সুব্রত বিশ্বাস: বাংলার নিউ জলপাইগুড়ি (NJP) থেকে নয়, ৩ জানুয়ারি বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোঁড়া হয়েছিল বিহারের কিষানগঞ্জ এলাকায়। বুধবার গভীর রাতে বন্দে ভারতের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে রেল। তা থেকেই বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। ফুটেজে চারজনকে ট্রেনের কাছে দেখা গিয়েছে। এরাই পাথর ছুঁড়েছে বলে দাবি রেলের। সদ্য চালু হওয়া দেশের সেমি হাই স্পিড ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় বিস্তারিত রাজনৈতিক তরজা হলেও সিসিটিভি ফুটেজ প্রমাণ দিচ্ছে তা বিহারের কিষানগঞ্জ এলাকায় ঘটেছে, বাংলায় নয়। যা দেখে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, স্রেফ বাংলাকে কালিমালিপ্ত করতে অপপ্রচার করছিল বঙ্গ বিজেপি।
ফুটেজ থেকে স্পষ্ট, বন্দে ভারতে প্রায় দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে পিলার ৪৬/২৭ থেকে ৪৬/২৫ পিলারের মধ্যে পাথর ছোঁড়া হয়েছিল। এই পিলার নম্বর দেখেই রেল শনাক্ত করেছে এলাকাটিকে। এই ঘটনাকে বিক্ষিপ্ত ও দুষ্কৃতী হামলা বলে জানিয়েছে রেল। ৩ জানুয়ারি পাথরের আঘাতে ছ’নম্বর কোচের ৭২ নম্বর সিটের পাশের জনলাটি ভেঙে যায়।
হাওড়া ঝিল সাইডিং অর্থাৎ বন্দে ভারত যেখানে রক্ষণাবেক্ষণ হয় সেখান থেকে পূর্ব রেল ফুটেজটি পায়। তারপর তদন্তের স্বার্থে তা তদন্তকারীদেরর কাছে পাঠিয়ে দেয়। উল্লেখ্য, সামসি আরপিএফ ও জিআরপি ঘটনার তদন্ত করছে। রেল জানিয়েছে, বাইরে থেকে পাথর ছোড়া হয়েছে। রেলের তরফে রাজ্য পুলিশের ডিজির কাছে আবেদন জানানো হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য। পাশাপাশি পুলিশকে সতর্ক রাখার আবেদনও করা হয়েছে। তবে ট্রেনের ভিতরে থাকা আরপিএফ, জিআরপি এসকর্টের সংখ্যা বাড়বে না।
পূর্ব রেলের আরপিএফ আইজি পরম শিব বলেন, পাথর ছোড়ার ব্যাপারে বিগত দিনের রেকর্ড দেখে কয়েকটি জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই বোলপুর, আহমেদপুর, সাঁইথিয়া, চামাগ্রামকে চিহ্নিত করা হয়েছে। স্থানীয় পুলিশকে সতর্ক থাকার আবেদনের সঙ্গে এলাকার স্কুলগুলিতে ছাত্রদের মধ্যে প্রচার অভিযান চালানোর জন্য। তারাই সমাজকে সচেতন করবে। তবে ৩ জানুয়ারি বন্দে ভারতে পাথর ছোড়ার ঘটনায় কাউকে চিহ্নিত করা যায়নি।
এদিকে হাওড়া-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে সদ্য চালু হওয়া সেমি হাইস্পিড অত্যাধুনিক ট্রেন বন্দে ভারতে পরপর দুদিন পাথর ছোঁড়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছিল। বঙ্গ বিজেপি অভিযোগ করেছিল, রাজ্যের শাসকদলের তরফে চক্রান্ত করে পাথর ছোঁড়া হয়েছিল। কিন্তু এদিন তাঁদের সেই অভিযোগ কার্যত খারিজ হয়ে গেল। কারণ রেলের তথ্য বলছে, পাথর ছোঁড়ার ঘটনা ঘটেছে বিহারে।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “ঘটনাটি যখন ঘটেছিল ট্রেনটি ছিল বিহারে। বাংলায় নয়। তাই পরিকল্পিত বা অপরিকল্পিত যে হামলাই হোক সেটা বাংলায় ঘটেনি। আবার যাদের ছবি দেখা যাচ্ছে তাদের পাথর ছুঁড়তে দেখা যায়নি। তাহলে রেল তদন্ত করে বিষয়টি বের করুক।” এদিকে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের সাংসদ শান্তনু সেনের দাবি, “বঙ্গ বিজেপির নেতারা বাংলা বিদ্বেষী। তাই বাংলাকে কালিমালিপ্ত করতে অপপ্রচার করছিল। এর আগে ভোটের সময় সিনেমার দৃশ্যকে বাংলার ছবি বলে প্রচার করছিল। এর জবাব ভোটবাক্সে পেয়েছে। আবার এই মিথ্যা প্রচারের ফল ভুগবে বিজেপি।”
এদিকে রেল স্পষ্ট করে দিয়েছে, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে পাথর ছোঁড়াটা কোনও নতুন ঘটনা নয়। বহু বার বহু চলন্ত ট্রেনে এই পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। যাত্রীরা আহত হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। ২০১৯ সালে দেশে এই ধরণের ৩১টা কেস রেজিস্ট্রি করেছিল জিআরপি। তার আগের বছর একই ধরনের পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল ২৮ বার। ২০১৭ সালে সতেরোটি ঘটনা রেকর্ড হয়েছিল। পুলিশের নথিভুক্ত এই সংখ্যা হলেও বহু সময়ে অভিযোগই দায়ের হয় না। ফলে প্রকৃত সংখ্যা জানা থাকে না রেলের বলে ওই সূত্রে দাবি। ২০১৯ সালে ১৩টি কেসের নিষ্পত্তি করতে পেরেছিল পুলিশ। ওই বছর ১৮টি ঘটনাই ইস্ট কোস্ট রেলের কটক সম্বলপুর, কোরাপুটে ঘটেছিল বলে জানা গিয়েছে। ২০২১ সালে শুধু বেঙ্গালুরু ডিভিশনে চলন্ত ট্রেনে ৬২ বার পাথর ছোড়া হয়েছিল। ১১ যাত্রী আহত হয়েছিলেন। ৫৫ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। নর্দান রেলের দিল্লি-আগ্রার মাঝে ২০ ডিসেম্বর দিল্লি লাহোরি গেটের কাছে বন্দে ভারতের পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছিল।
এই ধরণের অপরাধে ধৃত দুষ্কৃতীদের মূলত রেল অ্যাক্টের ১৪৭ ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়। যা রেল এলাকায় বেআইনি প্রবেশকারী হিসেবে গণ্য। ১৪৩ (ডি) বেলেল্লাপনা, ১৫৩ যাত্রী সুরক্ষা বিঘ্নিত আইন প্রয়োগ হয়। এই ধরণের আইনে গ্রেপ্তার করা অপরাধীরা সহজেই জামিন পেয়ে যাওয়ায়, ফের অপরাধ করতে দ্বিধাবোধ করে না দুষ্কৃতীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.