ছবি: প্রতীকী।
অর্ণব আইচ: স্ত্রী মৃত্যুশয্যায়। স্ত্রীকে দেখতে কলকাতা থেকে যেতে হবে ওড়িশায় (Orissa)। তাই জামিন পাওয়া দরকার। আদালতে আবেদন করা হয়েছিল। এর সঙ্গে জালনোট পাচারের অভিযুক্তর স্ত্রীর ডাক্তারের সার্টিফিকেট ও চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি এসেছিল লালবাজারের হাতে। সন্দেহ হওয়ায় সেগুলি পরীক্ষা করতে ওড়িশায় পাঠায় কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (STF)। কিন্তু রিপোর্ট দেখে চক্ষু চড়কগাছ এসটিএফ আধিকারিকদের। অভিযোগ, রাতারাতি ভুয়ো ডাক্তারি সার্টিফিকেট দিয়ে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করেছে কলকাতা থেকে ওড়িশা করিডরের জাল নোট পাচারচক্রের এক পান্ডা। লালবাজারের (Lalbazar) পক্ষ থেকে এই বিষয়টি ওড়িশা পুলিশকে জানিয়ে তদন্তের অনুরোধ করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, ওড়িশার বালেশ্বর থেকে ধৃত ওই জাল নোট ‘পাচারকারী’র নাম মহম্মদ ফারুক। গত ফেব্রুয়ারিতে সেনা গোয়েন্দাদের কাছ থেকে খবর পেয়ে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ জালনোট (Fake Note) পাচারের একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করে। সেই সূত্র ধরে গোয়েন্দারা বালেশ্বর থেকে মহম্মদ ফারুককে গ্রেপ্তার করেন। গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল, মালদহের বৈষ্ণবনগর হয়ে প্রথমে কলকাতা ও এরপর বালেশ্বর থেকে ওড়িশার বিভিন্ন জায়গায় জালনোট ছড়ানোর জন্য করিডর তৈরি হয়েছে। এই করিডর ধরেই জাল নোট সংগ্রহ করে ছড়ানোর ছক কষে ফারুক।
পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, গ্রেপ্তার হওয়ার পর ফারুকের পক্ষ থেকে আবেদন জানানো হয় যে, তার স্ত্রী অসুস্থ। রীতিমতো মৃত্যুশয্যায়। তাই গৃহবধূ চান যে, তাঁর স্বামী তাঁর কাছে থাকুন। এই মর্মে জামিনেরও আবেদন করা হয় ওই জালনোট পাচারের অভিযুক্তর তরফে। প্রমাণ হিসাবে দেওয়া হয় বালেশ্বরের এক চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন, সার্টিফিকেটের মতো কিছু নথি। সেগুলি দেখে প্রাথমিকভাবে গোয়েন্দাদের সন্দেহ হয়। তাঁরা ওই নথি ওড়িশার বালেশ্বরে ওই চিকিৎসকের কাছেই পাঠিয়ে ওই মহিলার স্বাস্থ্য সংক্রান্ত কিছু তথ্য জানতে চান। কিন্তু ওই চিকিৎসকের তরফ থেকেই জানানো হয় যে, আদৌ ওই প্রেসক্রিপশন বা নথি তাঁরই নয়। তাঁর নামের নথি জাল করা হয়েছে বলে পালটা অভিযোগ তোলেন ওই চিকিৎসকই। গোয়েন্দাদের দাবি, জালনোট চক্রই ফারুকের জামিনের জন্য এই ভুয়ো নথি তৈরি করে। সেই কারণেই কলকাতা পুলিশের এসটিএফের পক্ষ থেকে ওড়িশা পুলিশকে বলা হয়েছে, এই ভুয়া নথি সংক্রান্ত বিষয়ে তদন্ত করতে। ওড়িশা পুলিশ এই ব্যাপারে কোনও মামলা দায়ের করলে তার মূল অভিযুক্ত হবে এই মহম্মদ ফারুকই।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফোর্ট উইলিয়ামের সেনা গোয়েন্দাদের সঙ্গে যৌথভাবে পূর্ব কলকাতার প্রগতি ময়দান এলাকায় তল্লাশি চালান কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সের গোয়েন্দারা। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসতের দক্ষিণ কাজিপাড়ার মহসিন খান ওরফে বাবু ও নিমতার উত্তর দুর্গানগরের তনয় দাসকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫ লক্ষ ৬৪ হাজার ৫০০ টাকার জাল নোট উদ্ধার হয়। ওই দু’জনকে জেরা করেই ওড়িশা ও চেন্নাইয়ের জালনোট করিডরের সন্ধান পান গোয়েন্দারা। প্রথমে চেন্নাইয়ের এক জালনোট পাচারকারী গ্রেপ্তার হয়। এর পর গ্রেপ্তার হয় ওড়িশার ফারুক। তাদের জেরা করে অন্য করিডরগুলিরও সন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.