ধরে নিয়ে হাঁপ ছেড়েছিলেন তরুণী। মাস ঘুরতেই বোঝা গেল, সে গুড়ে বালি। আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ ওই টিউমার কর্কট রোগের বীজ বহন করছিল। সিটি স্ক্যান করে দেখা যায়, বাহুমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে গিয়েছে ক্যানসার (Cancer)। এবার যে বাদ দিতে হবে গোটা স্তনটাই!
মাত্র ৩২ এ নারীত্বের সংজ্ঞা হারাতে নারাজ ছিল আয়েশা (নাম পরিবর্তিত)। কিন্তু মুশকিল আসান হয়ে গেল নিমেষে। সৌজন্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (Calcutte Medical College) সার্জারি বিভাগ। পেটের পিছন দিক থেকে ল্যাটিসমাস ডরসি পেশী কেটে তার স্তন বানিয়ে দিলেন মেডিক্যাল কলেজের ব্রেস্ট এন্ডোক্রিন সার্জেনরা (Surgeons)। কোভিড আবহে জটিল অস্ত্রোপচার করে শিরোনামে ব্রেস্ট এন্ডক্রিন সার্জারি বিভাগের দায়িত্বে থাকা চিকিৎসক ডা. ধৃতিমান মিত্র।
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহের ঘটনা। স্তনে টিউমার দেখা গিয়েছিল আয়েশার। সমস্যা নিয়ে মফস্বলের হাসপাতালে যেতেই চিকিৎসকরা ভেবেছিলেন, বিনাইন টিউমার। কেটে বাদ দিয়ে দেওয়া হয় টিউমারটি। কিন্তু মাংস পিন্ডটির হিস্টো প্যাথলজিক্যাল টেস্ট করতেই মাথায় হাত। এ তো ম্যালিগন্যান্ট! যা আদতে মারাত্মক ক্যানসার। সাধারণত এ ধরনের ক্যানসারের শিকড় অনেক গভীর পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন রোগীকে বাঁচাতে গেলে এই মুহূর্তে গোটা স্তনটাই বাদ দিতে হবে।
কিন্তু মাত্র ৩২ বছরেই শরীর থেকে নারীত্বের চিহ্ন মুছে ফেলতে নারাজ ছিলেন আয়েশা। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে সার্জারি বিভাগে আসেন তিনি। প্রথমে ডা. শিবজ্যোতি ঘোষের কাছে এসেছিলেন আয়েশা। সেখান থেকে ব্রেস্ট এন্ডোক্রাইন বিভাগে তাঁকে রেফার করা হয়। ডা. ধৃতিমান মৈত্র জানাচ্ছেন, ”স্তনের অস্ত্রোপচারটা দেখে আমরা বুঝতে পারি মফস্বলের হাসপাতাল কোনও মাপজোক করে কাটেনি। প্রথমেই আমাদের পরীক্ষা করে দেখতে হয়, ক্যানসারটা কতদূর ছড়িয়েছে। দেখা যায় বাহুমূলের লিম্ফনোড পর্যন্ত ছড়িয়েছিল ক্যানসার। প্রথমে ক্ষতিগ্রস্ত সেই লিম্ফনোডগুলো বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। স্তনের আকার ঠিক রাখতে কতটা মাংস লাগবে তারও হিসেব কষে নেওয়া হয়।” এরপর রোগীর পীঠের নীচ থেকে মাংস কেটে তার স্তন বানিয়ে দেন ডা. ধৃতিমান মৈত্র। টানা চার ঘন্টার অস্ত্রোপচারে তাঁকে সাহায্য করেন ডা. সুচিস্মিতা, ডা. অভিষিক্তা এবং ডা. দিব্যশ্রী।
ডা. মৈত্রের কথায়, ”স্তনে মাংস প্রতিস্থাপন করার পর লক্ষ্য রাখতে হয়, ওই অংশে রক্ত সঞ্চালন ঠিক হচ্ছে কি না। রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক না হলে মাংস পচে কালো হয়ে যেতে পারে।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, যুবতী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ আছেন। ক্যানসারের মতো মারণ রোগ রুখে নতুন করে স্বাদ পাচ্ছেন নারীজীবনের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.