গৌতম ব্রহ্ম: প্রায়শ্চিত্ত করল কলকাতা। তাও ৪১ বছর পর।
২০০৮ সালে আইসিএমএর দেশের প্রথম নলজাত শিশু হিসাবে কানুপ্রিয়া আগরওয়াল ওরফে দুর্গাকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। আর শুক্রবার কলকাতার বুকে প্রকাশিত হল সেই দুর্গার ছবি সম্বলিত ডাকটিকিট। এই শহরের বুকেই ১৯৭৮ সালে দুর্গার জন্ম। আর তার তিন বছর পর এক বুক অভিমান নিয়ে নিজেকে শেষ করে দিয়েছিলেন দুর্গার স্রষ্টা ডা. সুভাষ মুখোপাধ্যায়। নিজের গবেষণালব্ধ ফল আন্তর্জাতিক আসরে বলতে না পারার যন্ত্রণায় সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটে আত্মহত্যা করেছিলেন বাংলা তথা ভারতের ওই কৃতী চিকিৎসক। অভিযোগ, তৎকালীন সরকার সুভাষবাবুর বিদেশ যাওয়ার আবেদন মঞ্জুর করেননি। উলটে তাঁর গবেষণার ‘গোপন’ তথ্য জানতে কমিটি গড়ে মানসিক চাপ দেওয়ার ‘ঘৃণ্য’ কৌশল নিয়েছিল।
একুশ শতকের কলকাতা সেই অপমানেরই প্রায়শ্চিত্ত করল। সম্মানিত করল সুভাষবাবুর সৃষ্টি দুর্গাকে। এদিনের ডাকটিকিট প্রকাশ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পোস্ট মাস্টার জেনারেল অরুন্ধতী ঘোষ, সুভাষবাবুর অন্যতম সহযোগী সুনীত মুখোপাধ্যায় ও বন্ধু বৈদ্যনাথ চক্রবর্তী ছিলেন গৌতম খাস্তগীর, ভাস্কর পালের মতো কলকাতার একঝাঁক আইভিএফ বিশেষজ্ঞ। এদিন কানুপ্রিয়া তাঁর বক্তৃতার শুরুতেই সায়েন্টিফিক ফাদার’ সুভাষ মুখোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান। বলেন, “সময়ের থেকে এগিয়ে ডা. মুখোপাধ্যায়ের পদক্ষেপ করেছিলেন। ওই সাহসী মানুষটার জন্যই আমি আজ আপনাদের সামনে।” কানুপ্রিয়া নিজের বাবা-মাকে ধন্যবাদ জানান।
বলেন, “আমার বাবা-মা সাহস করে বিজ্ঞানের আশীর্বাদ নিয়েছিলেন। কিন্তু সমাজের মুখোমুখি হতে তাঁদের কুণ্ঠা ছিল। লোকে কী ভাববে, এই দুশ্চিন্তায় তাঁরা দীর্ঘদিন আমার জন্মবৃত্তান্ত সামনে আনেননি। এটাই আমার কাছে ট্রাজেডি।”
১৯ এপ্রিল থেকে কলকাতার সায়েন্স সিটি অডিটোরিয়ামে শুরু হয়েছে ‘ইনভিট্রো ফার্টিলাইজেশন’ প্রযুক্তি নিয়ে ‘ইসার’-এর ২৩ তম কংগ্রেস। সেখানেই এদিন দুর্গা বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন সুভাষবাবুর অন্যতম সহযোগী সুনীত মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, এখন বিশ্বের প্রায় সমস্ত আইভিএফ ক্লিনিক সুভাষবাবুর টেকনিক ব্যবহার করছে। সময়ের ওথকে এতটাই এগিয়ে ছিলেন তিনি।ডাকটিকিট প্রকাশের পর প্রদীপ জ্বালিয়ে সেমিনারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন শর্মিলা ঠাকুর। সুভাষ মুখোপাধ্যায় স্মারক বক্তৃতা দেন লন্ডনের রয়্যাল কলেজের গাইনি বিভাগের প্রেসিডেন্ট লেসলি রেগানস। তিনি বারংবার গর্ভপাত হয়ে যাওয়া নিয়ে তাঁর গবেষণালব্ধ ফল তুলে ধরেন। সামনে রাখেন সমাধানসূত্র।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.