ছবি: প্রতীকী
রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: রাজ্যে দলের বর্তমান শক্তির উপর ভরসা নেই, অন্য দল থেকে কর্মীদের ভাঙিয়ে এনে ফের সংগঠন মজবুত করার কৌশল নিতে চলেছে বঙ্গ বিজেপি! মঙ্গলবার বৈদিক ভিলেজে দলের প্রশিক্ষণ শিবিরের দ্বিতীয় দিনে এমনই কৌশলের ইঙ্গিত দিলেন রাজ্য বিজেপির নয়া পর্যবেক্ষক সুনীল বনশল।
একুশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ও অন্যান্য দল ভাঙানোর যে বার্তা দিয়েছিলেন রাজ্যে দলের প্রাক্তন পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়, সেই কৈলাসের সুরই এবার নবনিযুক্ত পর্যবেক্ষক তথা দলের আরেক সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুনীল বনশলের গলাতেও শোনা গিয়েছে। যা নিয়ে চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে গোটা গেরুয়া শিবিরে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে ক্ষমতায় নেই সেখানে ঘুরপথে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করছে বিজেপি। মহারাষ্ট্রে তারা সফলও হয়েছে। দিল্লি, ঝাড়খণ্ডের পাশাপাশি বাংলাতেও কি সেই দল ভাঙানোর খেলাই খেলতে চাইছে গেরুয়া শিবির?
এদিকে, প্রশিক্ষণ শিবিরের দ্বিতীয়দিনে কয়েকটি বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে দলের কর্মীদের মধ্যে। দলীয় সূত্রে খবর, বৈদিক ভিলেজে বিজেপির প্রশিক্ষণ শিবিরে সকালে যোগব্যায়ামের সময় সকলের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক বলে দলের নির্দেশ থাকলেও এদিন উপস্থিতি ছিল ৫০ শতাংশ। অনাভ্যাস থাকায় সাতসকালে অনেকেই ঘুম থেকে সঠিক সময়ে উঠতে পারেননি। আবার শিবিরের নিয়মে রাত্রিবাস বাধ্যতামূলক থাকলেও কয়েকজন শীর্ষনেতা রাতে ছিলেন না। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ সৌমিত্র খাঁ শিবিরে রাত্রিবাস করেননি। বিষয়টি নিয়ে উপস্থিত অনেক প্রতিনিধিই প্রশ্ন তুলেছেন।
একুশের বিধানসভা ভোটের আগে বাংলায় দল ভাঙানোর খেলা খেলেও সফল হয়নি বিজেপি। বঙ্গ জয়ের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় শাহ-নাড্ডাদের। পরবর্তী ক্ষেত্রে ‘যোগদান মেলা’র কর্মসূচি বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছিল পদ্মশিবিরের কাছে। সেই সময় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের এই কাজে অসন্তোষ দেখা দিয়েছিল গেরুয়া শিবিরের (BJP) মধ্যেই। আদি-নব্যে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল দল। বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পর্যুদস্ত হওয়ার পর তখনকার সেই দল ভাঙানোর কৌশল যোগদান মেলা নিয়ে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল কৈলাস বিজয়বর্গীয় থেকে শুরু করে বিজেপি নেতৃত্বকে। সেই আদি-নব্য দ্বন্দ্ব এখনও চলছে বঙ্গ বিজেপির মধ্যে। আর তার মধ্যেই আবার নতুনদের জায়গা দেওয়া নিয়ে বনশলের এদিন বক্তব্য নিয়ে গুঞ্জন প্রতিনিধিদের একাংশের মধ্যে। দলের পুরনোদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বেঁধেছে।
সূত্রের খবর, “কার্যকর্তাদের কর্মপদ্ধতি নিয়ে প্রশিক্ষণ শিবিরে ক্লাস নিতে গিয়ে তিনি বলেন, দলে নতুনদের জায়গা দিতে হবে। অন্য দল থেকে কেউ এলে তাদের সুযোগ দিয়ে বিজেপি পরিবারকে বড় করতে হবে। অন্য দল থেকে যাঁরা আসবেন তাঁদের সম্মান দিতে হবে।” এ প্রসঙ্গেই দলের নেতা-কর্মীদের প্রতি বনশলের বার্তা, প্রত্যেককে চুম্বকের মতো হতে হবে। লোহা হলে হবে না। অন্য দলের লোককে আকর্ষণ করতে হবে। চুম্বকের গঠনে যেমন অণু-পরমাণু নির্দিষ্ট আকারে থাকে, বিজেপি দলের পুরনোদেরও সেই আকারে থাকতে হবে। দলীয় নেতৃত্বের আচার-আচরণ ঠিক রাখা ও কর্মদক্ষতা বাড়ানোর পরামর্শও দেন তিনি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) বলেছেন, যেখানে সংগঠন শক্তিশালী সেখানে পঞ্চায়েতে এমন প্রার্থী দিতে হবে যাদের দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছে। বুথ শক্তিশালী করার কথাও বলেছেন তিনি।
এদিকে, ইডি-সিবিআই নিয়ে পালটা প্রচারে নামার কৌশল নিতে চলেছে বিজেপি। কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে বিজেপি পরিচালিত করছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। বিজেপি নেতাদের কিছু ভাষণেও সেটা স্পষ্ট হয়েছে। তাই এজেন্সি-বিজেপি যে যোগ নেই এটাই প্রচার করতে চায় গেরুয়া শিবির। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে এই আলোচনা হয়েছে বলে খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.