অভিরূপ দাস: কিছুই খেতে পারত না। পেটের দখল নিয়েছিল একটা প্রকাণ্ড মাংসপিণ্ড। যার চাপে গুটিয়ে গিয়েছিল খাদ্যনালি। কিডনি নেমে গিয়েছিল কুঁচকির কাছে। চিকিৎসা পরিভাষায় এ বিরল টিউমারের নাম রেট্রোপেরিটোনিয়াল টেরাটোমা। গ্রিক শব্দ ‘টেরাটন’ থেকে উদ্ভূত হয়েছে টেরাটোমা। টেরাটন কথার অর্থ রাক্ষস।
রাক্ষসই বটে। পেটের মধ্যেকার সেই রাক্ষুসে টিউমারটার জন্য কিছুই খেতে পারত না একরত্তি। কমছিল ওজন। যে বয়সে স্বাভাবিক ওজন হওয়ার কথা সাড়ে চার থেকে সাত কেজি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার (South 24 Parganas) মথুরাপুরের বাসিন্দা তিন মাসের দীপশিখা হালদারের ওজন ছিল মেরেকেটে তিন কেজির একটু বেশি। অবাক হওয়ার তখনও বাকি! এই ওজনটাও পুরোপুরি তার নিজের নয়। পেটের ভিতরের মাংসপিণ্ডটার ওজনই যে দেড়কেজির বেশি!
মৃত্যুর হাত থেকে তাকে বের করে আনলেন এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের শিশু শল্য বিভাগের চিকিৎসকরা। টানা তিন ঘণ্টার অস্ত্রোপচারে বাদ দেওয়া হয়েছে ওই টিউমারটি। জটিল এই অস্ত্রোপচারের দায়িত্বে ছিলেন এসএসকেএম হাসপাতালের শিশুশল্য বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. সুজয় পাল। এছাড়াও চিকিৎসক টিমে ছিলেন ডা. অনীক চৌধুরি, ডা. সাবির আহমেদ। অ্যানাস্থেশিয়ার দায়িত্বে ছিলেন ডা. সঙ্গীতা মণ্ডল। বের করার পর দেখা যায়, টিউমারটির ওজন মোট এক কেজি ছ’শো গ্রাম।
ডা. সুজয় পাল জানিয়েছেন, টিউমারটি ছিল পেটের ভিতর রেট্রোপেরিটোনিয়াম অংশে। সাধারণত এই ধরনের মাংসপিণ্ড ওভারি বা ডিম্বাশয়ে দেখা যায়। কিন্তু রেট্রোপেরিটোনিয়াম অংশে চোখে পড়ে না সচরাচর। মাংসপিণ্ডের অদ্ভুত অবস্থানের জন্য খেতে পারত না শিশুটি। স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি থমকে গিয়েছিল। পেটও ফুলে থাকত সবসময়। এতবড় টিউমারটার জন্যে ভুগছিল শ্বাসকষ্টের সমস্যাতেও। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এই মাংসপিণ্ড আদতে জার্ম সেল থেকে তৈরি হয়। বিরল এই টিউমারে জল, হাড়, দাঁত, চুলও পাওয়া যায়। এই শিশুটির টিউমার থেকে হাড়ের কিছু অংশ পাওয়া গিয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর আপাতত সে সম্পূর্ণ সুস্থ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.