ফাইল ছবি
গৌতম ব্রহ্ম: ঝড় শুরু হতেই ঝনঝনিয়ে ভেঙে পড়ল পিজির ট্রমা কেয়ার সেন্টারের সাততলার জানালার কাচ। আর একটু হলেই রক্তাক্ত হতেন রোগীরা। একই চিত্র রোনাল্ড রস বিল্ডিংয়ের প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে। জানালার কাচ ভেঙে ছড়িয়ে—ছিটিয়ে মেঝেতে। ওয়ার্ড ভেসে যাচ্ছে জলে। ঝড়ের জেরে এভাবেই বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের দুই বিল্ডিংয়ের রোগীরা।
আমফানের (Amphan) তাণ্ডবের জেরে ধ্বংসলীলা চললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে পরিস্থিতির মোকাবিলা করেছে। নিরাপদে সরিয়ে নিয়েছে রোগীদের। রাতভর চলেছে রোগীদের নিয়ে টানাপোড়েন। হাসপাতালের সুপার ডা. রঘুনাথ মিশ্র-সহ অনেকেই রাতে থেকেছেন হাসপাতালে। তিনি জানালেন, “প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া ছিল। কিন্তু ঝড়ের দাপট যে এত ভয়াবহ হবে তা বুঝতে পারিনি।” কিছুক্ষণের জন্য তাই বেসামাল হয়ে পড়েছিলেন রঘুনাথবাবুরা। রেসকোর্সের দিক থেকে ১৩৩ কিমি বেগে ধেয়ে আসা আমপানের ছোবল। সেই ভয়ংকর ধাক্কা সামলাতে পারেনি ট্রমা কেয়ার বিল্ডিংয়ের সাততলার জানালাগুলি। একের পর এক ভাঙতে থাকে কাচ। বৃষ্টির ঝাপটায় জলময় হয় সাততলা। দেরি করেননি ডাক্তার-নার্সরা। রঘুনাথবাবু জানিয়েছেন, “যুদ্ধকালীন তৎপরতাতেই প্রায় ১৮ জন রোগীকে ছ’তলা ও দোতলায় সরিয়ে আনা হয়। এদিন সকালেই কাচ লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। যথাস্থানে ফিরে গিয়েছেন রোগীরা। প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগেও প্রায় বারোজন রোগীকে সরাতে হয়েছিল। তাঁরাও নিজেদের ওয়ার্ডে ফিরেছেন।”
এ তো গেল ভিতরের কথা। পিজি হাসপাতালের ক্যাম্পাসে বহু পুরনো গাছ রয়েছে। যার বেশিরভাগই ঝড়ের দাপটে জখম হয়েছে, নয়তো উপড়ে গিয়েছে। পুরনো প্রশাসনিক ভবনের সামনেটা পুরো খণ্ডহরের চেহারা নিয়েছে। রঘুনাথবাবু জানিয়েছেন, “বিদ্যুৎ বা জল নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা হয়নি। কয়েকটি জায়গায় জল জমেছে, জল ঢুকেছে। পরে নেমেও গিয়েছে। কিন্তু গাছগুলির জন্যই খারাপ লাগছে।”
গাছ নষ্ট হয়েছে কলকাতার প্রায় সব সরকারি হাসপাতালেই। আরজিকর (R G Kar), কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস (NRS)। সর্বত্রই সবুজ ধ্বংসের ছবি। বহু জায়গায় কাচের জানালা ভেঙে জল ঢুকেছে। তবে বড় কোনও বিপর্যয়ের খবর মেলেনি। স্বাস্থ্যকর্তারা ভালই সামলেছেন পরিস্থিতি। তবে ঝড়ের জেরে টেলিফোন লাইন অকেজো হয়েছে অনেক জায়গাতেই। ফলে, একটি ওয়ার্ডের সঙ্গে আর একটি ওয়ার্ডের সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। মোবাইলের সাহায্যে পরিস্থিতি সামলানোর চেষ্টা করেছেন ডাক্তার-নার্স ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপাররা। পার্ক সার্কাসের ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে হাতে লিখতে হয়েছে ডিসচার্জ সার্টিফিকেট।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.