কৃষ্ণকুমার দাস: মাসিক রোজগার যোজনায় (এমআইএস) পোস্ট অফিসে জমা টাকার সুদ ফেরত পেতে হয়রানি হওয়া প্রবীণ নাগরিকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে রাজ্য সরকার৷ একই সঙ্গে বিমা এজেন্টদের গাফিলতিতে ‘প্রিমিয়াম’ দিতে গিয়ে নাস্তানাবুদ হওয়া গ্রাহকদের সংকট নিরসনেও এগিয়ে এসেছে রাজ্য৷ পোস্ট অফিস ও বিমা সংস্থাগুলির একাংশের গাফিলতি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ পেয়ে সরকারের তরফে রীতিমতো কড়া পদক্ষেপ নিচ্ছেন রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পান্ডে৷
চাকরিজীবীদের অধিকাংশই অবসরের পর পাওয়া এককালীন টাকা পোস্ট অফিসে রেখে মাসিক রোজগার যোজনার (এমআইএস) মাধ্যমে সংসার চালান৷ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের চেয়েও পোস্ট অফিসে সুদের হার একটু বেশি এবং গ্রামে ডাক ও তার বিভাগ থাকায় তা প্রবীণ নাগরিকদের কাছে খুবই আকর্ষণীয়৷ এছাড়াও কিষান বিকাশ পত্র, পোস্টাল সিনিয়র সিটিজেন স্কিম ও ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট এবং রেকারিং ডিপোজিট স্কিমেও টাকা রাখেন লক্ষ লক্ষ গ্রাহক৷ কিন্তু ইদানীং এমআইএস স্কিমে টাকা তোলার জন্য দিনের পর দিন চরম হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বয়স্কদের৷
লিংক ফেইলইওর ও সার্ভার ডাউন শব্দ দুটি, সপ্তাহে কমপক্ষে তিন-চারদিন শোনাচ্ছেন রাজ্যের বিভিন্ন পোস্ট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মীরা৷ এছাড়াও জল বা আগুনে কমপিউটার খারাপ হওয়ার অজুহাতও মাঝে মধ্যে শুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের৷ অসুস্থ ও অশক্ত শরীর নিয়ে পোস্ট অফিসে পৌঁছেও তাই মাসের প্রথমে গিয়ে এমআইএস-এর টাকা তুলতে পারছেন না বহু প্রবীণ গ্রাহক৷
বিশেষ করে যাঁরা অবসরের পর এমআইএস-এর টাকায় সংসার চালান তাঁদের ভোগান্তি অবর্ণনীয় অবস্থায় পৌঁছেছে৷ বিষয়টি নিয়ে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরে বহু অভিযোগ আসায় মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে প্রবীণদের সংকট নিরসনে এবার সরাসরি রাজ্যের পোস্ট মাস্টার জেনারেলকে দফতরে ডেকে পাঠিয়েছেন৷ আগামী ১৫ জুন, বুধবার ক্রেতাসুরক্ষা দফতরে পোস্টমাস্টার জেনারেল ছাড়াও এলআইসি’র শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠক বসছেন ক্রেতাসুরক্ষা মন্ত্রী৷ ডাক বিভাগের হয়রানির অজস্র উদাহরণ তুলে ধরে ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী জানান, “যে পোস্ট অফিস ছিল অবসর নেওয়া মানুষের কাছে ভরসার ঠিকানা, সেটাই এখন চরম আতঙ্কের৷ দিনের পর দিন শেষ আর্থিক সম্বলটুকু ঘিরে অনিশ্চয়তার অন্ধকারে হাতড়ে বেড়াচ্ছেন প্রবীণরা৷ নানা অজুহাতে প্রায়দিনই ফিরিয়ে দিচ্ছে পোস্ট অফিস৷”
এমআইএস ছাড়াও আবার সরকারি কর্মীরা যে পোস্টাল লাইফ ইনসিওরেন্স (পিএলআই) করেছেন তার টাকা জমা দেওয়া নিয়েও ভোগান্তি শুরু হয়েছে৷ যেমন প্রায় সাত-আট মাস দমদমের পোস্ট অফিস পিএলআই-এর টাকা জমা নিচ্ছে না৷ বলছে, কোর-ব্যাঙ্কিং-এর কাজ চলছে৷ টাকা জমা দিতে ফুলবাগান পোস্ট অফিসে পাঠিয়ে দিচ্ছেন দমদমের আধিকারিকরা৷ কিন্তু ফুলবাগানের পোস্ট অফিসের নথি নাকি পুড়ে গিয়েছে বলে কর্মীরা পিএলআই জমা দিতে গ্রাহকদের কাঁকুড়গাছি পাঠিয়ে দিচ্ছেন৷ কিষান বিকাশ বা এনএসসি ভাঙানোর ক্ষেত্রেও প্রচুর জটিলতা এবং হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে বলে অভিযোগ৷
বিমা ক্ষেত্রেও এজেন্টদের গাফিলতিকে কার্যত এক ধরনের প্রতারণা বলে উল্লেখ করেছেন ক্রেতা সুরক্ষামন্ত্রী৷ বলছেন,“পরিচিত লোকেদের ধরে এজেন্টরা পলিসি করাচ্ছেন৷ কিন্তু প্রথম বছরের পর তাঁদের আর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না৷ যদিও প্রথম বছর পলিসি করানো মাত্রই ৩০ শতাংশ কমিশন ওই এজেন্টের অ্যাকাউন্টে চলে যাচ্ছে৷ পরের বছর থেকে এজেণ্টদের একাংশকে আর দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না৷ যদিও গ্রাহক নিজের তাগিদে পলিসি টিকিয়ে রাখার লক্ষ্যে ভোগান্তি উপেক্ষা করে টাকা জমা দিচ্ছেন৷ যেই টাকা জমা পড়ছে নিয়ম মেনে এজেণ্টের কাছে কমিশন পৌঁছে যাচ্ছে৷ কোনও পরিষেবা না দিয়েও এজেন্ট ওই কমিশনের টাকা পাচ্ছেন৷ উল্টোদিকে ভোগান্তি হচ্ছে বিমার গ্রাহকদের৷ কিন্তু কেন এমন হবে? পরিষেবার জন্য তো এজেন্ট বিমা কোম্পানির নিয়মে টাকা পাচ্ছেন৷ এটাও বড় অন্যায়৷”
বস্তুত এই কারণে পোস্টালের পাশাপাশি বিমার আধিকারিককেও ডেকেছেন মন্ত্রী৷ দু’টি ক্ষেত্রেই পরিষেবা নিয়ে অজস্র অভিযোগ সমাধান করা নিয়েই দ্বিতীয় দফতায় দফতরের মন্ত্রী হয়ে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন সাধনবাবু৷ তবে মুখ্যমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে জেলায় জেলায় আরও বেশি ক্রেতাসুরক্ষা আদালত চালু করতে চান তিনি৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.