অভিরূপ দাস: সামান্য কথাতেই চড় থাপ্পড়। এমনকি স্ত্রীর মাথা সজোড়ে স্বামী ঠুকে দিচ্ছেন দেওয়ালে। কথার কথা নয় দিনের আলোর মতো সত্যি। রাজ্য মহিলা কমিশনের (State Women Commission) উপলব্ধি, যে ধরণের অভিযোগ বাড়ছে তাতে স্পষ্ট দম্পতির পারস্পরিক সম্পর্কের সহন ক্ষমতা কমছে। রাজ্য মহিলা কমিশনে সম্প্রতি যে ধরণের অভিযোগ আসছে তা গত পাঁচ বছরের থেকে অনেকটাই আলাদা। ক্রমশ যেন বর্বর হয়ে যাচ্ছে চারপাশের দুনিয়া। মঙ্গলবার নেতাজিনগর কলেজে (Netajinagar Collage) ‘গার্হস্থ্য হিংসার ভয়াবহতা এবং তা রোধ করার গুরুত্ব’ শীর্ষক এক আলোচনাসভায় উপস্থিত ছিলেন রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় (Leena Gangopadhyay)। তিনি জানিয়েছেন, সম্প্রতি মায়ের হয়ে দুই মেয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন রাজ্য মহিলা কমিশনে। ঘটনাটা কী?
সত্তরোর্ধ্ব মায়ের মাথা দেওয়ালে ঠুকে দিয়েছেন বাবা। বাড়ি থেকে বেরোতে সামান্য দেরি হওয়াতেই এমন কাণ্ড। সে অভিযোগের মিমাংসা করতে নেমে শিউড়ে উঠেছে কমিশন। রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই মহিলার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি বউভাতের পরের দিন থেকেই উনি নানানভাবে হেনস্তা হচ্ছেন। আক্রান্ত প্রৌঢ়া স্বামীর সঙ্গে আর কোনওভাবেই থাকতে চান না। বিষয়টি এতদূর আসার পর গুণধর স্বামীর বক্তব্য, আপনারা সংসার ভেঙে দিচ্ছেন। এই বয়সে বউ চলে গেলে আমায় কে রান্না করে দেবে? মহিলারা শুধুমাত্র রান্না করবে আর ঘরের কাজ করবে। পান থেকে চুন খসলেই মারধোর। এই মানসিকতাকেই বদলাতে চায় রাজ্য মহিলা কমিশন।
এদিন নেতাজিনগর কলেজের সাধারণ ছাত্রীদের প্রতি রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সনের আবেদন, ভয় পেও না। বাড়িতে কোনওরকম হিংসার শিকার হলে এগিয়ে এসে বলো। স্রেফ গায়ে হাত তোলাই নয়। পছন্দের বিষয় যদি বাড়ি থেকে পড়তে না দেয় তাহলেও অভিযোগ জানানো যায় কমিশনে। রাজ্যের প্রতিটি কলেজে সেমিনার করতে চলেছে মহিলা কমিশন।
কমিশন সদস্য মহুয়া পাঁজার বক্তব্য, আজ যাঁরা ছাত্রী কাল তাঁরাও সংসার জীবনে প্রবেশ করবেন। তাই সচেতন হতে হবে আগেভাগে। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে সবসময় রাজ্য মহিলা কমিশনের অফিসে আসা সম্ভব হয় না। সেক্ষেত্রে স্থানীয় থানায় গিয়ে কিংবা কোনও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারফতও অভিযোগ জানানো যায় কমিশনে। কিন্তু থানা থেকে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না সবসময়।
লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথায়, অনেক সময় থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে অপমানিত হচ্ছেন মেয়েরা। এটা ঠিক নয়। কোনও পুলিশ যদি সাহায্য না করেন সেক্ষেত্রে তারও শাস্তি হতে পারে। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য সুজাতা পাকরাশি লাহিড়ী, ডা. দীপান্বিতা হাজারি ও মহুয়া পাঁজা। ছিলেন কলেজের অধ্যক্ষ ড. অমৃতা দত্ত।
অধ্যক্ষের বক্তব্য, শুধু মহিলারা নয়, পুরুষরাও অনেকক্ষেত্রে আক্রান্ত হন। সেদিক চিন্তা করেই কলেজে জেন্ডার ইক্যুয়ালিটি সেল আর উম্যান রিড্রেসাল সেল খোলা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.