অভিরূপ দাস: বুকের দুধ খাওয়াতে গিয়েই বিপদ। দুধের সঙ্গে শিশুর মুখে ঢুকে গেল আলগা ব্লাউজের হুক। কিছু বুঝে ওঠার আগেই সটান একরত্তির খাদ্যনালীতে। তারপর একটানা বমি। চিলচিৎকার করে কান্না। সেই হুক বের করে তমলুকের একরত্তিকে নতুন জীবন দিল এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালের ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড নেক সার্জারি বিভাগ।
শনিবারের ঘটনা, তমলুকের বাসিন্দা এক মাসের শিশু কন্যাটিকে তার মা বুকের দুধ খাওয়াচ্ছিল। তখনই ঘটে বিপত্তি। ব্লাউজের হুকটি ঢিলে থাকায় আচমকাই তা শিশুর মুখে চলে যায়। তারপর? শিশুকন্যার মায়ের কথায়, হঠাৎই ওর বমি হতে শুরু করে। প্রথমটায় আমি কিছু বুঝতে পারিনি। খেয়াল হতে দেখি ব্লাউজের একটা হুক নেই। তখনই বুঝতে পারি ঘটনাটা।
তড়িঘড়ি শিশুটিকে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। সেখানে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের সমস্যা থাকায় নিয়ে আসা হয় এসএসকেএম-এর ইনস্টিটিউট অফ অটো রাইনো ল্যারিঙ্গোলজি অ্যান্ড হেড নেক সার্জারি বিভাগে। কিন্তু মাত্র ৩০ দিনের শিশুর খাদ্যনালী থেকে লোহার হুক বের করা বড় সহজ কাজ নয়। প্রয়োজন দক্ষ অ্যানাস্থেশিয়া টিমের। এসএসকেএম-এর সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রধান ডা. অরুনাভ সেনগুপ্তর তত্ত্বাবধানে অস্ত্রোপচার টিম তৈরি করা হয়। গলা আর পাকস্থলীর সঙ্গে যুক্ত যে টিউব, তাকেই বলে ইসোফেগাস। সে খানেই আটকে ছিল হুক-টা। টানা আধঘণ্টার চেষ্টায় নল ঢুকিয়ে সেটি বের করা হল। রবিবার দুপুরে যেন নতুন করে প্রাণ পেল একমাসের সেই শিশু। চোখে জল, মুখে হাসি। একরত্তির মা কী ভাষায় যে ধন্যবাদ দেবেন ভেবে পাচ্ছেন না। আর চিকিৎসকরা? “এটাই তো আমাদের কাজ। ও জীবন ফিরে পেয়েছে এর থেকে বেশি কি চাই!”, বললেন, ডা. অরুণাভ সেনগুপ্ত। চিকিৎসকদের ওই টিমে ছিলেন ডা. সোমা মণ্ডল, ডা. সন্দীপন নস্কর (আরএমও), ডা. কওশার আহমেদ, ডা. মৈনাক এবং ডা. তুষার। তিনজন দক্ষ অ্যানাস্থেশিস্টও ছিলেন অস্ত্রোপচার প্রক্রিয়ায়।
শিশুটি আপাতত সুস্থ। তবে একদিন পর্যবেক্ষণে রেখে ছেড়ে দেওয়া হবে। পিজি হাসপাতালের নাক-কান-গলার এই বিভাগটি বর্তমানে উৎকর্ষকেন্দ্র। এ রাজ্যের তো বটেই ভিনরাজ্যের গুরুতর অসুস্থ রোগীরাও প্রাণ ফিরে পায় এখানে। ডাঃ অরুণাভ সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, বর্তমানে এই বিভাগে তথা আউটডোরে মাসে ২৫-২৮ হাজার রোগী আসেন। শয্যাসংখ্যা ১৮০। তিনটি অপারেশন থিয়েটারে ছোট-বড় মিলিয়ে দিনে কমবেশি ১৬টি অপারেশন হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.