রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: পুলিশের অনুমতি ছাড়াই পাটুলি থেকে সিএএ’র সমর্থনে মিছিল করল বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে এই মিছিলকে পাটুলি ফায়ার ব্রিগেডের সামনেই আটকে দিল পুলিশ। পুলিশি বাধায় কোনও অশান্তির ঘটনা না ঘটলেও এদিন বিজেপির মিছিলের সামনে এসে সিএএ’র বিরোধিতা করে এক তরুণী প্রতিবাদ দেখাতে থাকে। তার হাতে থাকা সাদা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘নো এনআরসি, নো সিএএ’ এবং দিলীপ ঘোষ গো ব্যাক। বিজেপির রাজ্য সভাপতির ভাষণের আগেই এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অস্বস্তিতে পড়েন বিজেপি নেতৃত্ব।
বিজেপি কর্মীরা ছুটে গিয়ে প্রতিবাদী ওই তরুণীর হাতে থাকা পোস্টার কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে দেয়। পুলিশ এসে সরিয়ে নিয়ে যায় তরুণীকে। সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ওই তরুণীর নাম সুদেষ্ণা দত্তগুপ্ত বলে জানা গিয়েছে। এই ঘটনায় ওই প্রতিবাদী তরুণীর উদ্দেশে দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “ ভাগ্য ভাল শুধু পোস্টার কেড়ে ছেড়ে দিয়েছে। আর তো কিছু করেনি। ওর চোদ্দ পুরুষের ভাগ্য ভাল। খবর হতে আসে না শহিদ হতে।”
বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই ধরনের মন্তব্যকে কুরুচিকর বলেছে তৃণমূল ও বামেরা। রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যর কথায়, দিলীপ ঘোষ তো কুকথায় লাগামহীন। মেয়েটিকে অশালীন ভাষায় কথা বলা হল। এই ধরনের সংস্কৃতির আমদানি করেছেন দিলীপবাবু। বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, মারব, গুলি করব এসবই দিলীপবাবুর ভাষা। এসব কথা কুরুচিকর, অশালীন। খুনের ইঙ্গিত। এদিকে, শুক্রবার পাটুলিতে সিএএ’র বিরোধিতায় তৃণমূল পালটা মিছিলের ডাক দিয়েছে। বিকেলে পাটুলি থেকে বাঘাযতীন পর্যন্ত হবে এই মিছিল।
বৃহস্পতিবার বিকেলে পাটুলিতে সিএএ’র সমর্থনে অভিনন্দন যাত্রার আগে সকালে বারাকপুরে মঙ্গল পাণ্ডে পার্কে চায়ে পে চর্চায় উপস্থিত হয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। সেখানে কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে তাঁর মন্তব্য ঘিরেও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। সেখানে দলীয় কর্মীদের উদ্দেশে দিলীপবাবু বলেছেন, “ ঘরে বসে রাজনীতি হয় না। এমন রাজনীতি করুন যাতে জেলে যেতে হয়। যে জেলে যাবে না সে নেতা হবে না। ঠান্ডায় ঠান্ডায় রাজনীতি হয় না। ওরা (পুলিশ) যদি না ধরে জোর করে ধরা দিন। এমন কিছু করুন যাতে ধরতে বাধ্য হয়।” দলের কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই বার্তা উস্কানিমূলক বলেই মনে করছে শাসকদল। এসব কথা বলে তিনি উত্তেজনা ছড়াতে চাইছেন বলে অভিযোগ তৃণমূলের। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বক্তব্য, “দিলীপ ঘোষ পাগল। পাগলা গারদ থেকে ছাড়া পেয়ে উলটোপালটা বকছেন। বিজেপি বাংলাকে বিপথে পরিচালিত করছে। বাংলায় অসমের পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছে। আমরা তা হতে দেব না।”
এদিন বারাকপুরে কর্মীদের উদ্দেশে দিলীপ ঘোষের আরও বার্তা, ২ কোটি ৩০ লক্ষ মানুষ বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। আমরা লড়েছি, মার খেয়েছি বলেই। কারও যদি মনে হয় গন্ডগোল হচ্ছে। ভাল লাগছে না। তাহলে বাড়িতে বসে থাকুন। ২০২১ সালে আমাদের সরকার হবে তারপর আসবেন। বারাকপুরের কর্মসূচি সেরে বিকেলে দিলীপ ঘোষ চলে আসেন পাটুলিতে। পাটুলি থেকে বাঘাযতীন পর্যন্ত মিছিল হওয়ার কথা ছিল। পুলিশ মিছিলের অনুমতি দেয়নি। ঘোড়ায় টানা রথে চেপে মিছিল শুরু করেন দিলীপ ঘোষ। বর্ণাঢ্য মিছিলে রণপা পড়ে কর্মীরা যেমন ছিলেন তেমনই ঢাকঢোলও বাজছিল।
পাটুলি ফায়ার ব্রিগেডের কাছে ব্যারিকেড দিয়ে মিছিল আটকায় পুলিশ। সেখানেই তখন রাস্তার ধারের ফুটপাতে হাতে সিএএ, এনআরসি বিরোধী প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন ওই ছাত্রী। মিছিল শেষে ভাষণে দিলীপ ঘোষ বলেন, সারা দেশের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও সিএএ লাগু হবে। কারও বাপের ক্ষমতা থাকলে আটকে দেখাক। রাজ্য বিধানসভায় সিএএ’র বিরোধিতায় প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী উদ্দেশ্য করে দিলীপ ঘোষ বলেন, সংবিধানের বিরোধীতা করছেন মুখ্যমন্ত্রী। এটা দেশদ্রোহিতা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.