অর্ণব আইচ: একশো টাকা দিলেই শহর কলকাতায় মিলছে ‘মুঙ্গেরি দানা’র। আবার অনেক বেশি সংখ্যায় কিনলে একেকটি ‘মুঙ্গেরি দানা’ ৫০ টাকাতেও কলকাতায় বেচছে মুঙ্গেরের অস্ত্র পাচার চক্র। সম্প্রতি কলকাতা থেকে উদ্ধার হওয়া ৯০টি বুলেটের তদন্ত করে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের আধিকারিকরা। বেআইনি ‘মুঙ্গের মেড’ অস্ত্র যে বিহারের মুঙ্গেরের বেআইনি অস্ত্র কারখানায় তৈরি হচ্ছে, সে ব্যাপারে এসটিএফের গোয়েন্দারা নিশ্চিত। কিন্তু একই সঙ্গে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, অস্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে কার্তুজের বিপুল চাহিদা বেড়ে চলায় এবার মুঙ্গেরি বুলেট তৈরির উপরও জোর দিচ্ছে অস্ত্র পাচারকারী চক্র।
সম্প্রতি মধ্য কলকাতার মুচিপাড়া এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া পাঁচটি আগ্নেয়াস্ত্র ও ৯০টি বুলেটের সঙ্গে গ্রেপ্তার হয়েছে পূর্ব কলকাতার নারকেলডাঙা এলাকার এক অস্ত্র পাচারকারীও। এই বুলেট উদ্ধারের তদন্ত শুরু করে এসটিএফের গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, ওই অস্ত্রগুলির একটি বড় অংশ পাচার করার ছক ছিল মেদিনীপুরের ঘাটালে। এসটিএফের এক কর্তার দাবি, তাঁদের আধিকারিকরা মেদিনীপুর জেলা পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ঘাটালে তল্লাশি চালিয়ে ১৩ জনকে গ্রেপ্তার করে। তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র ও দশটি বুলেট উদ্ধার হয়।
লালবাজারের সূত্রে খবর, এর আগেও কলকাতায় উদ্ধার হয়েছে প্রচুর বুলেট। গ্রেপ্তার হওয়া অস্ত্র পাচারকারীদের জেরা করে গোয়েন্দারা জানতে পারেন যে, বিভিন্ন অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি থেকে দোকানে আসা বুলেট চোরাপথে চলে আসতে শুরু করে দুষ্কৃতীদের হাতে। ভুয়া বিল ও চালান তৈরি করেও বিহারের অস্ত্র পাচারকারীদের হাতে চলে আসতে শুরু করে বুলেট। সেই বুলেট পৌঁছে যায় কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে। এই বিষয়টি সামনে আসার পর প্রত্যেকটি শহর ও রাজ্যের পুলিশ এবং কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা অনেকটাই সতর্ক হন। এবার এসটিএফ আধিকারিকদের কাছে খবর, সেই মোডাস অপারেন্ডি পালটে এবার মুঙ্গেরের অস্ত্র পাচারকারীরা নিজেরাই তাদের বেআইনি কারখানাগুলিতে তৈরি করতে শুরু করেছে ‘মুঙ্গেরি বুলেট’।
গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, গ্রেপ্তার হওয়ার পর অস্ত্র পাচারকারীরাই তাঁদের জানায় যে, লেদ মেশিন যন্ত্র ব্যবহার করে বিভিন্ন ধরনের বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্রের নকল তৈরি করা সহজ হলেও বুলেট তৈরি করা নেহাত সোজা নয়। সম্প্রতি মুচিপাড়া থেকে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ যে ৯০টি বুলেট উদ্ধার করেছে, তার মধ্যে ৪০টি রাউন্ড ৭.৬৫ এমএম ও ৫০টি রাউন্ড ৮ এমএম বুলেট। গোয়েন্দাদের দাবি, ৮ এমএম বুলেট কেন্দ্রীয় সরকারের অস্ত্র তৈরির কারখানায় সাধারণত তৈরি হয় না। অথচ ওয়ান শটার বা পাইপগানে এই বুলেটগুলি ব্যবহার হওয়ার কারণে এর চাহিদা প্রচুর। মূলত সেই কারণে অস্ত্র পাচার চক্র মুঙ্গেরে নিজেদের বেআইনি কারখানায় তৈরি করতে শুরু করে এই ৮ এমএম বুলেট। একেবারে আসল বুলেটের মতোই তারা লেদ কারখানায় তৈরি করে কার্তুজের খোল ও বুলেট হেড। এর পর তা জোড়া লাগিয়ে তৈরি হয় ৮ এমএম দানা। একইভাবে ৭.৬৫ এমএম বুলেটও তৈরি হচ্ছে মুঙ্গেরে। অর্ডার ও আগাম টাকা পাওয়ার পরই এই ৯০টি ‘মুঙ্গেরি দানা’ পাচার করা হয় কলকাতায়। এমনকী, তৈরির পর সেগুলি পিস্তল বা ওয়ান শটারে বসিয়ে কাজ করছে কি না, তা-ও দেখে নেওয়া হয়।
গোয়েন্দা সূত্রে আরও খবর, একেকটি বুলেটের দর একশো টাকা পর্যন্ত ওঠে। যদিও অনেক বুলেট একসঙ্গে কেউ কিনলে তার দর নেমে যায় ৫০ বা ৬০ টাকায়। তবে কোনও সময় ‘বুলেট হেড’ তৈরির বস্তুতে ভেজাল মেশানো থাকলে ফায়ার করার পর তা ভেঙে যাওয়ারও সম্ভাবনা থাকে। আবার গোয়েন্দারা এমনও দেখেছেন যে, আসল ৭.৬২ এমএম পিস্তলে এই মুঙ্গেরি বুলেট পুরলেও তা বোরের মাপে খাপ খাচ্ছে না। তাই মুঙ্গেরি বুলেট ব্যবহার করার জন্য প্রয়োজন হয় মুঙ্গের মেড পিস্তল বা ওয়ান শটারের। এই পদ্ধতিতে অস্ত্র পাচারকারীরা মুঙ্গেরি অস্ত্র ও বুলেটের চাহিদা বাড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.