ছবি: শুভাশিস রায়।
ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: ৩৫ বছর পর ফের চেনা ছবি। ব্রিগেডে SUCI-এর জাতীয় সমাবেশ। হাজার হাজার সমর্থকের ভিড়। চিরকাল আড়ালে থেকে মানুষের জন্য কাজ করে যাওয়া, ভোট রাজনীতিতে দাগ কাটতে না পারা দলটিরও যে এখনও এতটা শক্তি, এই ব্রিগেড (Brigade Parade Ground) সমাবেশ যেন সেটাই টের পাইয়ে দিল SUCI। দলের প্রতিষ্ঠাতা কমরেড শিবদাস ঘোষের জন্মশত বার্ষিকী উপলক্ষে এই সমাবেশে ভিন রাজ্য থেকেও সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন। বহুদিন পর লালে লাল ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ড। দলের শীর্ষ নেতা হিসেবে সভায় দীর্ঘ বক্তব্য রাখলেন কমরেড প্রভাস ঘোষ, চণ্ডীদাস ভট্টাচার্যরা। সমসাময়িক একাধিক রাজনৈতিক প্রসঙ্গের পাশাপাশি সিপিএমের (CPM) প্রতি তীব্র আক্রমণ শানিয়ে তুলল SUCI নেতৃত্ব।
দলের প্রতিষ্ঠাতা কমরেড শিবদাস ঘোষের আদর্শ, শিক্ষা মেনেই আজই এগিয়ে চলেছে SUCI – এভাবেই নিজের বক্তব্য শুরু করেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রভাস ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, ভোট সর্বস্ব নয়, বিপ্লবী দল হিসেবে কোনও কিছুর সঙ্গে আপোস করে না কখনও। বিজেপির (BJP) মতো ধর্মীয় বিভাজন কিংবা বুর্জোয়া শ্রেণির সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার রাজনীতিতে সমর্থন নেই তাদের। এ নিয়ে তিনি আম্বানি, টাটা, মিত্তলদের মতো শিল্পপতিদের আক্রমণ করেছেন। আবার সিপিএমকে বার্তা দিতে গিয়ে বুর্জোয়া নিয়ে ব্যাখ্যাও শোনা গেল কমরেড প্রভাস ঘোষের গলায়। বললেন, ”সিপিএম বন্ধুদের বলি, দেশের বুর্জোয়া পথেই একসময় কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে। তবু তারা বলবে বুর্জোয়া বিপ্লব। এরা এরকম ছিল না। সিপিএম ৩৪ বছর শোষণ করেছে। এখন তাদের শক্তি ক্ষয় হয়েছে। কংগ্রেসের সঙ্গে চলে।” এছাড়া ডাবল ইঞ্জিন সরকারের ‘ব্যর্থতা’ থেকে বিরোধীদের INDIA জোট – একাধিক বিষয় উঠে এসেছে তাঁর বক্তব্যে।
দেশের ক্ষমতাসীন দলের ‘আসল চেহারা’ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ”বিজেপি বলে তারা জাতীয়তাবাদের প্রতীক। তারা দেশের শত্রু। বিজেপি বিজ্ঞানের পথ বন্ধ করে দিচ্ছে। বিজেপি হিন্দু ধর্মকে ব্যবহার করছে ভোটের জন্য, রাম মন্দিরকে ব্যবহার করছে ভোটের জন্য। আসলে এটাই তাদের ভোট ভক্তি।” আর বিরোধী INDIA জোট নিয়ে প্রভাস ঘোষের বক্তব্য, ”ইন্ডিয়া জোট! কাদের প্রতিনিধি এরা? অত্যাচারিত শোষিতের ইন্ডিয়া? নাকি অম্বানিদের ইন্ডিয়া? এই কংগ্রেসই তো প্রথম পুঁজিবাদকে শক্তি করেছে। এদের আমলে দাঙ্গা হয়নি? কংগ্রেস যা করেছে তাকে বিজেপি আরও বাড়িয়েছে। এই কংগ্রেস সেকুলার? ইন্ডিয়া জোট জিতলেও যে ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক পরিবেশ আসবে, তাও না। কিন্তু বিজেপির একটা ধাক্কা খাওয়া উচিত। একমাত্র বিকল্প প্রলেতারিয়ান রাজনীতি।”
সবশেষে বামপন্থীদের ঐক্যের বার্তাস দিলেন প্রভাস ঘোষ। তাঁর কথায়, ”বামপন্থীদের ঐক্যবদ্ধ জোট চাই। ভোটের জন্য না, মানুষের জন্য। তৃণমূল আমাদের মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু যাইনি। এর আগে ২০১৪ সালে প্রকাশ কারাট এসেছিলেন আমাদের কাছে। বললেন, ঐক্য চাই। শর্ত দিলাম। কিন্তু আন্দোলনই নেই। ‘১৯ সালে আমরা তাগাদা দিলাম। জবাব দিল না। ওরা জানে, SUCI থাকলে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট চলবে না। তাও আমরা চাই, বামপন্থী ঐক্য হোক। কিন্তু আমরা ভোটের জন্য লড়ব না। আমি চেষ্টা করছি, আরও দীর্ঘদিন বেঁচে থেকে শিবদাস ঘোষের শিক্ষা এগিয়ে নিয়ে যেতে। এই দল শিবদাস ঘোষের প্রতিষ্ঠিত দল। কিন্তু এই দল আপনাদের, শোষিতের।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.