দীপঙ্কর মণ্ডল: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় আরও বেশি বিবেকানন্দ চর্চা চাইছে রাজ্য সরকার। স্কুলপাঠ্যে বিবেকানন্দর বক্তৃতা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। নবান্ন থেকে নির্দেশ এসেছে স্কুল শিক্ষা দপ্তরে। বুধবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় ঘোষণা করেছেন, স্বামী বিবেকানন্দর শিকাগো বক্তৃতার সংকলন ছাত্রছাত্রীদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে। বিবেকানন্দ, গান্ধীজি, সুভাষচন্দ্র-সহ অন্য মনীষীদের জীবনদর্শন, সমাজ দর্শন এবং অবদানও এবার স্কুলপাঠ্যের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। স্কুলশিক্ষা বিশেষজ্ঞ কমিটিকে এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, কোন ক্লাসে পড়ানো হবে বা কোন কোন মনীষীকে অন্তর্ভুূক্ত করা হবে তা আলোচনা হয়নি।
স্বামীজির চিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর উদযাপন উপলক্ষে ১১ থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর সংহতি সপ্তাহ পালন করে রাজ্য সরকার। শেষদিনে রবীন্দ্রসদনে অনুষ্ঠান শেষে পার্থবাবু বলেন, “আমরা চাই সর্বধর্ম সমন্বয়। নতুন প্রজন্মের মূল্যবোধ আরও বাড়াতে স্বামীজির শিকাগো বক্তৃতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা সেই বক্তৃতা ছাপিয়ে পড়ুয়াদের হাতে বিনামূল্যে তুলে দেব। দেশগঠন ও চরিত্র গঠনে স্বামীজীর বাণী খুব কার্যকর হবে।” প্রসঙ্গত, দেশের জাতীয় এবং আঞ্চলিক কোনও বোর্ডেই চিকাগো বক্তৃতা পড়ানো হয় না। রাজ্যের এমন সিদ্ধান্ত যে অভিনব এবং সময়োপযোগী তা নিয়ে দ্বিমত নেই শিক্ষামহলের। শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এই বিষয়ে উদ্যোগী। তিনি শিক্ষামন্ত্রীকে দ্রুত পদক্ষেপ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
চলতি বছরে স্বামীজির শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর। ১৮৯৩ সালে ১১ সেপ্টেম্বর আমেরিকার মানুষের হৃদয় জয় করেছিলেন তরুণ স্বামীজি। বক্তৃতার শুরুতে তিনি দর্শকদের উদ্দেশে, “আমেরিকাবাসী আমার ভাই ও বোনেরা” সম্বোধন করেছিলেন। প্রথম বাক্যেই তিনি সবার মন জয় করে নেন। তারপর অনুরোধের ঝড় আসতে শুরু করে। ধর্ম মহাসভায় আরও পাঁচদিন এবং আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্তে হিন্দু ধর্মের প্রকৃত অর্থ ব্যাখ্যা করেন স্বামীজি। অন্য সমস্ত ধর্মকে সম্মান জানিয়ে তিনি হিন্দু ধর্মের সহিষ্ণুতার কথা জানান বহির্বিশ্বকে। স্বামীজির শিকাগো বক্তৃতার পর আমেরিকায় হিন্দু ধর্ম আরও জনপ্রিয় হয়। নিজের ধর্মকে রক্ষা করে অন্য ধর্মকে শ্রদ্ধার বাতাবরণ তৈরি হয় বিশ্বজুড়ে। স্বামীজির সেই ঐতিহাসিক বক্তৃতা এবার স্কুলপাঠ্যে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে।
১৯৭৭ সাল পর্যন্ত স্কুলে স্বামীজির লেখা ‘প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য’ পড়ানো হত। পাঠ সংকলনে প্রবন্ধটি অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু বামেরা ক্ষমতায় আসার পর তা তুলে দেয়। ২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যপকভাবে স্বামীজির চর্চা শুরু করেন। ২০১৩ সাল থেকে এক বছর ধরে বিবেকানন্দর জন্মের সার্ধ শতবর্ষ রাজ্যজুড়ে মহা সমারোহে পালিত হয়। চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিকাগো বক্তৃতার ১২৫ বছর উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নবান্ন। সেই উৎসব উদযাপনের বৈঠকে স্কুল সিলেবাসে স্বামীজিকে ফের অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে আলোচনা হয়। মুখ্যমন্ত্রীর কাছ থেকে ধাপে ধাপে স্কুলশিক্ষা দপ্তরে সেই বার্তা পৌঁছেছে। এদিন রবীন্দ্রসদনে সংহতি সপ্তাহের শেষদিনে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, তথ্য সচিব বিবেক কুমার, স্কুল শিক্ষা সচিব মণীশ জৈন প্রমুখ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.