স্টাফ রিপোর্টার: শব্দবাজির উপর পুরনো নিষেধাজ্ঞাই বহাল থাকছে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন পরিবেশমন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়৷ গত কয়েকদিন ধরে চলতে থাকা ‘চকোলেট বোমা ও দোদোমা পাশ’-হওয়া নিয়ে যে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ তথা রাজ্য সরকার৷ কোনওভাবেই ৯০ ডেসিবেলের বেশি শব্দবাজি ছাড় পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই বলেও বৃহস্পতিবার পরিবেশ ভবনে জানিয়ে দেন শোভনবাবু৷
বাজির উপর নিষেধাজ্ঞা জারির প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন যে সব বাজি নিষিদ্ধ ছিল তার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার কোনও অবকাশ, সিদ্ধান্ত বা নির্দেশ সরকারের কাছে নেই৷ ফলে কোনও নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়াও হচ্ছে না৷ এই বিভ্রান্তির সত্যতা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তোলেন৷
তিনি আরও বলেন, যাঁরা বাজি বিক্রেতা তাঁরা কোনও অসুবিধা বা আইনি জটিলতার মধ্যে পড়ুন তা আমরা চাই না৷ তেমনই যাঁরা ক্রেতারা আছেন, তাঁরাও যাতে এই বিভ্রান্তির শিকার না হন সেটাও দেখতে হবে৷ এবার শুধু বাজি বাজেয়াপ্ত করাই নয় আইনানুগ ব্যবস্থাও নেওয়া হবে শব্দবাজি বিক্রেতা ও ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের তরফে৷
প্রসঙ্গত, এই বিভ্রান্তির সূত্রপাত গত মঙ্গলবার৷ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ, পুলিশের উপস্থিতিতে একাধিক আতসবাজি পরীক্ষা হয় তারাতলা নেচার পার্কে৷ সেই পরীক্ষায় অন্য বাজির সঙ্গে অংশ নিয়েছিল চকোলেট বোমা ও দোদোমা৷ চকোলেট বোমা বা দোদোমা যে বাজিগুলি ফাটানো হয় সেগুলির আওয়াজ ছিল প্রায় ৯০ ডেসিবেলের কাছাকাছি৷ যদিও এর পরই প্রচার শুরু হয়ে যায় দূর্ষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ চকোলেট বোমা বা দোদোমাকে পাস মার্কস দিয়ে দিয়েছে৷
কিন্তু মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় এদিন সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে দেন৷ বাজির এই কুটির শিল্পের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের কাছেও মেয়রের স্পষ্ট বার্তা, শব্দবাজি তৈরি করে বা বিক্রি করে অহেতুক বিপদ ডেকে আনবেন না৷ যে বাজি নিষিদ্ধ ছিল, সে বাজি নিষিদ্ধই থাকবে৷
দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ সূত্রে খবর, এই বিভ্রান্তির জেরে অনেকে নতুন করে শব্দবাজি বানানোর কাজেও হাত লাগিয়েছিলেন৷ কোনওভাবে যাতে সেই বাজি বাজারে না আসে সেদিকে নজর রাখা হচ্ছে৷
অন্যদিকে এখনও পর্যন্ত যে সব ছোট, বড় বাজি নির্মাতা বা কারখানাগুলি লাইসেন্স ছাড়াই বাজি তৈরি করছেন তাঁরা যদি লাইসেন্স প্রথায় অন্তর্ভুক্ত হতে চান তাহলে তাঁদের সহযোগিতা করা হবে বলেও জানিয়েছেন শোভনবাবু৷ লাইসেন্স করাতে আগ্রহীদের সহযোগিতা করতে রাজি সবাই৷ এতে সরকারের কাছেও একটি তালিকা থাকবে৷ তারাও নিশ্চিন্তে বাজি তৈরি করতে পারেন৷ দ্রূততার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করে লাইসেন্সের ছাড়পত্র দেওয়া হবে৷
কলকাতা পুলিশের তরফে বাজি নির্মার্তাদের সঙ্গে এদিনই কলকাতা পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে বৈঠক হয়৷ সেই বৈঠকে স্পষ্ট করে নিষিদ্ধ শব্দবাজির তৈরি না করার জন্য বলা হয়েছে৷ এদিন ডি সি (রিজার্ভ ফোর্স) অশেষ বিশ্বাস জানিয়েছেন, চকোলেট বোমা, দোদোমার মতো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ বাজির বিক্রি ও তার ব্যবহার হতে দেখলেই আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে৷
এদিনই লালবাজারে দোদোমা নির্মাতা গয়ারাম মণ্ডল ও চকোলেট বোমার নির্মাতা নিমাই মণ্ডলকে ডেকে পাঠানো হয়৷ এঁদের কারখানাতেই বানানো হয়েছিল সেদিনের তারাতলায় পরীক্ষায় বসা চকোলেট বোমা ও দোদোমা৷ এদিন দু’জনেই স্বীকার করে নিয়েছেন, পরীক্ষামূলকভাবে তৈরি করা দোদোমা ও চকোলেট বোমা তৈরি করা হয়েছিল৷ সেদিন পর্ষদের সামনে সেগুলিই ফাটানো হয়েছিল৷ যা পাসও করে৷ কিন্তু এগুলির কোনওটাই বিক্রির জন্য নয় বলে স্বীকার করেছেন দুই নির্মাতা৷ এই বৈঠকে পুলিশের প্রস্তাব মেনে নিয়েছেন বাজি নির্মাতারাও৷ বাজি নির্মাতারা জানিয়েছেন, তাঁরা নিষিদ্ধ বাজি বিক্রি করবেন না৷ পাশাপাশি যেন পুলিশও আটকায় নিষিদ্ধ বাজি৷ এখনও পর্যন্ত কলকাতা পুলিশের হাতেই ৯০০ কেজি নিষিদ্ধ বাজি উদ্ধার হয়েছে৷ এদিন বড়বাজার থেকেই উদ্ধার হয় ৩৫০ কেজি বোমা৷ অন্যবারের মতো এবারও ময়দান, টালাপার্ক বেহালা ব্লাইন্ড স্কুল, কালিকাপুর-সহ পাঁচ জায়গায় বাজিবাজার হবে বলে পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.