গৌতম ব্রহ্ম: কেউ মানসিক রোগের ছোবলে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন। কারও অসাড় হয়ে গিয়েছিল হাত-পা। কারও আবার চোখ থেকে জলের বদলে বেরোচ্ছিল রক্ত। কেউ আবার অন্যের বরকে নিজের ভেবে আদর করার মতো বিচিত্র রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কেউ পুরুষ দেখলেই খুলে ফেলতেন জামাকাপড়। এঁরা প্রত্যেকেই মানসিক রোগের শিকার। কিন্তু চিকিৎসা করিয়ে এখন সুস্থ। ‘মনের মেলা’ উপলক্ষে এঁরা প্রত্যেকেই পিজি হাসপাতালে আসছেন। মনের রোগের চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে দর্শকদের বোঝানোর চেষ্টা করবেন।
আসলে মনের রোগ এখন মহামারীর আকার নিয়েছে। ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় ৩৪ শতাংশ মানসিক অসুখে আক্রান্ত। ঘরে ঘরে অবসাদ। আট থেকে আশি হতাশায় ডুবে। এই পরিস্থতিতে বাংলার মানুষদের সচেতন করতে চারদিন ব্যাপী মানসিক রোগ নিয়ে এক অভিনব মেলার আয়োজন করল পিজির ‘ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়াট্রি’। ৯ জানুয়ারি থেকে ১১ জানুয়ারি পর্যন্ত চলবে ‘কলকাতা মেন্টাল হেলথ ফেয়ার ২০২০’। ৩৪টি স্টল থাকছে। দেশ-বিদেশের স্বনামধন্য মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা হাজির থাকছেন। ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া’ থেকে আসছেন অধ্যাপক ডা. মোহন আইজ্যাক। ‘ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানচেস্টার’ থেকে অধ্যাপক জেএস ভোমরা, নিমহংসের অধ্যাপক বি এম সুরেশ প্রমুখ। মেলার আয়োজক-সম্পাদক তথা আইওপি-র অধিকর্তা ডা. প্রদীপ সাহা জানিয়েছেন, “এই মেলা বিশ্বের সবচেয়ে বড় মনের মেলার তকমা পেতে চলেছে। বিশ্বের কোথাও টানা চারদিন ধরে মানসিক রোগ নিয়ে মেলা হয়নি।”
এই মনের মেলায় বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ, নার্সিং স্কুল এবং সাধারণ স্কুল অংশগ্রহণ করবে। এখানে মানসিক রোগে আক্রান্তদের মূল্যায়ন ও পরীক্ষা করা হবে। তারপর প্রয়োগ করা হবে ওষুধ। মেলায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা অংশ নিচ্ছে। থাকছে ‘স্টেট লিগাল এইড ফোরাম’, নেশা ছাড়ানোর ব্যাপারে কাজ করা কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। প্রদীপবাবুর পর্যবেক্ষণ, ছোট থেকে এখন মানসিক রোগ বাসা বাঁধছে। তার কারণ, যৌথ পরিবার ভেঙে যাওয়ায় এখন বাচ্চাদের কাছে রোল মডেল নেই। বাবা-মাও কোয়ালিটি টাইম দিতে পারেন না বাচ্চাকে। শৈশব কাটে পরিচারিকাদের সঙ্গে। শিশুদের কাছে রোল মডেল হয়ে ওঠেন সিনেমার নায়ক-নায়িকা। নোবেলজয়ী ‘অ্যাটাচমেন্ট থিওরি’ এই কথাই বলে। এখনকার শিশুরা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। অপরাধবোধের জায়গা থেকে বাবা-মায়েরা না চাইতে ছেলে মেয়েকে অনেক কিছু দিয়ে ফেলছেন।
প্রদীপবাবুর প্রেসক্রিপশন, দিনে অন্তত কিছুটা সময় বাচ্চাকে ‘কোয়ালিটি টাইম’ দিতে হবে। যাতে সে নিজেকে পরিবারের একটি অংশ বলে মনে করে। প্রদীপবাবুর দাবি, ‘শেয়ারিং’ এবং ‘কেয়ারিং’ নেই বলেই এখন ১৩-১৪ বছরের শিশুরাও আত্মহত্যা করছে। ১৯ থেকে ২১ বছরের মধ্যে সব থেকে বেশি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। ৯০ শতাংশ ঘটনার পিছনে কিন্তু দায়ী অবসাদ। অসবাদ নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে মননের অসুখ নিয়ে গানও তৈরি করেছে ‘আইওপি’। সাগরদিঘির চিকিৎসক ডা. অরিন্দম দত্ত গানটি লিখেছেন ও সুর করেছেন। মিউজিক করেছে ‘জোয়ার’ ব্যান্ড। মনের রোগ নিয়ে সচেতনতায় সেই গানই হয়ে উঠবে প্রধান অস্ত্র। মত বিশেষজ্ঞদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.