রমেন দাস: আচমকাই অন্ধকার! নিমেষের দুর্ঘটনাতে জীবন হারাতে বসেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার হাসনাবাদের বাসিন্দা। পেট ফুঁড়ে বেরিয়েছিল কাঠ! এবার সেই মৃত্যুর পথযাত্রীকেই আলো দেখালেন এসএসকেএম হাসপাতালের চিকিৎসকরা। শল্য বিভাগের প্রধান চিকিৎসক-অধ্যাপক বিতান চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা ধরে চলে ওই অস্ত্রোপচার। চিকিৎসকদের ওই দলে ছিলেন শিক্ষক-চিকিৎসক সব্যসাচী বক্সি, চিকিৎসক সুস্মিতা চাকি এবং অ্যানাস্থেশিয়া, সিটিভিএস ও অস্থি বিভাগের চিকিৎসকরা।
এই প্রসঙ্গে এসএসকেএম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডিরেক্টর ডাঃ মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায় সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-কে বলেন, ”আমরা সবাই মিলে রোগীর ভালোর জন্য সবসময় চেষ্টা করি। কখনও ভালো হয়, কখনও সফলতা আসে না। কিন্তু সকলের চেষ্টাটা নিরন্তর সৎ থাকে।”
হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রায় দেড় ইঞ্চি মোটা কাঠের টুকরোটির দৈর্ঘ্য ছিল পাঁচ ফুটের কাছাকাছি। যা রোগীর পেট ফুঁড়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে যায়। এসএসকেএমের ট্রমা কেয়ারে আসার পর ওই রোগীকে বাঁচাতে কঠিন অস্ত্রোপচার করেন চিকিৎসকরা।
জানা গিয়েছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে বাড়ি ফেরার পথে বসিরহাটের মালঞ্চ সেতুর উপরে দুর্ঘটনাগ্রস্ত হন সমরজিৎ ঘোষ। প্রথমে পুলিশের সাহায্যে মিনাখাঁর হাসপাতাল, পরে তাঁকে আনা হয় এসএসকেএম হাসপাতালের ট্রমা সেন্টারে। সঙ্গে সঙ্গেই তৎপর হন চিকিৎসকরা। রোগী বাঁচাতে, সমরজিতের শরীরের বাইরে বেরিয়ে থাকা কাঠের অংশটি কাটা হয়। তারপর পেট থেকে কাঠের বাকি অংশ বের করেন চিকিৎসকরা। প্রবল রক্তক্ষরণ থেকে শুরু করে বিরাটাকার ওই কাঠের অভিঘাতে শরীরের অন্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ক্ষতি, সবদিকেই সতর্ক থাকতে হয় চিকিৎসকদের।
পেশায় পুলকার চালক সমরজিৎ ঘোষ। সেদিনও গাড়ি সারিয়ে ঘরে ফিরছিলেন তিনি। কিন্তু লরির ধাক্কায় প্রায় প্রাণ হারানো পর্যায়ের মুখোমুখি হন। এখন চিকিৎসকদের সহযোগিতায় খানিকটা বিপন্মুক্ত তিনি। এখনও হাসপাতালেই আছেন ওই রোগী। তাঁর শরীরের অবস্থা খানিকটা স্থিতিশীল বলেই জানা গিয়েছে। অনেকেই বলছেন, পরিষেবার বহু ঘাটতি, নানা অভিযোগের পাহাড়ের মধ্যেও বারবার সরকারি হাসপাতালে এমন নজির অত্যন্ত গুরুত্বের।
প্রসঙ্গত, বেশ কিছুদিন আগেও রেকর্ড গড়ে রাজ্যের অন্যতম প্রধান এই মেডিক্যাল কলেজ। পিজি হাসপাতালেই সরকারি পরিষেবায় বিনামূল্যে আইভিএফ পদ্ধতিতে জন্ম নেয় শিশু। আবার বক্ষ ক্যানসার নির্ণয়ের ক্ষেত্রেও নিরন্তর নজির গড়ছেন শল্য বিভাগের চিকিৎসকরা। এমনকী, মেদিনীপুরের স্যালাইন কাণ্ডে গুরুতর অসুস্থ প্রসূতিদেরও প্রাণ বাঁচানোর পথে অগ্রসর হয়েছে এই এসএসকেএম। সবমিলিযে ফের এমন অসাধ্য সাধন, দেশেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলেই মনে করছেন চিকিৎসকদের একটা বড় অংশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.