নব্যেন্দু হাজরা: ‘সতর্ক হোন। কোনওরকম গাফিলতি বরদাস্ত হবে না।’ – মাস তিনেক আগে কর্তৃপক্ষের এহেন বার্তাতেও হুঁশ ফেরেনি অনেক কর্মীর। তাই কলকাতা মেট্রোয় বিভ্রাটের বহরও বেড়েই চলেছে। কিন্তু পরিষেবার হাল ফেরাতে এবার কর্মীদের উদ্দেশে কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। ছোট থেকে বড় – যে কোনও বিভ্রাটের তদন্ত চলছে। এবং তদন্ত শেষে গাফিলতি প্রমাণিত হলে, কর্মীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। যা আগে সেভাবে ছিল না বলেই জানাচ্ছেন মেট্রো কর্তারা। মাস দুয়েকের মধ্যে শেষ কয়েকটি বিভ্রাটের কারণে এক মোটরম্যান-সহ চারজনকে শাস্তির মুখে পড়তে হয়েছে বলে সূত্রের খবর। সিগন্যাল ওভারলুক করায় সাসপেন্ড হয়েছেন এক মোটরম্যান। তাছাড়া রেকের রক্ষণাবেক্ষণে গাফিলতির জন্য এক কর্মীর বছরের ইনক্রিমেন্টও আটকে গিয়েছে। মেট্রো কর্তারা জানাচ্ছেন, কিছু সংখ্যক কর্মীর গাফিলতির কারণে নিত্যযাত্রীরা ভুক্তভোগী হচ্ছেন, প্রশ্ন উঠছে যাত্রী নিরাপত্তা নিয়ে। মেট্রোর ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এসব বন্ধ করতেই প্রতিটি ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত এবং তার রিপোর্টের ভিত্তিতে শাস্তির দাওয়াই। এর মধ্যে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে বাকি কর্মীদের বার্তা দেওয়া এবং কাজের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগী করে তোলাই কর্তৃপক্ষের মূল লক্ষ্য।
প্রায়দিনই ছোটখাটো নানা সমস্যায় জর্জরিত কলকাতা মেট্রো। কখনও দরজা বন্ধ না হওয়া, কখনও তৃতীয় লাইন থেকে বিদ্যুৎ টানতে না পারা, কখনও আবার সিগন্যালিংয়ে সমস্যা। তাতেই দিনের ব্যস্ত সময়ে পাতালপথে বিঘ্ন ঘটে। দুর্ভোগে পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। মেট্রো রেল সূত্রে খবর, এই ধরনের ঘটনা রুখতে তাই নিয়মিত নাইট সেফটি ইনস্পেকশন হয়। খোঁজা হয় গলদ। এই ইনস্পেকশনের কাজে থাকেন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যাল অ্যান্ড টেলিকম ডিপার্টমেন্ট, ট্রাফিক এবং প্যাসেঞ্জার অ্যামেনিটি দপ্তরের আধিকারিকরা। প্রত্যেক দপ্তরের একজন করে আধিকারিক নিয়ে একেকটি টিম তৈরি হয়। সেই টিম তিনটি করে স্টেশন ইনস্পেকশন করেন। প্রত্যেক আধিকারিক নিজের মতো করে রিপোর্ট দেন। প্রতি সপ্তাহের সোমবার তার ভিত্তিতে বৈঠক হয়। সেখানেই নেওয়া হয় ব্যবস্থা।
[‘মমতা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন’, সুর বদলে পালটি খেলেন দিলীপ]
অন্যদিকে, মেট্রোয় যে কোনও রকম সমস্যা হলেই তার তদন্ত করে আলাদা একটি কমিটি। সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে অভিযুক্তকে শাস্তি দেওয়া হয়। যেমন, মাস দেড়েক আগে কোচের ভেতরে সকেট থেকে কেবল বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনায় এক কর্মীর গাফিলতি প্রমাণ হয়। তাঁর বছরের ইনক্রিমেন্ট আটকে দেওয়া হয়েছে। সিগন্যাল ওভারলুকের জন্য এক মোটরম্যানকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। রেকের বোল্ট লুজ থাকার কারণে এক কর্মীকে শাস্তি দেওয়া হয়। কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনার ক্ষেত্রে এভাবেই জরুরি ভিত্তিতে তদন্ত, রিপোর্ট পেশ এবং শাস্তির প্রক্রিয়া নিরন্তর চলবে বলেই জানানো হয়েছে মেট্রো রেলের তরফে। কর্তাদের কথায়, যাত্রী নিরাপত্তার সঙ্গে কোনওরকম আপোস করতে চায় না কর্তৃপক্ষ। কর্মীরা যাতে কাজে আরও মনোযোগী হন, সেকারণেই তাঁদের এভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিদানের সিদ্ধান্ত। যাত্রীদের বক্তব্য, কর্তৃপক্ষের শাস্তির নিদানে কর্মীদের হুঁশ ফিরলে ভাল। না হলে দুর্ভোগ চলতেই থাকবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.