রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: চব্বিশের লোকসভা ভোটের ফলাফল নিয়ে বঙ্গ পর্যালোচনা বৈঠকে উঠে এল নিচুতলায় সংগঠণের ব্যর্থতা। চলল একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপের পালা। উঠে এল কোন্দলের ছবি। তারই মধ্যে নেতা-কর্মীদের মধ্যে ইডি ও সিবিআই নির্ভরতাও যে দলকে ডুবিয়েছে, তা কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। দলীয় সূত্রে খবর, সোমবার সল্টলেকের দলীয় কার্যালয়ে ‘রুদ্ধদ্বার’ বৈঠকে রাজ্য ও জেলা নেতাদের উদ্দেশে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ”ইডি, সিবিআইয়ের উপর ভরসা করে চলবে না। সব বিষয়ে দিল্লির মুখাপেক্ষী থাকবেন না। আত্মনির্ভর হতে হবে। বুথকে শক্তিশালী করতে হবে। তবেই তৃণমূলের মোকাবিলা করা যাবে।”
এই বিষয়টা নিয়ে বিজেপির (BJP)মধ্যে আগে থেকেই চর্চা শুরু হয়েছিল যে ইডি ও সিবিআইয়ের উপর নির্ভর করে চলছে বঙ্গ বিজেপি। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরও বড় হাতিয়ার কেন্দ্রীয় এজেন্সি। বিজেপির বিরুদ্ধে ইডি (ED) ও সিবিআইকে (CBI) রাজনৈতিকভাবে ব্যবহারের অভিযোগও বার বার তুলেছে তৃণমূল-সহ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। সেই পরিস্থিতিতে দলের অভ্যন্তরীণ বৈঠকে কেন্দ্রীয় এজেন্সির নির্ভরতা যে নেতা কর্মীদের মধ্যে রয়েছে, সেটা কার্যত স্বীকার করে নিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি স্বয়ং।
উল্লেখ্য, বীরভূম (Birbhum) আসনে বিজেপির পরাজয়ের পর সেখানে পদ্ম প্রতীকে প্রার্থী হিসেবে প্রথমে নাম ঘোষণা হওয়া প্রাক্তন আইপিএস দেবাশিস ধর সাংসদ শতাব্দী রায়কে ‘জনপ্রিয় নেত্রী’ আখ্যা দিয়ে বলেছিলেন, ইডি, সিবিআই হচ্ছে কচলানো লেবু। দলের পুরোনোদের একাংশের কথায়, সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar) সঠিক কথা বলেছেন। কেন্দ্রীয় এজেন্সি তৃণমুলের কাকে কবে গ্রেপ্তার করবে, এসব করে দলের সংগঠন বাড়বে না। তাছাড়া, ইডি ও সিবিআইকে যেভাবে কথায় কথায় হাতিয়ার করেছেন বিরোধী দলনেতা, সেটা মানুষ ভালোভাবে নেয়নি। আর দলেরও ক্ষতি হচ্ছে। এমনটাই মনে করছেন আদি বিজেপির নেতারা।
সোমবার সল্টলেকের (Salt Lake) বৈঠকে অবশ্য ছিলেন না বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী, সতীশ ধন্দ, রাজ্য পদাধিকারীরা, জোন ও জেলা ইনচার্জ, বিভিন্ন মোর্চার সভাপতি। হারার পর্যালোচনা করতে গিয়ে উঠে এসেছে বুথের বেহাল অবস্থার বিষয়টি। একাধিক নেতারা বলেন, বুথ মানে ভূত। বহু বুথে সংগঠনের কোনও অস্তিত্ব ছিল না। ‘জল মেশানো’ রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে দিল্লির নেতাদের কাছে। সূত্রের খবর, সাংসদ জগন্নাথ সরকার ক্ষোভ প্রকাশ করে বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে বলেন, রানাঘাটে পার্টির সংগঠনই তাঁর বিরুদ্ধে ছিল। সংগঠনের মধ্যে সমন্বয় ছিল না। জেলা সভাপতি কোথায়, কী করছে তাঁকে জানায়নি।
সংসদে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ সংরক্ষণের কথা বলা হলেও বঙ্গ বিজেপি মহিলাদের প্রার্থী করার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয় না বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলের এক মহিলা নেত্রী। তাঁর কথায়, তৃণমূলের ১২ জন মহিলা সাংসদ দিল্লি চলে গেলেন জিতে। পাশাপাশি বহিরাগত বা তৃণমূল থেকে পদ্ম শিবিরে আসাদের টিকিট দেওয়া হয়, অথচ হিন্দি ভাষী এলাকায় হিন্দি ভাষীদের কাউকে টিকিট দেওয়া হয় না। এদিনের বৈঠকে নাম না করে এক রাজ্য নেতার বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বঙ্গ বিজেপির সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। বৈঠক সূত্রে খবর, কোনও এক মোর্চার রাজ্য সভাপতি বলেছিলেন অমিতাভ চক্রবর্তীকে ফুলের মালা পরিয়ে ঘোরাবেন। সেটা নিয়েই এদিন বৈঠকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অমিতাভ। রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন মোর্চাগুলোকে পরিকাঠামোগত ভাবে পার্টির তরফে কোনও সাহায্য করা হয় না। জেলা সভাপতিরাও করেন না বলে অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে প্রচুর জায়গায় দলের প্রার্থীর সঙ্গে জেলা সভাপতিদের কোনও সুসম্পর্ক ছিল না বলেও এদিন অভিযোগ উঠেছে বৈঠকে।
এদিন, ভোটের ফলাফল (Lok Sabha Election Result 2024) নিয়ে ইতিবাচক দিক ব্যাখ্যা করে সুকান্ত মজুমদার বলেন, ২০৫ টি বিধানসভায় ৪০ শতাংশ ভোট পেয়েছে বিজেপি। ৯০ টি বিধানসভায় জিতেছে। ভোট বেড়েছে ১ শতাংশ। এ প্রসঙ্গেই সিপিআই (এমএল) লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যর সংবাদ মাধ্যমে একটি সাক্ষাৎকারের উদাহরণ তুলে সুকান্ত বলেন, উনিও বলেছেন বিজেপি একক শক্তি হিসেবে উঠে আসছে বাংলায়। এদিকে, সুকান্ত ভোটের ফলের ইতিবাচক দিকের ব্যাখ্যা করলেও, দলের একাংশের প্রশ্ন, কেন আসন ছযটা কমে গেল, কারও পছন্দের কেন প্রার্থী করা হল, এসব বিষয় নিয়ে রাজ্য নেতারা কিছু বলছেন না কেন? একাধিক প্রার্থীদের সঙ্গে জেলা সভাপতিদের বনিবনা না হওয়ার কারণ তো বিরোধী দলনেতা তাঁর পছন্দের লোকদের সিংহভাগ আসনে প্রার্থী করেছিলেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.