অর্ণব আইচ: জোর করে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। প্রতিবাদ জানাতেই সৎ বাবার অত্যাচারের শিকার হতে হল তাদের। যার জেরে ১৩ বছরের বোনকে নিয়ে সৎ বাবার কাছ থেকে পালিয়ে ঠাকুরমার কাছে চলে গিয়েছিল ১৫ বছরের দিদি। কিন্তু তাতেও রক্ষে হল না। পেতে হল ‘শাস্তি’। এমনকী ফের তারা যাতে পালাতে না পারে, তার জন্য দুই ‘সৎ মেয়ে’র হাত দড়ি দিয়ে বেঁধে বাইকে করে নিয়ে গেল সৎ বাবা মহম্মদ শাইতাব।
ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে শনিবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) বারুইপুরের মল্লিকপুর এলাকার বাসিন্দা শাইতাবকে গ্রেপ্তার করেন পূর্ব কলকাতার তিলজলা থানার পুলিশ আধিকারিকরা। রবিবার আলিপুর আদালতে তোলা হলে তাকে একদিনের জন্য জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। সোমবার তাকে ফের পকসো (POCSO) আদালতে তোলা হবে। তার বিরুদ্ধে নাবালিকাদের উপর যৌন নির্যাতনের অভিযোগে পকসো এবং মারধর, জোর করে আটকে রাখার অভিযোগও উঠেছে। মামলা হয়েছে জুভেনাইল জাস্টিস আইনেও। বেআইনি ভাবে বিয়ে দেওয়ার নামে তাদের পাচার করার চেষ্টা হচ্ছিল কি না, পুলিশ তাও খতিয়ে দেখছে।
শনিবার সকালে ইএম বাইপাসের (EM Bypass) কাছে বাইকে করে হাতে দড়ি বাঁধা অবস্থায় দুই কিশোরী বোনকে নিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাফিক পুলিশের হাতে ধরা পড়ে মহম্মদ শাইতাব। সে নিজেকে মেয়ে দু’টির সৎ বাবা বলে পরিচয় দেয়। যদিও মেয়ে দু’টি তাকে আত্মীয় বলে স্বীকারই করেনি। ‘স্ত্রী’ তথা দুই কিশোরীর মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতেই শাইতাবকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানতে পেরেছে যে, বাবার মৃত্যুর পর থেকে তারা ট্যাংরা এলাকার পিলখানা বসতিতে ঠাকুরমার সঙ্গেই থাকত। স্বামীর মৃত্যুর পর শাইতাবকে ‘বিয়ে’ করেন দুই কিশোরীর মা। এর পর থেকে মহিলা বারুইপুরের মল্লিকপুরে গিয়ে শাইতাবের সঙ্গেই থাকতে শুরু করেন। তখনই ১৫ ও ১৩ বছর বয়সের দুই নাবালিকা মেয়েকে অনেকটা জোর করেই নিজের কাছে নিয়ে আসেন মহিলা।
এর মধ্যেই শাইতাব ১৫ বছর বয়সের নাবালিকাকে বেআইনিভাবে বিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। তাড়াতাড়ি পাত্রও জোগাড় করে ফেলে। বিয়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু নাবালিকা বিয়ের প্রতিবাদ করে ওঠে। এর পর থেকেই দুই বোনের উপর শুরু হয় নির্যাতন। এমনকী, তাদের উপর যৌন নির্যাতন চালানো হত বলেও অভিযোগ। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতেই কিছুদিন আগে সৎ বাবার বাড়ি থেকে পালায় দুই বোন। তারা ট্রেনে করে মল্লিকপুর থেকে শিয়ালদহে যায়। সেখান থেকে ঠিকানা জিজ্ঞাসা করে করে ট্যাংরায় ঠাকুরমার কাছে আশ্রয় নেয়। খবর পেয়ে শাইতাব তাদের ফিরিয়ে আনার জন্য ট্যাংরায় আসে। তার সঙ্গে দুই বোন যেতে না চাইলে তাদের জোর করে বাইকে তোলা হয়। পালানোর ‘শাস্তিস্বরূপ’ বেঁধে ফেলা হয় দু’জনের হাত। ওই অবস্থায় দু’জনকে মল্লিকপুরে নিয়ে যেতে গিয়েই ধরা পড়ে সে। অনেক সময়ই দক্ষিণ ২৪ পরগনা থেকে বিয়ের নাম করে নাবালিকা পাচারের ঘটনা ঘটেছে। এই ক্ষেত্রেও প্রথমে ১৫ বছরের নাবালিকা ও তার পর তার বোনকে বিয়ে দিয়ে পাচারের ছক কষা হয়েছিল কি না, তা জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.